ঘড়ির কাটা ছয়টায় পৌছানো মাত্র বাজতে শুরু করল...ক্রিং ক্রিং..বেজে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই...
রানী ডাইনিং রুম থেকেই চেচাতে লাগল....রেখা, এই রেখা....আমি শব্দের জ্বালায় এখানে বসে থাকতে পারছি না, আর তুই এর মধ্যে ঘুমাচ্ছিস কি করে......রানী এলার্ম বন্ধ করে বকতে বকতে রেখাকে ঘুম থেকে তুলল....এটা যেনো প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে.....
~ কি হয়েছে মা, চেচাচ্ছ কেন....
- কি আবার হবে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে....
~ যাও , সাঝ-সকালে কি যে বলো মা.....
আরও কি কি বলতে বলতে রানী কাজে চলে গেলো...সে দিকে রেখা কান পর্যন্ত দিল না......
প্রতিদিন বকা শুনে ঘুম থেকে উঠা এখন রেখার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে.....মায়ের বকুনী ছাড়া তার যেন ঘুমের ঘোরই কাটে না....
রেখা ঘুম থেকে উঠে, চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভাইজান কে ডাকতে গেলো...
~ ভাইজান, ভাইজান ... তাড়াতাড়ি উঠ্ তো, চা কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে..
সন্দীপ যদিও জানে সাড়ে ছয়টা বাজে, তারপরেও প্রতিদিনের মত বললো কয়টা বাজেরে রেখা ......
~ সাড়ে ছয়টা বাজে ...... তাড়াতাড়ি উঠে পড়্, এদিকে মা'র মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে .....লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে ফেলবে বললাম...
- তাই নাকি, তুই চা টা টেবিলের উপর রাখ্ ... .আমি উঠছি ....
এই রেখা, সন্দীপের একমাত্র ছোটবোন.....রেখা খুব চটপটে স্বভাবের মেয়ে কিন্তু খুব মিশুক.....অল্প সময়েই সে যে কারো সাথে মিশতে পারে .... বলতে গেলে সেই সন্দীপের জীবনটাকে গুছিয়ে রেখেছে ..... তুলিকে হারানোর পর সন্দীপ যে আঘাত পেয়েছে , তাতে তার এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন রাস্তা ছিল না....কিন্তু রেখা আর পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ তাকে বারবার পেছন থেকে আকড়ে ধরে...সন্দীপের কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় রেখার বিয়ে হয়ে গেলে সে আর এ বাড়িতে টিকতে পারবে না.......
হঠাৎ করে তুলির কথা মনে পড়ে গেল সন্দীপের .... আগে প্রতিদিন তুলির ফোন পেয়ে ঘুম ভাংতো সন্দীপের .... কখনও ইচ্ছা করেই ঝগড়া করতো তুলির সাথে, সাঝ-সকালেই... আজ ফোন দিতে দেরি করলে কেন....ব্লা ব্লা ব্লা..যদিও তুলি ঠিক সময়েই ফোন দিত..... কিন্তু ঝগড়া করতেই সন্দীপের যেন মজা লাগতো....
সন্দীপের দুচোখ পানিতে ভরে গেলো ...চোখের সামনে পৃথিবী টা কেমন যেন নিমিষেই ঝাপসা হয়ে উঠলো...
~ সন্দীপ, এই সন্দীপ অফিসে যাবি না.....
- চোখের পানি গোপন করতে করতে সন্দীপ বলল, যাব মা , এইতো রেডি হয়ে নিচ্ছি...
~ তাড়াতাড়ি কর্ টেবিলে নাস্তা নিয়ে বসে আছি....
- তুমি যাও মা আমি আসছি....
সাড়ে সাতটার মধ্যে সন্দীপ বাসা থেকে বের হয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে.....
সন্দীপ রাস্তা দিয়ে স্টেশনের দিকে হাটছে আর ভাবছে আজও কি স্বর্ণা তার সাথে চ্যাট করার জন্য অপেক্ষা করছে .....
সন্দীপ কি সত্যি স্বর্ণার কথা ভাবছে নাকি তুলিকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছে ...কে জানে...
(চলবে)
উৎসর্গ: আমার কিছু প্রিয় ব্লগার....গিয়াসলিটন ভাই,দায়িত্ববান নাগরিক,এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা, অপু তানভীর, চেয়ারম্যান০০৭...
১ম পর্ব
২য় পর্ব

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



