এই রহস্য ঘেরা পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যাদের মাঝে কোন কুসংস্কার বোধ জন্মায় না। কেউ না কেউ কুসংস্কারে ভোগে। গত পোস্টে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির কুসংস্কার কিংবা বলতে পারেন বাতিক অভ্যাস দেওয়া হইছিল। যাঁরা কিছু কিছু অভ্যাসের প্রতি প্রচণ্ড অন্ধবিশ্বাসী ছিল। যাই হোক এবার আরো কয়েকজন বিখ্যাতদের জীবনে লালিত কুসংস্কারগুলো জানিয়েনি।
চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০) : চার্লস জন হাফ্যাম ডিকেন্স (পুরা নাম) ছিলেন ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক। তাঁকে ভিক্টোরিয়ান যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক হিসেবে মনে করা হয়। ডিকেন্স জীবদ্দশাতেই তাঁর পূর্বসূরি লেখকদের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মৃত্যুর পরও তাঁর জনপ্রিয়তা অক্ষুন্ন থাকে। তাঁর প্রধান কারণ হচ্ছে, ডিকেন্স ইংরেজি সাহিত্যে প্রবাদপ্রতিম বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন। বেশ কতগুলো কুসংস্কারে ভুগতেন। তিনি কখনও কাউকে চাকু উপহার হিসেবে দিতেন না, নিজেও পেতে পছন্দ করতেন না। তবে চাকু পাওয়ার পর যদি তাকে কিছু টাকা-পয়সা দেওয়া হয়, তাহলে দোষ কেটে যায়। তিনি উত্তর দিক হয়ে লিখতে ভালোবাসতেন। সে জন্য একটা কম্পাস সবসময় সঙ্গে রাখতেন। তার আরও কুসংস্কার ছিল। ডেভিড কপারফিল্ড পড়লেই সেগুলো জানা যাবে। রুমাল কারও কাছ থেকে পেতে পছন্দ করতেন না, দিতেনও না।
এডগার অ্যালান পো (১৮০৯-১৮৪৯) : এডগার অ্যালান পো একজন মার্কিন কবি, ছোট গল্পকার, সম্পাদক, সমালোচক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোমান্স আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের সারা জীবন কাটের নানা রকম যন্ত্রণা, আর্থিক দৈন্যদশা ও মানসিক অস্থিরতার মধ্যে। বিশ বছর বয়স হবার আগেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং তখনই তাঁর কিছু কিছু রচনা প্রকাশিত হয়। তার বিড়াল যদি কাছে বসে পারিং করে, তাহলে বুঝতে হবে লেখা ভালো হচ্ছে। আর যদি চুপচাপ থাকে, তাহলে তার লেখা বিড়ালের পছন্দ নয়। বিড়াল কাছে নিয়ে লিখতেন।
পাবলো পিকাসোর (১৮৮১-১৯৭৩) : পাবলো রুইজ ই পিকাসো (পুরা নাম) যিনি পাবলো পিকাসো হিসেবে পরিচিত, ছিলেন একজন স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, মৃৎশিল্পী, মঞ্চ নকশাকারী, কবি এবং নাট্যকার। বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী শিল্পী হিসেবে তিনি কিউবিস্ট আন্দোলনের সহ-পতিষ্ঠাতা, গঠনকৃত ভাস্কর্যের উদ্ভাবন, কোলাজের সহ-উদ্ভাবন, এবং চিত্রশৈলীর বিস্তৃত ভিন্নতার কারণে অধিক পরিচিতি লাভ করেন। তার বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে প্রোটো-কিউবিস্ট লেস ডেমোইসেরেস ডি’আভিগনন (১৯০৭) এবং স্প্যানের গৃহ যুদ্ধের বিরুদ্ধে আঁকা গের্নিকা (১৯৩৭)। তিনি নাকি কোনোদিন কোনো পুরনো জিনিস ফেলে দিতেন না। তিনি মনে করতেন, এতে তার অস্তিত্বের কিছু অংশ চলে যাবে। পুরনো জিনিসের পাহাড় জমেছিল তার বাড়িতে। যেগুলো পরে নিলামে বিক্রি হয়।
সালভাডোর ডালি (১৯০৪-১৯৮৯) : সালভাদোর ডোমিঙ্গো ফেলিপি জেসিন্তো দালি ই দোমেনেখ যিনি সালভাদোর দালি হিসেবে পরিচিত, ছিলেন একজন খ্যাতিমান স্পেনীয় পরাবাস্তববাদী (Surrealist) চিত্রকর। সঙ্গে রাখতেন বিশেষ ধাতুতে তৈরি একটা ম্যাজিক ওয়ান্ড। মাঝেমধ্যেই সেটা চারপাশে ঘোরাতেন। মনে করতেন, এতে চারপাশে কোনো অশুভ কিছু ছায়া ফেলবে না। তিনি তো এমনিতেই বদ্ধপাগল ছিলেন মনে হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারতেন না বলে শুনেছি। আফিম না পেলে শরৎচন্দ্র লিখতেও পারতেন না। হাজার হাজার কাপ চা আর পান-জর্দা না পেলে এত গান লিখতে পারতেন না কাজী নজরুল ইসলাম।
আমরা ব্যক্তিগত কিংবা সমাজ বলুক কেউ না কেউ কিছু বস্তুর উপর প্রচণ্ড অন্ধবিশ্বাসে লিপ্ত হয়ে পড়ি। যা আমরা কোনমতে আমাদের জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারি না। যেন মায়ায় আচ্ছন্ন ভরে আছে।
কিন্তু কথা হলো, এই কুসংস্কার কিংবা মানুষের ভয়ংকর অভ্যাসগুলোর জন্য তারা কতটুকুইবা উপকৃত হয়। আমাদের বাড়িতে হপ্তায় হপ্তায় মিলাদ পড়িও বাড়ির বালামুসিবতের শেষ নাই।
তাহলে কেন আমরা এই অভ্যাসগুলো মনের ভিতর লালিত করি? কেন??
তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, সমাকাল (০৭/০৯/১৮)
ছবিঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:২৬