এখন বড়ই পাকা সময় সরস্বতী পূজা শেষ হলে বড়ই খাওয়া যাবে তার আগে বড়ই খাওয়া যাবেনা। এটা আমাদের হিন্দু ধর্মীয় বন্ধুরা বলতো কিন্তু আমরাও সেটা মানতাম। সরস্বতী পূজা হওয়ার আগে বড়ই খাওয়া যাবে না। আসলে স্বরস্বতী পূজা পর্যন্ত সময়টা বড়ই না খাওয়া থেকে বিরত রাখা হতো, হয়তো বড়ই ভালো ভাবে পাকার জন্য।
খুব টক খেতে পছন্দ করত আমার ছোট বোন তেতুল, কাঁচা আম, বড়ই লবণ ওর বালিশের নিচে পেতাম। বিছানা গোছাতে গেলেই খুঁজে পেতাম ওর টক ফলের সম্ভার বালিশের নিচে । সারাদিন ধরেই সে টক ফল খেতে পারতো, রাতের বেলা কাঁথার নিচে ঢুকে টক খেতে খেতে ঘুমাত।
মায়ের শত বকাবকিতেও লাভ হতো না ও টক ফল খাবেই । নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে তখন বোধ হয় ক্লাস থ্রিতে পড়ে।
সেদিন স্কুল ছুটির পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ছোটবোন বাড়ি ফিরছে না। বেশ খানিটা সময়পরেও ওর বাড়ি আসার নাম নেই। একটু উদ্বিগ্ন হচ্ছেন মা, কি ব্যাপার ও আজ আসছে না কেন স্কুল থেকে।
অল্প সময় পরে দেখা গেল শুধু ছোট বোন নয়, মনে হল স্কুলের সব বাচ্চা আমাদের বাসায় হাজির হয়েছে। তার মাঝখানে জড়সড় হয়ে আমার ছোট বোন, সবাই ঘিরে আছে তাকে।
কেউ কিছু বলার আগেই সব মেয়েরা একসাথে বলতে শুরু করলো, ওর কোন দোষ নেই। বড়ই পারতে চেয়েছিল । ও বড়ই পারতে ঢিল ছুঁড়েছিল, এই মেয়ের মাথায় লেগে গেছে, ফেটে রক্ত পরছে।
স্কুলের পাশেই বিশাল বড়ই গাছ। টসটসে বড়ই ঝুলে আছে এ দেখে কি লোভ সামলানো সহজ। এত বড় গাছে তো চড়া যাবে না ঢিল ছুঁড়ে যদি কিছু বড়ই পারা যায়। যেমন মনে হওয়া, কিছু পাথর জোগাড় করে গাছে ঢিল ছুঁড়তে শুরু করল। হঠাৎ করে একটা ঢিল কোন মেয়ের মাথায় লেগে গেল।
বাড়িতে সবাই ছিল আব্বা তাড়াতাড়ি সেই মেয়েকে নিয়ে কাটা জায়গা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। সাথে ওষুধ দিয়ে দিলেন ব্যথা হলে খাওয়ার জন্য উনি তো সবারই ডাক্তার ।
সবার বাড়ির মধ্যেই যে ভয় আতঙ্ক থাকে এরকম একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য বাচ্চাকে বাড়িতে পিটানো হয় খুব করে। তেমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর জন্য সব বন্ধুরা মিলে হাজির হয়েছিল। আমার বোনে পক্ষে সাক্ষী দিতে, ওর কোন দোষ নেই। বাচ্চাদের এই সরল্য ভীষণ মনে ধরেছিল, এখনো মনে পড়ে ঘটনাটা।
ছোট ছোট এই বাচ্চাগুলোর কথা মনে হলে মনটা ভালো হয়ে যায়। তাদেরকে কেউ বলে দেয়নি তোমরা যেয়ে ওর বাবা মায়ের কাছে ওর দোষ নেই এটা বলো। কিন্তু তারা নিজে থেকেই সবাই চলে এসেছিল তাদের বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য। বাচ্চাদের নিজের মনে ভালো টুকু বোঝা এই জিনিসটা যেন দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অভিভাবক নিজেই বাচ্চাদের সত্যি কথা বলা থেকে ফিরিয়ে রাখেন অনেক সময়। পরিবারে একে অপরের বিরোধীতায় বা প্রতিবেশী বা অন্য কোন ব্যাপারে সঠিক কথা বলায়। অথচ বাচ্চা সারল্য, ইনসেন্ট মনোভাব নিয়েই বেড়ে উঠে।
বড়ই খাওয়ার জন্য এভাবে ঢিল ছুড়া ছুড়ি আর করোনা
আব্বার এটুকুই শাসন ছিল উপদেশ ছিল। এভাবেই তিনি শাসন করতেন বুঝিয়ে বলাটাই ছিল শাসন। কখনো হাত তুলে মেরেছেন বা বকাবকি করেছেন বলে মনে পড়ে না । আব্বা ছাড়া জীবনের কতগুলো বছর চলে গেল। তাও তার উপস্থিতি চারপাশ ভরিয়ে রাখে। বাইশে ফেব্রুয়ারীর আগে পরের বেশ কয়েকটা দিন প্রতি বছর আমি এক ভিন্ন অনুভুতিতে চলে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৩:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


