
দক্ষিণের অনেক ভ্যাকেসন প্যাকেজে অনেক আকর্ষণিয় ডিসকাউন্ট দেওয়ার আবেদন আসতে থাকে শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে। স্নোবার্ডরা স্নো ছেড়ে উষ্ণতায় যাওয়ার জন্য এ সময় ব্যাস্ত থাকে। প্যাকেজগুলো খুব আকর্ষনীয় হয় থাকা খাওয়া, প্লেন ভাড়াসহ। যারা এফোর্ট করতে পারে তারা শীতের কয়েক মাস কর্কট ক্রান্তীয় দ্বীপ বা দেশ গুলোতে কাটিয়ে আসে। এজন্য তাদের বলা হয় স্নো বার্ড।
বিশেষ করে ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং সাইবার মানডে উপলক্ষে এইসব প্যাকেজ গুলো বিক্রি হওয়ার এ্যাড আসতে থাকে অনেক বেশি। ষাট থেকে পাঁচাত্তর ভাগ ছাড় থাকে কখনো বা আশি ভাগ। তবে আমি আগের নিয়মিত হিসাবগুলো জানি না তাই মিলাতে পারছি না আসলেই কি ছাড় দিয়ে এত কম হয় নাকি একই দাম নিয়মিত যা থাকে। কিন্তু ছাড় শোনেই বড় ভালোলাগে বেশ তো কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
কেউ এ সব হিসাব নিকাশের ধার ধারে না। তাদের বেরিয়ে পরতে ইচ্ছা করে বেরিয়ে পরে। দ্বীপ দেশে তাদের নিজের বাড়ি আছে। সেখানে যাওয়ার জন্য নিজস্ব প্লেন আছে। তাদের হিসাব নিকাসের খাতা আলাদা।
আর যারা সারা বছর ধরে জমিয়ে ভ্যাকেসনে যায় তারা অনেক আগে থেকে হিসাবটা করে তারাই ভালো বলতে পারবে ছাট কতটুকু আসলে সব মিলিয়ে পাওয়া যায়।
কিছুদিন ধরে এই ভ্যাকেসন প্যাকেজগুলো যে কোন কাজ করতে গেলেই সামনে চলে আসছে। আগে যেমন পরিকল্পনা করতে হতো নিজেকে। ট্রাভল এ্যজেন্সিতে যেতে হতো জানতে এখন সে সব ব্যাপার নাই। ল্যাপটপ বা মোবাইল থেকেই সব জানা যায়। আর কত কত মানুষ আছে সাহায্য করার জালে ফেলার জন্য। একটা কিছু দেখার আগেই কথা বলার বাক্স খুলে যায় । আমাকে বলো আমি জানাচ্ছি তোমার দরকারি সব খবর। টিকটক, ইনস্টগ্রাম, ব্লগ, ইউটিউব, আর ফেসবুক তার সাথে বিজ্ঞাপনের ডালপালা মেলা আকর্ষণীয় আবেদন।
তেমনি কিছু ঘাটতে গিয়ে একটা বিষয় ভাবাল।
কচ্ছপ দেখার জন্য একটা দিন ধার্য্য করা হয় প্যাকেজে। যার জন্য গুনতে হবে অবশ্যই কয়েশ ডলার। সকাল থেকে গাড়ি করে নিয়ে যাবে। ব্রেকেফাস্ট খাওয়াবে। লাঞ্চ এবং পানি দিবে। কচ্ছপ পার্ক বা কুমির পার্কে ঢুকার জন্য আবার আলাদা টিকেট কিনতে হবে নিজের টাকায়। যা ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ ডলারে হয় সাধারনত। আবার বেশিও হতে পারে জায়গা অনুপাতে। পরিবারে চারজন থাকলে দুইশ ডলার নেমে যাবে। কচ্ছপ, কুমির ছাড়াও আছে ডলফিনের সাথে সাঁতার, পানির নিচে ডুবে হাঙ্গর দেখা। সাপের জঙ্গলে পা রাখা। পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেয়া। এমন আরো কত দুঃসাহসী ব্যাপার স্যাপার। অনেকেই সে সব করে তাই তো হাঁট খুলে বসে আছে ওরা। ভালোই ব্যবসা বানিজ্য হয় এই ভ্রমণ বিলাসীদের উপলক্ষ করে।
ভাবছিলাম কুমির গুলো মাটিতে শুয়ে থাকে মরার মতন। মনে হয় ঘুমায়। কুমির না হলেও কুমিরের ছোট গুইসাপ বা তারও ছোট গিরগিটি দেখতাম, আমাদের বাড়ির পুকুরপাড়ে ডাঙ্গায় শুয়ে থাকত। ছটফট করে চলা ফেরা করত। এরা যেন ঘরের পোষা প্রাণীর মতনই ছিল আমার কাছে। এদের সাথে এক সাথে বড় হয়েছি। পুকুরপাড়ে একা গেলে ওদের দেখে কখনো ভয় পাইনি।
খুলনায় খানজাহান আলীর পুকুরে গিয়ে দেখেছিলাম, দুই বিশাল আকৃতির কুমির। একটার নাম কালাপাহার একটার নাম ধলাপাহার। যখনই কোন দর্শনার্থি যেত তাদের কিনতে হতো কিছু খাবার। মাছ বা মুরগী যা হোক।
সাথে নিয়ে যাওয়া লোক চিৎকার করে ডাকত কালা পাহার......... ধলা পাহার............ আর পানিতে ঢেউ তুলে সাঁতার কেটে তারা এসে উপস্থিত হতো পুকুরের সিঁড়ির কাছে। তখন ছড়িয়ে দেয়া হতো মাছ বা মোরগ তাদের মুখে।
এটা না কি ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর বিষয়। ডাক শুনে কুমির চলে আসে। বাচ্চাছিলাম তখন অত্যশ্চর্যই মনে হতো। কিন্ত এখন মনে হয় খাবার দিলে বাঘ, সিংহও পোষ মেনে যায়।
আমি যখন পুকুরে গিয়ে শব্দ করে আমার মাছদের নাম ধরে ডাকি তারা তখন ছুটে আসে । অথবা এমনও দেখেছি আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও মাছগুলো তখন আমার সামনে এসে সাঁতার কাটে। তারমানে তারা দেখতে পায় আমাকে এবং মনে করে আমি খাবার দিব এখন। মাঝে মাঝে আমি খাবার দেই না বলি নিজে খাবার জোড়াড় করে খাও। পুকুর ভর্তি নানান খাবার তারা ঠিক বেঁচে বর্তে থাকে। হ্যাঁ আমার শাপলা গাছগুলোও খেয়ে শেষ করে দিয়েছে তারা।
পাখিরাও পোষা হয়ে যায় খাবার দিলে। বনের এমন কিছু পাখি আছে আমার, যারা সময় করে খাবার খেতে আসে আমার কাছে। বন্যরা বনে সুন্দর তাদের খাঁচায় বন্দি করি না। কিন্তু বাইরে থেকেও তারা আমার পোষ মেনে যায় শুধু খাবার দেই বলে। হাতে বসে, কাছে আসে। আবার মাঝে মধ্যে বিরক্তও করে।
দুবছর আগে সূর্যমুখির চাষ করেছিলাম বীচি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখলাম সব বীচি খেয়ে গেছে পাখি, আমার সংগ্রহ করার আগেই। যাদের আসা যাওয়ায় আমি খুব খুশি ছিলাম তারা আমার সাধ পূর্ণ করতে দিল না। এমন কি আমার চেরি ফলগুলোও সময় মতন তুলতে পারিনা তার আগেই পাখি আর কাটবেড়ালি আরাম করে খেয়ে নেয়। তাদের খাওয়ায় বাঁধা দেয় তাই চাষি। নিজের ফসল রক্ষা করার জন্য নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় কৃষককে।
আসলে খাবারই হলো মূল বিষয় ক্ষুদার রাজ্যে সব সম্ভব। ডাক শোনে চলে আসা বা কথা শোনা কোন অত্যাশ্চর্য বিষয় না।
ম্যারিনল্যাণ্ডের ডলফিন, সীল বা তিমি যে খেলা দেখায়, মুগ্ধ হয়ে দেখি। তাদের মুখেও খাওয়ার তুলে দেয় তাদের ট্রেইনার একটা খেলা দেখানোর পরেই। খাবার দিয়েই বস করা হয় যত পশু, পাখি। সার্কসের বাঘ, সিংহ ,হাতিও তেমনি ট্রিট পেয়েই খেলা দেখায়। কোন খাবার পাওয়ার পর কতটুকু লাফাতে হবে শিখে ফেলে।
এছাড়া চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখেছি অ্যালিগেটর, কুমির, কাইম্যান এবং ঘড়িয়াল, গিরগিটি । সবই কুমির নানা রকমের এরকমই ধারনা ছিল।
এই লিজার্ডসগুলোকে কুমির আর কুমিরের নানান গোত্র ভাবতাম কিন্তু তারা নাকি এক গোত্র নয়। তারা সাধারণত সরীসৃপ হিসাবে বিবেচিত হয়। রেপটাইল, লিজার্ডসের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত নয়। লিজার্ডস সাপের সাথে সম্পর্কিত। আবার রেপটাইল, লিজার্ডসের সমন্বয়কে স্কোয়ামেট সরীসৃপ হয়। টিকটিকিও এই গোত্রে সাপ। টিকটিকি নিরিহ প্রাণী কোন ক্ষতি কারে না যদিও সে স্কোয়ামেট রেপটাইল মিশ্রন প্রাণী।
এই সূত্রে দেশের বাড়িতে টিকটিকি যে ঘরের মধ্যে থাকে তাহলে আমরা সাপের সাথে বসবাস করি। আর এরা কোন ক্ষতিকর সাপ নয়। বরং ঘরের ছোট খাটো পোকা খেয়ে বেশ পরিচ্ছন্ন রাখে ঘরবাড়ি। আর মাঝে মাঝে লেজ খসিয়ে দিয়ে বেশ আনন্দ দেয় বাচ্চাদের। আর মিথ আছে মাথায় টিকটিকি পরলে রাজকপাল। তাই কখনো মাথায় টিকটিকি পরে গেলে ভয় পাওয়ার চেয়ে সৌভাগের আশায় আনন্দ হয় যার মাথায় পরেছে তার। তবে এর হাগু বড্ড দূর্গন্ধ। ছোটবেলায় খুব বিরক্ত হতাম, টেবিলে সাজানো বই পত্রের উপর টিকটিকির হাগু পেলে।
যা হোক বলছিলাম অর্থ ডলারে ব্যয় করে কুমির, কচ্ছপ দেখতে যাওয়ার কথা। অনেকে সারা জীবনে দেখেনি এমন সব প্রাণী তাদের জন্য হয়তো ঠিক আছে কিন্তু আমার তেমন আগ্রহ হয় না আর বেড়াতে গিয়ে এমন প্রাণী দেখা। ঘোরাফেরার মধ্যে সব ট্যুর এমন একটা প্রাণী দেখা সংযোগ করে রাখে। যেটা আমার কাছে অযথা সময় এবং অর্থ নষ্ট মনে হয়। অথবা হয় তো আমি এত দেখেছি এদের তাই আর আগ্রহ হয় না দেখার।
একবার চেন্নাই যা আগের নাম ছিল মাদ্রাজ সেই সময়ে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তো ট্যুর বাস একটার পর একটা দর্শনীয় স্থানে থেমে দেখাচ্ছে আমাদের মন্দির, বলিউড সিনেমার স্টুডিও, গোলডেন বীচ তখন একটা কুমির ফার্মেও নিয়ে গিয়েছিল। কুমিরের চাষ হয় সেই তখন স্বচক্ষে দেখেছিলাম। এক জায়গায় হাড়ি ভর্তি কুমিরের ডিম তো আরেক জায়গায় সদ্য ডিম থেকে বেরুনো বাচ্চা হাড়ির ভিতর থেকে পিটপিট করে দেখছে আমাদের। হাড়ির ঢাকনা সরিয়ে আমাদের দেখাচ্ছিল গাইড।
আবার আরেক জায়গায় মাঝারি আকারের অনেক কুমির গাদাগাদি করে জলে, স্থলে ভিড় করে আছে। কিলবিল করা এই সব কুমিরের পাশ দিয়ে যেতে ভয় লাগেনি। মনে হলো এরা নির্জিব গাছের ডালপালার মতন।
সেই শেষ কুমির দেখা।
কচ্ছপরা দল বেঁধে ডালের উপর বসে রোদ পোহায়।
এই দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। বাড়ির পুকুরে লাইন দিয়ে কচ্ছপ গুলো বসে থাকত কোন গাছের ডাল বা বাঁশ পেলে। আবার সাঁতার কাটতেও দেখেছি তাদের বাচ্চা কাচ্চাসহ। এখনও দেখি নিজের পুুকুরে কচ্ছপের বংশ বৃদ্ধি । তাদের মিলনের শব্দ শুনি কখনো। দেখি পুকুর পারে তাদের ডিম পেরে রাখা। আর দেখি বাচ্চাদের নিয়ে মায়ের সাঁতারকাটা।
আমি যখন খাবার ছুঁড়ে দেই পানিতে, কচ্ছপরা সর্তক ভাবে আগে বাচ্চাদের নিরাপত্তার বিষয়ে অবলোকন করে তারপর খাবার নিতে আসে।
বাচ্চারা যখন খাবার খায় মা তখন পাহারায় থাকে।
এসব দেশে কচ্ছপের গুরুত্ব অনেক। বড় বড় হাইওয়ে পার হতে গিয়ে দেখি কচ্ছপের সাইন। ওরা রাস্তায় আসতে পারে তাই তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের ক্ষতি না করে যেতে দিতে হবে। এরা জলে থাকলেও প্রায় সময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মাইগ্রেট করে হেঁটে হেঁটে।
বছর দুই আগে শীতের আগে একটা কচ্ছপকে পেলাম উল্টে পরে আছে ডাঙ্গায়। এরা উল্টে গেলে আর ঠিক হতে পারে না নিজে নিজে।
কচ্ছপটা কোথায় যাচ্ছিল কে জানে। আমি তাকে সোজা করে দিলাম। তারপর জলে গেলো না অন্য কোথাও গেলো আর জানতে পারিনি। অনেকে আবার কচ্ছপ পোষেও বাসায়। কচ্ছপের নাম থাকে, তাকে কোলে নিয়ে থাকে।
আসলে ঘোরার জন্যও যেমন ভিন্ন মানুষের নানা রকম শখে হয় ভ্রমণ চলা। কি দেখবে না দেখবে সেটাও ঠিক হয়, সেই রকম নানা ইচ্ছা, আগ্রহের উপর নির্ভর করে।
প্রসঙ্গ ক্রমে আরো একটা পর্যটন এ্যাড দেখছি এবার ওমরা বা হ্জ্জ্ব করতে নয় সৌদি আরব নাকি খুব কাছে। যত্র তত্র ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌদি আরব। স্নো বার্ডরা সৌদি আরবে গিয়ে বিকিনি পরে জলে নেমে গেলে কেমন হবে ঠিক মিলাতে পারছি না। ভ্রমণে গিয়ে মানুষ স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করে আর ইউরোপ আমেরিকার মানুষ কত রকমের যে আনন্দ করে । তার হিসাব লিখতে আরো দীর্ঘ হয়ে যাবে লেখা।
হয় তো কিছু দিনের মধ্যেই নতুন খবর জানতে পারব সৌদি ভ্রমণের, অপেক্ষায় থাকি।
উপরের ছবিটা পানির মধ্যে পাওয়া কিছু ডিমের ছবি। ঠিক জানি না কিসের ডিম। খোসা ছাড়া নরম প্লাস্টিকের মতন আভরণে ঢাকা। কচ্ছপের ডিমে তো খোসা হয়। এক ধরনের রেপটাইলের ডিমের সাথে মিলে তরে এমন রেপটাইল কখনো দেখিনি।
আবার এক ধরনের পাখির ডিমের সাথেও মিলে যে পাখি নাকি জলের মধ্যে ডিম পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




