somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেদিন আর আজকাল !

০৬ ই জুন, ২০২১ ভোর ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট ।

এ শহরে সব পোষা পাখির বাস। এর মাঝে আমিও পড়ি। কেন বললাম জানেন? আমরা কারো ডরে চুপ থাকি আর মুখস্ত বুলি বলি আবার কারো অন্ন খাইয়া বাঁচি। যাক এত সব তাত্ত্বিক কথা রেখে সোজা কাহানী তে যাই।

আমাদের মহল্লায় শ্রম কল্যান নামে একটা সরকারি অফিস ছিল। ঐ অফিসের সামনে একটা ছোট মাঠ আছে।

সেই মাঠে ব্যাডমিন্টন আর ক্রিকেট খেলা চলত। আমি যে সময়কার কথা বলছি সেইটা বি এন পি র কাল।আর প্রতিদিন চলত আমাদের আড্ডা।

অনেকে আবার দেয়ালে যে পত্রিকা লাগানো থাকত তাই পড়তে ভীড় করত। কেউ কেউ চাকুরির বিজ্ঞাপনে নিজের স্বপ্ন খুঁজে বেড়াত।

সেখানে আমরা মহল্লার বড় ভাইদের সাথে আড্ডাবাজী করতাম।এই বড় ভাইদের মাঝে দুই একজন ছিল যারা দেশের খুব ক্ষমতাসীন নেতার সাথে চলাফেরা করত মানে তাদের ফাইফরমাশ খাটত।

একদিন কথায় কথায় এক বড় ভাই বলছিল " যদি কোন কাম থাকে কইও মিয়া। এই সব পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি, আই জি জ্যাবে লইয়া ঘুরি ! আমি মতিন চৌধুরীর লোক! "

মতিন চৌধুরী কে? চিনছেন? উনি ততকালীন ক্ষমতাসীন দল বি এন পি র সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। যিনি  কুড়ি হাজার অবৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিলেন!যার মধ্যে ঐ বড় ভাই ছিলেন।

তা এই বড় ভাই করত কি প্রায় ই রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া সুন্দরী মেয়েদের দাঁড়া করাইয়া কথা বলত আর সুযোগ পেলে দেয়ালের পোস্টার ছিড়ে সেই পোস্টার এর পিছনে লেগে থাকা চুনকাম মেয়েদের মাথায় ঘষে ঘষে ফেলে দিতেন। 

এভাবে কয়দিন চলার পর। একদিন কলেজ থেকে বাসায় আশার পথে দেখি কি পুরা ময়দান খালি কেউ নাই।ভাবলাম তাজ্জব! শালায় আইজকা হইল টা কি!

রিক্সা থেকে নামতেই মহল্লার দোকানদার যা বলল তাতে চোখ কপালে উঠে গেল। নতুন ওসি নাম ফিরোজ। আমরা পরে অবশ্য ফিরোজ দারোগা বলতাম।

যাই হোক সেই ফিরোজ দারোগা এসে যাদের কে মাঠে পেয়েছে সব গুলিরে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। এর মাঝে আমার কয়েকজন ফ্রেন্ড আছে।

আমি শুনে জলদি বাসায় কিতাব পুস্তক রেখে।যাদের যাদের ধরে নিয়ে গেছে সবার বাসায় ছুটলাম। তখন তো মোবাইল বা নেট এত সহজ ছিল না। দেখি আংকেল, আন্টিরা কান্নাকাটি করছে। পরে জনপ্রতি পঁচিশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আমার বন্ধুদের ছাড়িয়ে আনা হয়।

পরে জানতে পারি বালিকা বিদ্যালয়ের হেড মিস্ট্রেস ফোন করে থানায় অভিযোগ করাতে পুলিশ এই একশন নিয়েছে।

পরে বন্ধুরা বলেছিল কি হইছিল সেদিন। ক্যামনে ধরা খাইছিল চলেন শুনি সেই আলিফ লায়লা কাহানী।

সকালে ওরা যথারীতি আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় ফিরোজ দারোগা এসে হাজির।ওরা যার যার মতন কথা বলছিল তেমন পাত্তা দেয়নি। মিনিট পাঁচেক পর ফিরোজ দারোগা ডায়ালগ দিল পুরা দাবাং স্টাইলে
" কি রে খানকির পোলারা! দেহছ নাই তোগ বাপ আইছে "!

এতেই ওরা বুঝে গেল কি হতে চলছে। মেইন গেট আটকে দেয়া হলো। সামনে ফিরোজ দারোগার দল পিছনে শ্রম কল্যান অফিস! কিচ্ছু করার উপায় নাই। তো আমার এক বন্ধুর চুল ছিল রাহুল স্টাইলে বড় বড়। ওরে চুল ধইরা গাড়িতে উঠানোর সময় খালি বলছিল " স্যার! লাগে "  এতেই নাকি এক বোবা চটকানা!

পরবর্তীতে ছাড়া পাবার পর ওর ভাষ্য ছিল " মামা! বিশ্বাস কর পুরা পাঁচ মিনিট কানে তবদা লাইগা গেছিল। "

বর্তমানে আমার সেই বন্ধু একটা মোবাইল কোম্পানির বড় পোস্টে জব করে। ভালো আছে। আমার সাথে কথা হয় দেখা হয়। আমরা এসব ঘটনা বলি আর হাসাহাসি করি। কি দিন ছিল!

সেই বড় ভাইদের একজন দুবাই আরেক জন কোন মতে এলাকায় আছে বর্তমান নেতাদের গা গতর টিপে। আরেক জন ইয়াবাসহ ধরা খেয়ে জেল খাটছে। অবৈধ অস্ত্রের বৈধ মালিক কানাডায় সেটল!

এখনো সেই জায়গায় অন্যরা আড্ডা দেয়। আসতে যেতে মেয়েদের ইভটিজিং চলে। এখনো মহল্লার নয়া বড় ভাই বুক ফুলিয়ে বলে

" আমি অমুক নেতার হ্যাডা "!

সোজা কথায় একটা বৃত্তের ভেতর আমরা বন্দী আছি। খালি দম ছাড়ি আর টানি। ব্লগে, ফেসবুকে কলম ধরে বসে বসে সুদিন গুনি!

আমগো অবস্থা ঐরকম গাধার মতন হ্যাশট্যাগ লইয়া সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াইয়া আছি আর ক্ষমতাধর রা মাইরা রক্ত বাইর করছে।

আমরা যার যার নিজ খরচায় ডায়াপার, সেনোরা সেনিটারি ন্যাপকিন লাগাইয়া কইতাছি ভালো আছি !

আইজ এতদূর মেলা রাইত!







সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২১ ভোর ৫:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×