somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

কী ওয়েস্ট চিত্রবিচিত্র

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এদিকে অনেক ফসলের ক্ষেত। কী ওয়েষ্টের উত্তর দিকটা ফ্লোরিডার খামারবাড়ি বলা যায়। একই ধরনের গাছ সারি সারি সাজানো, দেখতে যে কি ভালো লাগছে। ফ্লোরিডার জলবায়ু বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের জন্য আদর্শ। প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে কমলা, লেবু, আপেল, আখ, টমেটো, মরিচ, তুলা, তরমুজ, চিনাবাদাম, বিনস, আলু আরো অনেক কিছু।
কলা পেঁপে আনারস পেয়ারা, লিচু, আম, কাঁঠাল, অ্যাভোকাডো, লটকন, পার্সিমন, নারিকেল, তাল, সুপারি।
সবজি থেকে ফলের গাছের সারি সারি বাগান, এত সুন্দর লাগছে দেখতে। ফসল দেখতেও ভালোলাগে, মন ভরে, মানুষের খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে এত্ত এত্ত। ফ্লোরিডায় এত বেশি আখ উৎপাদন হয় জানা ছিল না আমার। ৫০০ বিলিয়ন শুধু আখ থেকে ইনকাম হয়। আখকে তাই বলে কালো সোনা।
গাছ দেখে খুব চেনা প্রকৃতি মনে হয়, চেনা গাছের সাথে আরো নতুন ধরনের ফল এবং ফুল। বাড়ির সামনে ছোট ছোট টবে গাছ বিক্রি হচ্ছে,ফল, ফুলের নার্সারি। এই গাছগুলোই আমাদের ওখানে রপ্তানি হয়। অনেক দাম দিয়ে কিনি সামারে, কিন্তু বাঁচে না। দেশ থেকেও কিছু বীজ চারা নিয়ে আসি কিন্তু বাঁচাতে পারি না। আর বাঁচলেও ফুল বা ফল ধরে না। প্রকৃতির পরিবেশ বিশাল প্রভাব রাখে গাছের উপর।
এদিকটায় বেশ কিছু লোকালয় আছে। এখন আর আগের মতন জঙ্গল বা ঘাসের ভূমি নেই।
অনেকটা পথ যাওয়ার পরে বিস্তীর্ণভূমি চিকন হয়ে যেতে থাকলো। একসময় ভূমি শেষ শুধু ব্রিজের উপর দিয়ে পার হচ্ছি, পাশাপাশি দুটো ব্রিজ একটা দিয়ে গাড়ি যায় একটা মানুষ এবং সাইকেল চলার জন্য।
গালফ অফ মেক্সিকো ফ্লোরিডা উপসাগর, আটলান্টিক মহাসাগরের পানি ভিন্ন ভিন্ন রঙ। অদ্ভুত সবুজ নীলের মিশেল রঙ যেন ময়ূর পেখম মেলে রেখেছে। এত অপূর্ব সৌন্দর্য শুধু চোখে দেখা যায় অনুভব করা যায় বর্ণনায় ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য, ছবিতেও বাস্তবের মত আসে না।
কয়েক মিনিট ধরে সেতুর উপর দিয়ে চলতে হল কারণ সেতু অনেক লম্বা তারপরে আবারও ভূমির দেখা পাওয়া গেল সাগরের উপর সেতু থেকে ভূমিতে নেমে এলাম।
১৯১২ সালে কী ওয়েস্টর সাথে রেলওয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তখন একে অষ্টম আশ্চর্য বলা হতো। ১৯৩৫ এর হ্যারিকেনে রেল সংযোগ বিধ্বস্ত হয়। এখন রেল মিউজিয়ামে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তারপর সেতু তৈরি করে এই গাড়ি চলাচলের পথ তৈরি করা হয়েছে।
চারটা নাগাদ আমরা কী ওয়েস্টে এসে পৌঁছলাম।
হোটেলে পৌঁছে নিজেদের ঘর বুঝে নিয়ে সেখানে ফ্রেশ হলাম। হোটেল থেকে জানলাম, ঘন্টায় ঘন্টায় শাটল বাস যায় মেরিন এরিয়ার রাত দশটা পর্যন্ত।
ফ্রেশ হয়ে সাটল বাসে চড়ে শহরে ঘোরার জন্য গেলাম। স্টপে খানিক অপেক্ষার পর বাস এসে সামনে দাঁড়ালো। বাসের ভীতর ঢুকে দেখলাম হিমশীতল অবস্থা। রীতিমত শীত করতে শুরু করল। এত জোড়ে এয়ারকন্ডিশন চালিয়ে রেখেছে এতো ক্যানাডার শীতকেও হার মানায়। চালক কোট পরে আছে, আমি পরে আছি হালকা সুতি জামা। ঠাণ্ডায় একদম কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে।
কয়েকটি রাস্তা ঘুরে আরো কয়েকটি হোটেলে থেমে যাত্রী উঠালো। এক সময় একজন যাত্রী সবার হয়ে চালককে বললেন, এসি কম করে চালান। আমরা তো মনে হয় ফ্রীজের ভিতর ঢুকে আছি। এখানে গরম উপভোগ করতে এসেছি।
এই সমস্যা প্রতিটি হোটেল রুমে ছিল। এয়ার কন্ডিশনের সবচেয়ে উপরের সীমায় দিয়ে ঘর ঠান্ডা করে রাখা হতো। আর আমরা প্রতিবার উল্টো করে হিট চালাতাম নয় তো বন্ধ করে শুধু ফ্যান চালাতাম।
ছোট ছোট কয়েকটি রাস্তা ঘুরে এক জায়গায় এসে আমাদেরকে নামিয়ে দিল। চালক বলল, এখান থেকেই আবার ফিরে যাওয়ার গাড়ি পাবো। দশটার সময় শেষ গাড়ি যাবে।
আমাদের হাঁটতে হবে বেড়ানোর জন্য। কয়েক ঘন্টা সময় অনেক, মেরিন এলাকা ঘুরে বেড়ানোর জন্য । তুমুল হইচই গান বাজছে, আনন্দে মানুষ ঘোরাফেরা করছে আর খাচ্ছে। যদিও বেশ অন্ধকার কিন্তু চারপাশের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে। অনেক মানুষ চারপাশে। মায়ামির পর এখানে আবার পর্যটকের ভীড় দেখলাম।
ঘুরে ঘুরে পুরো এলাকাটাই দেখলাম। একদম সাগরের তীর ঘেঁষে একপাশে জাহাজ বোট বাঁধা অন্যপাশে পানির উপর রেস্তোরাঁ, বুটিক দোকান, হোটেল। দিনের বেলায় নিশ্চয়ই আরো বেশি জমজমাট থাকে তবে রাত্রেও মন্দ না জমাটি। জলের মাঝে বোট ভাসছে। অনেক বোটের ভিতর গানের শব্দ ভাসছে। বোটের জীবন এক মজার জীবন। যারা উপভোগ করে তারা কদিন পর পরই বেরিয়ে পরে নৌকা নিয়ে ঘুরে এই বন্দর সেই বন্দর। আর আছে মাছ ধরা বোট। সেগুলো নিশ্চুপ হয়তো ক্লান্ত জেলেরা শুয়ে পরেছে। পানি টলটলে তার মধ্যে দেখলাম অনেক জেলিফিশ সাঁতার কাটছে।
হোটেলের লবিতে দেখেছিলাম জেলিফিসের বড় বড় পেইন্টিং সাজিয়ে রেখেছে, তার মানে এদিকে অনেক বেশি জেলিফিশ, সমুদ্রের নামার ব্যাপারে একটু ভয় ঢুকে গেল। জেলিফিশ গায়ে লাগুক সেটা চাই না। জেলিফিশ থেকে অনেক সময় বাজে রিয়েকশন হয় শরীরে।
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রে চাঁদের আলো আর জাহাজের আলোর মিলমিশ দেখছিলাম। এমন সময় পেছন থেকে একদল লোক বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্টের ভিতর থেকে। তাদের একদম টালমাটাল অবস্থা। অনুরোধ করল ছবি তুলে দিতে। যিনি অনুরোধ করেছেন তার সাথে আর দুজন। কিন্তু ডাকছেন আরো সবাইকে। আঠার বিশ জন মানুষ আধো অন্ধকারে দাঁড়ালেন। পিছনে যে ভিউটা নিতে চেয়েছেন পুরোই ঢেকে গেছে, তাদের শরীরে। তাদের সবার মুখ ফোনের স্ক্রীনে আসছে কিনা সেটা নিয়ে কসরত করতে হলো। কারণ অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো...কয়েকটা ছবি তুলে দেওয়া হলো খুব খুশি হয়ে আমাদের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করল।
মানুষের সাথে অজানা অচেনায় কখনো হঠাৎ যেন বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
পুরো এলাকাটা ঘুরে বেরিয়ে একটা জায়গা পছন্দ করে খেতে বসলাম। সামুদ্রিক মাছের খাবার দিয়ে রাতের খাবার শেষ হল তুমুল বাজনা চলছে। রেস্টুরেন্টের ভিতর পেছনে ক্রিসমাস লাইটিং গাছগুলাে মুড়িয়ে রেখেছে আলো। সব জায়গায় আলো আর আলো নানা রঙের আলোয় জায়গাটার চেহারায় অন্যরকম লাগছে রাতের বেলা।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা সাড়ে নটার শাটল ধরার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় এলাম কিন্তু আমাদের আসার তিন চার মিনিট আগে বাস চলে গেল। এখন দশটার শেষ বাসের জন্য থাকতে হবে অপেক্ষায়।
পাশে একটা ব্রুয়ারি সেখানে ঢুকে ঘোরাফেরা করে কিছুটা সময় কাটালাম। একটা দোকানের সামনে বিশাল চেয়ার দেয়া সেই চেয়ারে বসে থাকলাম বাসের অপেক্ষায়। অল্প সময় কিন্তু যেন শেষ হয় না। ফাঁকা রাস্তা, পার্কিং খালি, বন্ধ দোকান পাট। সব কিছু হেঁটে দৌড়ে বেড়ালাম। তারপর বাস এলো শেষ বাস এটা মিস করলে হেঁটে হেঁটে হোটেলে ফিরতে হতো। হুটহাট করে কোথা থেকে যেন অনেক যাত্রী আসলেন আমরা ভেবেছিলাম শুধু আমরাই একা। বাকি যাত্রীদের বেশ কয়েকটা হোটেল ঘুরে নামিয়ে আমাদেরকে নামিয়ে দিলো।
শাওয়ার নিয়ে রাতে শুয়ে পড়লাম সারাদিন অনেক চলা হয়েছে আজ।

কুকুরু কু কুকুরু কু.. এমন শব্দ কানে আসলে কেমন লাগে! আমেরিকার মতন একটা দেশে শুয়ে আছি ঘুম ভাঙলো ভোরবেলা, এমন কিছু ভাবার অবকাস থাকে না, মনে হল বিজন কোন গ্রামে জেগে উঠলাম।
তখনও অন্ধকার চারপাশে ভোরের আলো জাগেনি মনে হয় যেন সেহরি খাওয়ার সময়। মোরগের ডাক শুনে বেশ আনন্দ লাগলো তারপর আর একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু আবারও সেই ঘুম ভাঙলো মোরগের ডাকে যেন বলছে, জাগো জাগো উঠে দেখো ঘুমানোর জন্য এসেছ বুঝি?
এবারে উঠেই পড়লাম,ব্যালকুনিতে বেরিয়ে দেখলাম নিচে মহাআনন্দে কিছু মোরগ মুরগি আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সকালটা খুব সুন্দর, দূরের সমুদ্র দেখা যাচ্ছে । পাশে পুলেও অনেক মানুষ নেমে পড়েছে সাঁতার কাটতে ঝাঁপাঝাপি করতে। অনেকটা সময় ব্যালকুনিতে বসে সকাল উপভোগ করলাম । একদম অন্যরকম সকাল শান্ত ভালোলাগার মায়াবী উষ্ণতার।
হোটেলে ব্রেকফাস্ট আছে কিন্তু আমরা স্থানীয় ব্রেকফাস্ট করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। শহরের ডাউনডাউন একটাই রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমে শহরের মাঝ বরাবর চলে গেছে । এই রাস্তা ধরে হাঁটলেই শহরের পুরোটা বৈচিত্র ধরা পরে।
আমরা সমুদ্রের পাড়ে পৌঁছে গেলাম তার পাশে গাড়ি পার্ক করে সেখানে খানিকটা বসে থাকলাম রোদ পোহালাম। সমুদ্রের বাতাস নিলাম, লবণ জলের ছোঁয়া পেলাম এখানে সমুদ্র তীর, কংক্রিট দেয়াল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঢেউ আছড়ে পরে গায়ে পরছে সমুদ্রজল।
সকালের নাস্তার জন্য হাঁটতে থাকলাম, হাঁটছি দেখছি তারপর একটি রেস্টুরেন্ট পছন্দ করে সেখানে খেতে বসলাম। প্রচন্ড ভীড় কোন টেবিল খালি নেই। আমাদের খাওয়া তৈরি হয়ে আসা পর্যন্ত বসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়েই থাকতে হল।
তারপর একটি টেবিল খালি হলে আমরা সেখানে বসেলাম ।



জায়গাটা একটা ইন্টারসেকশন। দুইপাশ থেকে চলছে, নানা রকমের লোকজনের আসা-যাওয়া গাড়ি চলছে তার মাঝে দিয়ে মোরগ আপনমনে রাস্তায় হাঁটছে। গাড়ি চালকরা মোরগের দিকে বেশি খেয়াল করছে। মোরগরাও যেন জানে, কখন রাস্তা পার হতে হবে গাড়ির নিচে না পরে। সঙ্গী নিয়ে মনের খুশিতে এক এক মোরগ কাপোল ঝোপের আড়ালে চলে যাচ্ছে। আমরা খাচ্ছি আর আর মোরগের কীর্তিকলাপ দেখে আনন্দ পাচ্ছি। এমন সময় একটা ছোট মটর বাইকের উপরে বিশাল দেহি এক মহিলা, সোজা ভাবে রাস্তায় না গিয়ে আড়াআড়ি রাস্তা কেটে আঁকাবাঁকা করে এসে ধাম করে আমাদের রেস্টুরেন্টের পার্কিং এ থাকা একটি বড় গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়ে গেলেন ।
মটর বাইক আর তিনি একসাথে উল্টে আছেন। বেশ খানিকটা সময় টানাটানি করে উনাকে উঠানো হলো উনার সঙ্গী সাথীরা হয়তো কোন রেস্টুরেন্টে বসে পরেছিল। তারা বেশ কয়েকজন এসে ঘিরে ধরল।
আমাদেরকে যিনি খাওয়ার তৈরি করে দিচ্ছিলেন উনিও দেখলাম ওখানে চলে গেছেন। উনি আমাদের রেস্টুরেন্টের মালিক উনার গাড়িতেই ধাক্কা দিয়েছেন, বিশাল গাড়িতে যদিও কিছু হয়নি তারপরেও একটু পরে অ্যাম্বুলেন্স পুলিশ সবাই চলে আসলো। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এম্বুলেন্স চলে গেল। পুলিশ প্রয়োজনীয় বিষয়ের তথ্যাদি নিয়ে কাগজপত্র বিনিময় করে দিল। সবকিছু শেষ হলে মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলাম সে এখন কেমন ফিল করছে সে ধন্যবাদ জানালো, বলল এখন ভালো একটু ব্যথা আছে হাতে।
দুর্ঘটনা যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে, অল্পর উপর দিয়ে গেছে অন্য দেশ থেকে এসেছেন বেড়াতে তারও।
ব্রেকফাস্ট শেষে আমরা কী ওয়েস্টের আইকন মোস্ট সউর্দান পয়েন্ট এর কাছে গেলাম। বিশাল লাইন ছবি তোলার জন্য তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকলে আধঘন্টা চলে যাবে। আমি পাশ থেকে ঘুরে ছবিগুলো তুলে নিলাম অন্যদের ডিস্টার্ব না করে। পাশেই যে ভাস্কর্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আগে ছিল সেদিকে কারো খেয়াল নাই। তাকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। মোস্ট সাউর্দান লেখা আইকনের সাথে সবাই ছবি তুলছেন।
এক হাত উঁচু করে অন্য হাতে শঙ্খ ধরে বাজাচ্ছেন। বাস্তব থেকে, বয় নামের এই ভাস্কর্যটি তৈরি হয়েছে। যারাই কী ওয়েস্টে আসত তাদের কে সাদরে ওয়েলকাম জানাতেন বিসপ আলবার্ট কী,শঙ্খ বাজিয়ে, এক হাত উত্তলন করে অভিবাদন জানাচ্ছেন। তিনি এবং তার আগে তার বাবা দক্ষিণের সবচেয়ে শেষ ভূমি পরিদর্শনকারী সবাইকে স্বাগত জানানোর জন্য এই কাজটি করতেন।
১৯৬৯ সালের আগে দ্বীপের আফ্রো-বাহামিয়ান জেলেরা, তাদের নৌকা নোঙর করত, তাদের মাছ বিক্রি করত এবং সৈকতের একটি ছোট অংশে বসবাস করত। যখন তারা বানিজ্যর জন্য আসত তাদের সাদর অর্ভ্যথনা করা হতো শঙ্খ বাজিয়ে। এই ধারায় পরে হয় তো এটা আনুষ্ঠানিকতার পর্যায়ে চলে যায়।
শঙ্খ বাজানোকে জনপ্রিয় করেছেন পঞ্চাশ বছর ধরে উত্তারিধাকারী বাবা এবং ছেলে। শঙ্খ বাজানোর একটা অনুষ্ঠানও হয় বছরে। সেখানে বিসপ আলবার্ট কী, জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন শঙ্খ বাজানোর। আমি এই ভাস্কর্যটি খালী পেয়ে, ভদ্রলোক বিসপ আলবার্ট কী এর সাথে ছবি তুলে নিলাম।



রাস্তার পাশে ডাব বিক্রি হচ্ছে, আখ বিক্রি হচ্ছে, নারিকেল পাতার হ্যাট বিক্রি হচ্ছে আরো যে কত কিছু হাতে বানানো জিনিসপত্র, ছবি আঁকা, গহনা, পোশাক। তবে এবার আমি কেনাকাটা না করার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলাম। সব সময় অকারণ কিছু কেনা কাটা হয়ে যায়।
স্যুভিনিয়র রাখার আর জায়গা নেই। ছবিগুলোই এখন আনন্দ দেয়। মনেও করিয়ে দেয় সময়টাকে।
রাস্তার একপাশে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বার যেখানে মাত্র তিনজন মানুষ এক সাথে বসতে পারে আর এই ছোট বারটি করতে পেরে মালিক গর্বিত। বারটি পরিপূর্ণ ছিল তিনজন মানুষে।
অন্য আরেকটা দোকানে, পৃথিবীর সব দেশের টাকা লাগানো আছে। প্রথমে মনে করেছিলম ভোটের প্রচারণা। পরে দেখলাম টাকা আর টাকা কত প্রকারের টাকা। সত্যি মানুষের কতরকম আইডিয়া। এই সব বৈচিত্র দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম, আর্নেস্ট হেমিংয়ের বাড়িতে। আমার প্রিয় লেখক যার লেখা ইংরেজি বই আমি প্রথম পড়ি, দ্যা ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দা সি।
সমুদ্র,মাছ ধরা আর মানুষের প্রতি আগ্রহ ছিল এই লেখকের। এত অনুভূতি সম্পন্ন একজন মানুষ শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন নোবেল পুরস্কার পাওয়া, খ্যাতির চূড়ান্ত শীর্ষে থাকা মানুষের ভালোবাসা পাওয়া লেখক, সবকিছু ছেড়ে চলে গেলেন কিসের কষ্ট ছিল প্রিয় লেখকের! কিউবার মানুষদের প্রতি ছিল প্রবল সহানুভূতি সাহায্য করতেন বিপ্লবীদের।
টিকেট কিনে ভেতরে ঢুকে অনুভব করা; এইখানে প্রিয় মানুষটি থাকতেন তার নিঃশ্বাস শুয়ে আছে এখনে, দেয়ালজেুড়ে ভাবনা চিন্তা এই টেবিল, চেয়ার টাইপ রাইটার আঙ্গুলের স্পর্শ। বিছানা বালিশ রান্নাঘর সবকিছু তেমনি আছে। প্রিয় ছিল বিড়াল তারাও আছে শুধু তিনি নেই কিন্তু তার স্পর্শ যেন অনুভব করলাম ।
লেখকের দ্বিতীয় স্ত্রী পলিন ফিফার লেখককে এই বাড়ির সুইমিং পুলটি উপহার দিয়েছিলেন। কী ওয়েস্টর বাড়িতে প্রথম পুল বানানো হয়ে ছিল সমুদ্রের পানি দিয়ে তৈরি সুমিংপুল। লেখকের জীবনীভিত্তিক কোন একটা মুভিতে দেখেছিলাম, লেখক ওখানে উলঙ্গ নেমে সাঁতার কাটতেন ।
কৃষ্ণচূড়া গাছ বাড়ির বাইরে, ভিতরে ও অনেক গাছের সমাহার। সমানে দোলনা ঝুলছে। ছোট ছোট ভাস্কর্য। ব্যালকনি থেকে দেখা যায় দূরের লাইট হাউস রাস্তায় উল্টা পাশে । এই লাইট হাউস টিও একটি মিউজিয়াম করে রাখা হয়েছে।
এই লাইট হাউস টি অনেক ঝড় ঝঞ্জার পরও টিকে আছে। ফ্লোরিডার পুরানো লাইট হাউস গুলোর মধ্যে একটি ।
আবেগ তাড়িত মন নিয়ে বেরিয়ে এলাম লেখকের বাড়ি থেকে। আর্নেস্ট হেমিংয়ের বাড়ির পরে লাইট হাউস দেখে, কিছুটা দূরে ফিস মার্কেট দেখতে গেলাম। মার্কেটে নানা রকম মাছের সমারোহ থাকবে কিন্তু তেমনটা দেখতে পারলাম না মার্কেটের পাশেই সমুদ্রে বড় বড় মাছের সাঁতার কাটা দেখলাম এরা তীর ঘেঁষে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই এলাকাটা ফাঁকা তেমন ভীড় নেই মেরিনের মতো। এখানে অনেক বোট যেগুলো মাছ ধরতে যায় আর মাছ নিয়ে আসে। হয়তো ভোর থেকেই মাছগুলো অন্য কোথাও চালান হয়ে যায়। দুপুর করে ফেলেছি তাই দেখতে পারলাম না।



রোদতপ্ত মেরিন এলাকা নিরব তখন । মাছ হয়তো সকাল সকাল বিক্রি হয় আশেপাশে অনেক ছোট ছোট ভ্যান গাড়ির মতন গাড়ি পার্ক করা। ছোট ছোট ব্যবসায়ী এরা হয়তো মাছ নিয়ে সাপ্লাই দেয় অন্য কোথাও এরকমই মনে হল। রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে মাছের তৈরি খাবার বিক্রি হচ্ছে। তাজা মাছ পছন্দ করে দিলে রান্না করে দিবে।
হোটেলে ফিরে এলাম পোষাক চেঞ্জ করে সমুদ্র পারে রওনা দিলাম।
সমুদ্রের হাওয়ায় বসে থাকবো আর সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখে খাওয়া-দাওয়া সেরে ফিরব।
রোদ্জ্বলা দিন ঝকমক করছে। উত্তাপও খুব আরাম দায়ক। ডিসেম্বরের এই সময়ে এরকম থাকলেও গ্রীষ্মে অনেক গরম হয়।
সূর্যাস্ত ভালোভাবেই দেখা যাবে সাগর জলে আজ,পশ্চিম তীরে গালফ অফ ম্যাক্সিকোতে। শুধু সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানে এসেছে অনেক মানুষ, আমরাও তাদের সাথে সামিল হলাম। এখানে একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে যেখান থেকে সবচেয়ে ভালো সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় সেখানে জায়গা পাওয়া খুব কঠিন হয় অনেক সময়।
অনেক আগে থেকে সূর্য ডুবা দেখার ঠিক টেবিলে বসার জন্য বুকিং দিয়ে রাখেন অনেকে। আর অনেকে জাহাজে চড়ে সমুদ্রের মাঝে ফাঁকা জায়গায় চলে যায় সূর্যাস্ত দেখার জন্য ।
আর কেউ কেউ বালুকাবেলায় বসে সূর্যাস্ত দেখে। পিয়ার বানানো আছে লম্বা করে সমুদ্রের অনেকটা ভিতর পর্যন্ত। ওটা ধরে হাঁটলেও সমুদ্রের অনেকটা ভিতরে চলে যাওয়া যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে বসে থাকার জন্য বেঞ্চ দেয়া আছে।
রেস্তোরাঁ বুককিং বা জাহাজে করে সূর্যাস্ত দেখতে চাইলাম না বালুকাবেলায় বসে থাকলাম। পিয়ারে চলে গেলাম তার বেঞ্চের উপরে সূর্যের দিক করে বসে থাকলাম। নিচে থৈ থৈ পানি নাচচ্ছে, জাহাজের উপলব্ধি হচ্ছে ।
ঠিক যখন সূর্য ডুববে তখন দেখা গেল একটি জাহাজ এগিয়ে আসছে আর সূর্যকে ঢেকে দিচ্ছে তাহলে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি সূর্য ডোবা না একখানা জাহাজ আমাদের চোখের সামনে। এটা খুবই বিরক্তির এবং হাসির ও উদ্রেক করল এভাবে অন্য মানুষের কাছ থেকে সূর্যকে কেড়ে নেয়া কি ঠিক হল!


গোধূলির রং তখনও আকাশ জুড়ে চারপাশ যেন সোনা গোলা রঙে ঘিরে আছে। সন্ধ্যা নামছে মন্দ মন্থরে। আমরা আস্তে ধীরে হেঁটে বালুকাবেলার পাশে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলাম রাতের খাওয়াটা আজ এখানেই করব ।
স্পেশাল রান্না এখানকার সাগরপাড়ের বাতাস খেতে খেতে খাওয়া-দাওয়াটা ভালোই হলো।
খাওয়া শেষ হওয়ার পরে আরো খানিক গল্প করলাম। চারপাশে বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে আকাশে তারার মেলা দেখা যাচ্ছে।
আকাশের তারার ছায়া পরেছে জলে। নারিকেলের পাতারা নাচছে বাতাসে। মায়াবী সময় খাওয়াদাওয়ায় মজাদার আনন্দময় হলো। এবার বিল দিয়ে আমরা উঠবো। বিল দিতে গিয়ে আমার কার্ড খুঁজে পাচ্ছি না অথচ খানিক আগেও কার্ড আমার ফোনের কভার এর ভিতর ছিল দেখেছি।
কি একটা ভয়ানক অবস্থা কার্ড হারিয়ে ফেললে কিভাবে চলবে। এদিকে একজনের কার্ড শুরুর দিন থেকেই কাজ করছে না । আমার আরেকটা কার্ড আছে কিন্তু সেটাও বিদেশে আসার পর কোম্পানি বন্ধ করে রেখেছে কেন যেন । এই কার্ডের একটা সমস্যা ওরা প্রায় সময়ই ফেক কেনাকাটা মনে করে ব্লক করে দেয়, প্রতিদিনের বাইরে কেনাকাটা দেখলে। যদিও জানিয়ে আসি তাদের। তবু এটা যেন স্বভাব,কার্ড কম্পানির। ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। ক্রেডিড কার্ড হারালে ফেক ব্যবহার হলে ঠিক আছে কিন্তু নিজে যখন ব্যবহার করতে পারিনা তখন মেজাজটা খারাপ হয়। কিন্তু এই কার্ডটা কোথায় হারালো যেটা সার্বক্ষণ আমি ব্যবহার করছি। ক্রেডিড কার্ড আর ড্রাইভিং লাইসেন্স একসাথে ছিল, দুটোই হাওয়া। আনন্দের মাঝে কালো ছায়া।
দুটো কার্ডই নাই অথচ গাড়ি থেকে নামার সময় আমার মনে হয়েছে সাথেই আছে। তাহলে এত দূর হেঁটেছি এখানে কোথাও পরে গেছে মাটিতে বা পানিতে। আর যদি কেউ পেয়ে নিয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা কিন্তু এখন আর করার কিছুই নেই। অন্ধকারে কোথায় খুঁজব। ফোন করতে হবে কোম্পানিতে কার্ড বন্ধ রাখার জন্য। শেষ মুহূর্তে এসে একটা বিরক্তিকর ঘটনা ঘটে গেল । আরেকজন পেমেন্ট দিয়ে দিল। ভাগ্য ভালো যে কয়েক জন মিলে ছিলাম সবারই সামর্থ্য ছিল খরচপাতি করার । আবার মনে হল ডোন্ট কিপ ইয়োর এ্যাগস ইন ওয়ান বাস্কেট এই মহতী বাক্যটি ।
আমরা গাড়িতে ফিরে এলাম দরজা খুলে গাড়ির সিটের পাশে দেখি কার্ড দুটো পড়ে আছে। আহ কি শান্তি বেজায়গায় যায় নাই।
এক নিমিষে যে নানা রকম কাজের ফর্দ মাথার মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সব ঘুচে গেল এবং মন আনন্দময় হয়ে উঠল। এইভাবে খোলা কাভারে আর কার্ড কখনো রাখবো না, একদম ব্যাগের ভিতর চেইন টেনে বন্ধ করে রাখবো।


আমরা আবার সাউর্দান মোস্ট পয়েন্টে গেলাম এখন রাতের বেলা জায়গাটা একদম ফাঁকা । ছবি তোলার জন্য কেউ নেই। সেখানে ঘোরাফেরা করে রাতের ছবি তুলে মেরিন এরিয়া যেখানে গতকাল শাটল বাসে করে গিয়েছিলাম সেদিকে আবার ঘুরতে গেলাম ।


আসলে দুই মাইল চওড়া এই শহরে খুব বেশি কিছু দেখার নেই। আবার অনেক কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় আছে যদি পছন্দ করেন। সবচেয়ে প্রথমটা হলো, ভূমির শেষ অংশটায় দাঁড়ানো। তবে পুরো কী জুড়ে অনেকগুলো দ্বীপে মানুষ ঘুরতে যায় । কেউ যায় মাছের সাথে সাঁতার কাটতে কেউ যায় ডলফিন এর সাথে সাঁতার কাটতে। সাগরের নিচে ভাস্কর্য আছে তাও দেখতে এয়ার বোটে চড়ে খাল বিলে ঘুরাফেরা অনেক কিছুই মানুষ করে এক একটা দ্বীপে ঘুরে ঘুরে।

আমরা এমনিতেই অনেক মাইল পথ ড্রাইভ করে ঘুরেছি কাল সারাদিন। এখন শুধুই অবকাশ বালুকাবেলায় কাটানো ।
হোটেলে ফিরে পুলে সাঁতার কেটে সময় কাটিয়ে শাওয়ার নিয়ে অতঃপর ঘুমাতে গেলাম এবং মোরগ বাগ দিয়ে ভোরবেলা ঘুম ভাঙলো।কী ওয়েস্টের এই মোরগ গুলো কারো পোষা নয়। এরা বন্য মোরগ। নিজেদের মতন বাঁচে মানুষের সাথে। রাতের বেলায় তাদের বিভিন্ন আনাচে কানাচে শুয়ে থাকতে দেখেছি।
আজ হোটেলেই নাস্তা করলাম তারপর হোটেলের সামনের সিবিচে যেখানে আসলে বিচ নেই হাইওয়ে চলে গেছে তার পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতে গেলাম। পথে দেখা হল গিরগিটির সাথে, পাশ দিয়ে সাই সাই করে গাড়ি চলে যাচ্ছে । অন্য পাশে সমুদ্র ছোটখাটো বোট, দু তিনটে। একটা বোট দেখলাম উল্টে পড়ে আছে কয়েকজন মানুষ সেখানে বোটটি তোলার চেষ্টা করছে অথবা নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
পানির ভিতরে যে গাছগুলো ভেসে আছে তা দেখে মনে হলো যেন রাতারগুল, অর্ধেক ডোবা গাছ পানির ভিতর থেকে মাথা তুলে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে হাতে হাত ধরে। মনোগ্রোভ গাছের অদ্ভুত সৌন্দর্য। শক্তিময় কঠিন এবং কোমল।



আজ আমরা সারাদিন কাটাব সামার্থ বিচে। বলা হয় সবচেয়ে সুন্দর এই বিচটি।
সেপ্টেম্বরের দুই তারিখ ২০১৩ তে কি ওয়েস্টের এই বিচে একটা রেকর্ড তৈরি হয়েছিল। অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছিল বিচ এলাকায়
অভিনন্দন, স্বাগত জানাতে, চৌষট্টি বছর বয়সের একজন নারী কিউবার হাভানা থেকে সাঁতার কেটে এসে উঠেছিলেন এই বিচে।
ডায়না নিয়াদ, কিউবার হেমিংয়ে বিচ থেকে একত্রিশ আগস্ট সাঁতার কাটা শুরু করে দুই সেপ্টেম্বর দুপুরে কী ওয়েস্ট এর সামার্থ বিচে এসে উঠেন। দূরত্ব ছিল একশ দশ মাইল দূরন্ত সাগর পাড়ির।
এভার নেভার এভার গিভ আপ, ডায়ানা বলেন বয়সের দোষ দিয়ে লাভ নাই, পরিবেশের দোষ দিয়ে বা অন্য কাউকে দোষ না দিয়ে, নিজের মন যা চায় তাই করার চেষ্টা করা উচিত।
ঘুরতে যাওয়ার কিছুদিন আগে, নেটফ্লিক্সে ঢুকতেই যখন এই ডায়লগটা আসল, আমি যাচ্ছি আমি করবই। তখন ছবিটা দেখার জন্য আগ্রহী হয়েছিলাম। কি করবে সেটা জানার জন্য। কোথায় যাচ্ছে তা দেখার জন্য। এবং দেখেছিলাম মানুষের আগ্রহ থাকলে কত অসাধ্য সাধন মানুষ করতে পারে।
ছবিটা দেখে জেনেছিলাম একটি সত্যি ঘটনা। ডায়ানা নিয়াদদের জীবন। যে সাঁতারু হিসাবে খ্যাত তার কথা জানতামই না। শুনেছি শুধু ব্রজেন দাসের গল্প। কিন্তু একজন নারী যে কত কিছু সাঁতরে পার হয়ে পুরস্কার জিতেছেন অনেক। এবং তার মন তখনও অশান্ত সমুদ্র পাড়ি দিতে না পারার জন্য, অস্থির হয়ে আছেন তিনি। যখন বয়স হয়েছে বলে সবাই তাকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে তখনও তিনি অদম্য উৎসাহে একাই ভাবছেন তাকে এই কাজটা করতেই হবে।
মানুষ কত অসাধ্য সাধন করতে পারে তার ইচ্ছা থেকে।
ষাট বছর পূর্তি সময়ে সিদ্ধান্ত নেন ডায়ানা নিয়াদ আবার সাঁতার কাটবেন। এবার সাগরপড়ি দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পৌঁছাবেন। একশ দশ মাইল দীর্ঘ পথ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ, বিপরীত স্রোত এবং ভয়াবহ হাঙ্গর, জেলিফিসকে পাত্তা না দিয়ে তিনি সাঁতার কাটবেন হাবানা কিউবা থেকে ফ্লোরিডার কি ওয়েস্ট পর্যন্ত, এক দেশ থেকে অন্য দেশ।
জুড়ি ফস্টার আরেক প্রিয় অভিনয় শিল্পী ছিলেন উনার গাইড এবং বন্ধু, কোচ এই ছবিতে। ষাটতম বৎসরে রেকর্ড করতে চাইলেও বারে বারে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে থেমে যায় মাঝ পথে এই সাঁতার কাটা। যারা সাপোর্ট করছিল তারাও আশাহতো হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু শূন্য থেকে আবার শুরু করার জন্য ফিরে আসেন ডায়না এবং চৌষট্টি বছর বয়সে নিজের ইচ্ছা পূরণ করেন। দীর্ঘতম সাঁতার সাগরে হাঙ্গর এবং জেলি ফিসের আক্রমণকে পর্যদুস্ত করে জয়ী হন।

এবছর অক্টোবরে টারটোল হসপিটালে এসে, সুস্থ হওয়া একটি কচ্ছপকে পানিতে ছেড়ে যান তিনি। একটুর জন্য দেখা হলো না আমার ডায়ানা নিয়াদের সাথে। তো তার গল্প জেনে ভালোলাগল। মানুষ কত অসাধ্য সাধন করে বয়স তোয়াক্কা না করে।
টারটোল হসপিটালটা তাদের সুস্থ রাখার জন্য তৈরি হয়েছে। সামার্থ বিচ থেকে একঘন্টার দূরত্বে। সাগরে অনেক কচ্ছপ আঘাত পায় নানা ভাবে। তাদের ধরে এনে এই হাসপাতোলে চিকিৎসা করা হয়। সুস্থ করে আবার সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়। তেমনি এক বয়স্ক কচ্ছপকে পানিতে ছাড়ার জন্য ডায়ানাকে নিয়ে আসা হয়েছিল অক্টোবরে কীতে তৈরি হওয়া কচ্ছপের হাসপাতালে।

সারা দুপুর বিচে কাটিয়ে বিকেলের দিকে গেলাম প্রথমে ন্যান্সি ফরেস্টারের সিক্রেট গার্ডেন। একজন আর্টিস্ট এখানে পাখি পালন করেন। তোতা, কাকাতোয়া ম্যাকাওয়ান কি অদ্ভুত সুন্দর রঙের সব পাখি উনার কোলে বসে আছে, বাইরে বসে গান গাচ্ছে । ঝগড়া করছে। খাঁচার ভিতরে খেলছে। খানিকটা সময় কেটে গেলো পাখিদের সাথে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, সাদা কত রঙের রঙিন পাখির ছোট্ট দুনিয়ায়। হেঁটে যাচ্ছিলাম লিটিল হোয়াইট হাউসে। মেরিলিন মনরোর হাস্যজ্জ্বল ভাস্কর্য সামনে দাঁড়িয়ে, সিনেমা হলে যাওয়ার আহ্বান নিয়ে। আমরা তাকে দেখে চলে গেলেম হোয়াইট হাউসে। ওয়াসিংটনের মতন সব কিছুই আছে এই লিটিল হোয়াইট হাউসেও। তখন প্রায় বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই আমরা দ্রুতই দেখা শেষ করলাম।
একদম পশ্চিমে আছে একটা এ্যাকুরিয়াম। ভিতরে ঢুকলে সব রকম সামুদ্রিক মাছের দেখা পাওয়া যায়। আমি এত এ্যাকুরিয়াম দেখেছি এখন আর ইচ্ছা করে না ঘরে তুলে রাখা মাছ দেখতে যদিও সাগর পাড়ের এই বিশাল এ্যাকুরিয়াম মনে হয় যেন সাগরেরই অংশ। তবু প্রথমবারের মতন আর চমকৃত হইনা। তার চেয়ে খোলা সাগরে ডুবুরি হওয়া বা সাবমেরিনে করে যাওয়া বেশি একসাইটিং। এটায় আমি মজা পাই, সঙ্গীরা করতে চায় না তাই এবার আর সেদিকে গেলাম না।
বাড়িগুলোর মেইলবক্সগুলো ভালুক ধরে থাকে। একদম অন্য রকম একটা ডেকরেশন। যা ওখানের পরিবেশের সাথেই মানায়।


সানসেট পয়েন্টে ম্যালরি স্কোয়ারে গেলাম। যেখান থেকে জাহাজ সূর্যাস্ত উদযাপন করতে নিয়ে যায়। আজকে কী ওয়েস্টে শেষ সূর্যাস্ত দেখার জন্য বসলাম। আমরা জাহাজে চড়লাম না সমুদ্রের পাড়ে একটা জায়গা খুঁজে বসে পরলাম খোলা হাওয়ায়।
আজ সূর্যাস্ত ভালো ভাবেই দেখা গেলো। পানির নীচে টুপ করে সূর্যটা ডুবে গেলে রাস্তার উপর যেখানে নানা রকম খেলা চলছিল অনেকক্ষণ থেকেই কিছু মানুষ গান-বাজনা করে কিছু মানুষ শরীরের নানা রকম কসরত দেখায়। ম্যাজিক এবং রঙমাখা মুখে জোকারদের নানান অঙ্গভঙ্গি, সেগুলো দেখতে দেখতে রাতের খাবারের জন্য সি ফুড রেস্টুরেন্টে গেলাম।

ডিনার শেষে কিউবান কফি খাওয়ার জন্য কিউবান কফি শপে গেলাম।
প্রথম দিন মায়ামি থেকে কিউবান কফি খাওয়াটা প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। তবে অনেক জায়গায় কিউবান কফি খেলেও মায়ামির প্রথমদিনের কফিটার স্বাদ লেগে আছে। অসম্ভব পছন্দ হয়েছে আমার এই কফি। এট্টুখানী কালো কফি কি তার ঘ্রাণ কি যে শক্তি সারাদিন চাঙ্গা করে রাখে।
এরপর ধীরে সুস্থে আমরা হোটেলে ফিরলাম। আজ আর সুইমিং করার ইচ্ছা নেই। আজ শুয়ে পরলাম। হোটেল রুম গুলোতে বড় বড় টেলিভিশন দিয়ে রাখে। চালাবারই সময় হয় না এই টিভি, রুমেই থাকি না।
কাল আমরা ফিরে যাবো মায়ামি।
মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙ্গার পরে আরও খানিক গড়াগড়ি করলাম সকাল দশটায় চেক আউট কিন্তু আমরা তার আগেই বেরিয়ে পড়লাম। কী ওয়েস্টকে বাই বাই বলে, হাইওয়ে এক এ উঠে পড়লাম। সকালটা খুবই সুন্দর ঝকঝকে রোদের আলো। দুই পাশের ছোট ছোট দ্বীপগুলো ছাড়িয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। উত্তরের দিকে এক ঘন্টা চলার পরে আমরা সেই সাতমাইল লম্বা ব্রিজের উপর আসলাম সেভেন মাইল লং ব্রিজ এই নামে সেতুটি বিখ্যাত।
দুই পাশে নীল, সবুজ জলের মধ্যে ছোট ছোট বোট দেখা যাচ্ছে, ঢেউ ঝিলমিল করছে খুবই শান্ত একটা সময়।
আগের দিন ব্রীজ পাড় হওয়ার সময় মেঘলা আকাশ ছিল আর এখন সকালবেলা চকচকে রোদের আলো। দুটো সময়ে প্রকৃতির দৃশ্য দুই রকম।
আমরা ঠিক করেছি পথে একটি সুন্দর জায়গায় ,অন্য একটি দ্বীপে থেমে সকালের ব্রেকফাস্ট করব।
বেশ কিছু পথ পেরিয়ে আসার পর একটা জায়গা আমাদের খুব পছন্দ হলো, সাগরের পারেই অসংখ্য নারিকেল গাছের একটা জায়গা দেখা যাচ্ছে সবটা বোঝা না গেলেও তখন বেলা এগারোটার মতো বাজে । ভাবলাম এখানেই আমরা থেমে যাই সকালের নাস্তা করি। সকাল থেকে এখনও কিছু খাওয়া হয়নি।
নানা ধরনের খাবার আছে তার মধ্যে নিজেদের পছন্দের খাবার আমরা বেছে নিলাম এবং অর্ডার করলাম। খাওয়া শেষে ঘুরে ফিরে বেড়ালাম সমুদ্র পাড়ে বসে থাকলাম এই জায়গাটা এখনো অনেকটাই ফাঁকা নতুন নতুন বাড়ি উঠছে যে বাড়িগুলো কাছাকাছি নয় জায়গা এত সুন্দর হবে ভাবিনি । একদম সমুদ্র পাড়ে খড়ের ছাউনি দেওয়া একটা রেস্টুরেন্ট তার পাশে সুইমিং পুল, অনেকেই সুইমিং করছে, চারপাশের লোকজন বসে আছে চেয়ারে। উপরে খড়ের চাল নিচে সিমেন্ট চারপাশে খোলা জায়গাটা খুবই সুন্দর। সমুদ্র পাড়েই বসার ব্যবস্থা হলো।
এখানে বাড়ি গুলো অনেক দূরে দূরে। ফাঁকা এক একটা বড়ি একা দাঁড়িয়ে আছে।
বিশাল আটলান্টিক সাগরের লাল লবস্টার সাথে আরো নানারকম উপাদান, সবজি মিষ্টি ফল স্নাক্স ভাত রুটি । খাওয়ার খেয়ে সমুদ্র পাড়ে লবন বাতাস গায়ে মেখে শুয়ে ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো, এখন আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।

প্রায় ঘন্টা দুই সময় আমরা ওখানে কাটালাম তারপর আবার রওনা হলাম। পথিমধ্যে আরও একটা দ্বীপে থামলাম কিছুটা বালুকা বেলায় বসে থাকার জন্য কিন্তু ছোট্ট দ্বীপের ভিতর তেমন ভালো বসে থাকার জায়গা পেলাম না ।
পথের উপর বিশাল লবস্টার দেখে থামলাম। ভিতরে ঢুকে দেখলাম অনেক ছোটছোট দোকান কারুপল্লী বলা যায় । সব স্থানীয় শিল্প। এখানে অন্য কিছুর সহ অবস্থান নেই। স্থানীয় জিনিসকে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগল। আমাদের দেশে আমরা তো সব নিজস্বতা ভুলে বিদেশি নানান সরঞ্জামে সাজাই চারপাশ এখন খাওয়া থেকে পোষাক।


অনেকটা চলে আসার পরে পাশ দিয়ে গাছে ঢাকা সুন্দর রাস্তাটা দেখে ভাবলাম, এই রাস্তার শেষে কি আছে দেখে আসি। এদিকে অনেক গাড়িও যাচ্ছে নিশ্চয়ই ওদিকে ভালো কিছু আছে আমরা চলছি তো চলছি, পাশেই আছে ক্রোকোডাইল রিজার্ভ বারে বারে সাইন দেখাচ্ছে।
ঘন গাছের ম্যানগ্রোভ হাত ধরাধরি করে আছে এই জঙ্গলের রাস্তা শেষ হচ্ছে না আমরা ভেবেছিলাম সামনে গিয়েই আমরা একটা খোলা সৈকত পেয়ে যাব। প্রায় পঁচিশ তিরিশ কিলোমিটার চলে আসার পর আমরা পৌছালাম একটা গেইটের সামনে এবং সেখান থেকে ভিতরে যাওয়ার জন্য টিকিট করে ঢুকতে হবে ভিতরে। জায়গাটা বেশ সুরক্ষিত। হুট করে ঢুকে যাওয়ার উপায় নেই।
যারা আমাদের সামনে গাড়ি চালিয়ে আসছিল তারা নিশ্চয়ই আগে থেকে রিজার্ভ করে রেখেছে ওখানে ভিতরে ঢোকার জন্য ওখান থেকে আবার ফিরতে শুরু করলাম। এখন আমাদের টিকিট করে ভিতরে যাওয়ার সময় নেই।
পরে গুগল সার্চ করে দেখলাম, কী লার্গো হল ফ্লোরিডা কীগুলির মধ্যে প্রথম এবং বিশ্বের ডাইভ ক্যাপিটাল। এটি বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম প্রাচীর, স্পিগেল গ্রোভ, জন পেনেক্যাম্প কোরাল রিফ। যারা মাছের সাথে কোরালের সৌন্দর্যের সাথে সাঁতার কাটতে চায় তারাই ওখানে যায়। বেশির ভাগ ডুবুরি।



ফিরে আসতে হলো পুরো রাস্তাটা এবং ফেলে যাওয়া হাইওয়ে একে আবার ঢুকলাম। অনেক জোড়ে যাওয়া যাচ্ছে বিকেল চারটার মধ্যে আমরা মায়ামি পৌঁছে গেলাম।
আমরা যে গুড টাইম হোটেলে ছিলাম তার পাশে চেনা পার্কিং লটে আমাদের গাড়ি রাখলাম।
তারপর কিউবান কফি খেতে গেলাম সেই বিখ্যাত কিউবান রেস্টুরেন্টে । প্রথমদিন মায়ামিতে এই কফি খাওয়ার পরে এর প্রেমে পরে গেছি। অন্য সবখানে কিউবান কফি খেলেও এই দোকানের কফির স্বাদ মুখে লেগে আছে। একটু খানী কালো কফি কি সাংঘাতিক তার তেজ সারাদিন চাঙ্গা করে রাখে স্বাদে, গন্ধে ভরপুর।
কফি পান করে চাঙ্গা হয়ে সাগরবেলায় চলে গেলাম। সাগরপড়ে যথারীতি ভীড়। রাত দশটায় সৈকত বন্ধ হবে, মানুষ ততক্ষণ থাকবে। দূরে জাহাজগুলো আগের দিনের মতনই লাইন দিয়ে ছুটেছে। এখনকার জাহাজগুলোতে পাল নাই, এক একটা বিশাল এ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং যেন সাগর দিয়ে যাচ্ছে।


আমরা যেখানে আছি তার একটু দূরেই শেষ কোনায় আছে ন্যূড বিচ। ওখানে কোন পাহারা নেই যে কেউ ঢুকে যেতে পারে। তবে ওখানে গেলে দেখা যায় ন্যাংটো মানুষের ভীড়। ছোট যে কাপড়টুকুও মানুষ পরে সৈকতে, সেটুকুও গায়ে রাখতে চায় না কেউ কেউ,ওরা ওদিকে যায় উপভোগ করে প্রকৃতির উত্তাপ আদিম ভাবে।
এখানে প্রায় গা খোলা মানুষ আছে, কেউ কাউকে কিচ্ছু বলছে না, বিরক্ত করছে না সবাই নিজের মতন উপভোগ করছে।
অনেকক্ষণ সমুদ্র সৈকতে কাটিয়ে যখন চলে আসছি দোকানপাটের কাছে তখন দেখলাম অনেক মানুষ হইচই করে আমাদের সাথেই চলেছে। বিখ্যাত কেউ আমাদের পাশেই। একজন মহিলা হাঁটছে তার পাশে হাঁটছে হুডিতে মুখঢাকা একজন পুরুষ। নারী এমন পোশাক পরেছে উলঙ্গই মনে হয় আর পাশের পুরুষটি সারা গা ঢেকে মুখটাও ঢেকে রেখেছে হুডিতে।
আমি তেমন কাউকে চিনতে পারিনা চট করে। সাথীরা বলল, কানি ওয়েস্ট বর্তমান সময়ের বিখ্যাত গায়ক।
প্রথমে বিয়ে করেছিল যাকে অনেক রকম ঘটনার রটনা ঘটিয়ে সে বউ এখন বিখ্যাত তার পরিবারসহ। চারটি বাচ্চা নিয়ে সুখেই ছিল তারপর কি হলো কে জানে দুজনেই আলাদা সঙ্গী বেছে নিল।
কানি এখন ওর নতুন বউ বিয়াংকার সাথে হাঁটছে। না চাইতেই বিখ্যাত মানুষ সামনে চলে এলো।
বিয়াংকার নতুন স্টাইল সি থ্রু পোশাক এভাবেই ঘুরছে তারা বেশ কিছু দেশ। তবে ইতালি সারা গা দেখা যায় এমন পোশাক পরে ঘুরতে দেয়নি বলে শুনলাম।
কানি ওয়েস্টের কনসার্ট আছে কদিন পর এই মায়ামি বিচ আর্ট বাসেলে। ব্রোকেন পরিবারের বাচ্চা মায়ের কাছে মানুষ হওয়া, স্কুল ড্রপ আউট এই ছেলে, গান দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। দুহাজার চার থেকে শুরু হয় তার উত্থান। সেই সময় ওর গাওয়া ডায়মন্ড গানটা আমি খুব শুনতাম। অন্য গানগুলো যদিও আরো বিখ্যাত কিন্তু আমার এই গানটা খুব ভালোলাগে ।
জমজমাট রাস্তায় আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে সেই বিখ্যাত ক্যাফে যেখানে ট্রেন্সজেন্ডাররা ভয়াবহ রকম সাজ করে দূর্দান্ত নাচ করে তার সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের নাচ দেখলাম। আমাদের সামনে দিয়ে অনেক মানুষ পার হচ্ছেন। একজন সাউথ এসিয়ান মহিলাকে দেখলাম নিজেকে কোথায় লুকাবেন এই নাচ থেকে সেজন্য যেন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছেন। উনার সাথে আছে বাচ্চা, টিনএইজদের বড় একটা গ্রুপ। কত রকমের পরিস্থিতিতে মানুষের পরতে হয় বাইরে গেলে অজানায়। আর যদি পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে নাপারা যায় তাহলে বিশাল সমস্যা।
একটা রেস্টুরেন্ট রাতের ডিনার করতে বসলাম। এতদিনের ঘোরাফেরা আজকে শেষ খাওয়া মায়ামিতে। কোন তাড়াহুড়া নেই আজ রাত পুরোটাই আমাদের জেগে থাকা, শেষ রাত মায়ামি ফ্লোরিডায়।
রাত তিনটায় গাড়ি রিটার্ন করতে হবে এয়ারপোর্টে।
ফ্লাইট ব্যাক টু হোম সকাল আটটায় তিন ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হলে তিনটায় রওনা হয়ে চারটায় যেতে হবে। উল্টাপাল্টা সময়ের জন্য আমরা আর হোটেল নিলাম না। মাঝ রাতে, গাড়ি রিটার্ন করার পরে ব্যাগ নিয়ে চলা ফেরা অসুবিধা, রাতে আর কোথায় বা ঘুরবো, খানিক সময় এয়ারপোর্টেই কাটাব।
আমরা বারোটায় খানিক শুয়ে থাকলাম, পার্কিং লটে গাড়ির মধ্যে । যদিও পাশে হোটেলে গানের শব্দ আসছিল তারপরে একসময় থামল কিছুটা হইচই। একটুখানি বিশ্রাম করে নিয়ে এয়ারপোর্টে রওনা দিলাম। সময় পার হলে আবার এক্সট্রা পয়সা দিতে হবে তো গাড়ির জন্য। এয়ারপোর্টে গিয়ে শীতের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ড্রেস আপ করে নিলাম তারপর অপেক্ষায় থাকলাম এয়ার প্লেনের বুথ খোলার।
অতঃপর ভালোভাবে বাড়ি ফিরে এলাম হোম সুইট হোম।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:০০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×