somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনন্ত জলিল ইতিকাব্য।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনন্ত জলিল।এই ভদ্রলোকের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করার ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না। আজ ফেইসবুক এ তাঁকে সাপোর্ট করে একটা পেজ দেখলাম। কৌতুহল বশতঃ সেই পেজ এ ঢুকে আনিসুল হক সাহেবের একটি লেখা পড়ে আমিও কিছু না লিখে থাকতে পারলাম না। আমার লেখাটি কোন ব্যক্তি বা সংগঠনকে হেয় করার উদ্দ্যেশ্যে নয়। এটি আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এতে কেউ মনঃক্ষুন্ন হয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
আসল কথায় আসি। জনাব আনিসুল হক বলেছেন, কেউ কোথাও বৌ নিয়ে খেতে গেলে সেখানে যদি তার প্রতি অশালীন আচরণ করা হয় তাহলে মেজাজ খারাপ হবারই কথা। এটা কোনো ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে না। খুবই সত্য কথা। উত্ত্যক্তকারী লোকটির পরিচয় না জানলেও তার সিভিক সেন্স নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু এখানে কয়েকটি কথা আছে। এই লোকটি কেন অনন্ত জলিল কে কটাক্ষ করে মন্তব্য করল? উত্তর পরে দিচ্ছি। আগে অনন্ত জলিলের কিছু আচরন এবং আনিসুল হক সাহেবের কিছু যুক্তির প্রতি আলোকপাত করি।
একজন সুপার স্টার এর অনেক গুলো গুনাবলির মধ্যে শুদ্ধ উচ্চারন অন্যতম। অনেকগুলো বললাম এই জন্য যে, সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভাল সিনেমা তখনই দর্শককে আনন্দ দিবে যখন তা দেখতে সুন্দর হবে এবং একই সাথে শ্রুতিমধুর হবে। সিনেমাটি তৈরি করতে কত টাকা খরচ করা হয়েছে এটি দর্শকদের কাছে এবং সমালোচকদের কাছে খুবই সামান্য একটা ব্যাপার।সিনেমা তো আর মুকাভিনয় না যে শ্রবণ করার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ না। তাহলে তো অশ্রাব্য গালিগালাজে পরিপূর্ণ বাংলা সিনেমা দেখতেও কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।কাজেই শুদ্ধ উচ্চারন একটা গুরুত্ব বহন করে এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই।
বলতে পারেন সবাই কি শুদ্ধ করে কথা বলে নাকি! সত্য কথা। সবাই শুদ্ধ করে কথা বলতে পারে না, কিংবা পারলেও সব সময় বলেনা। আনিসুল হক সাহেব ইংরাজী উচ্চারনের কথা বলেছেন ' ইংরেজিভাষীরা ‘ঘানা’ বলতে পারে না, ‘গানা’ই বলবে, যেমন ওরা ঢাকাকে ‘ডাকা’ই বলবে, আপনি যতই বানান বদলান না কেন। ওরা গোস্ট বলে, ঘোস্ট নয়।' সত্যিই তাই। এক এক দেশের মানুষদের ইংরাজী বলার উচ্চারন একেক রকম। আমার বিভিন্ন দেশে ঘোরার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি তাই জেনেছি। তবে এদের মধ্যে কোন জাতির ইংরাজী উচ্চারন যে শুদ্ধ তা আজও আমার বোধগম্য হয়নি। এমনকি আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে শিক্ষালাভের পরও অনেক ইংরেজী শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারন করতে পারিনা। কাজেই অনন্ত জলিল যদি সঠিকভাবে ইংরেজী বলতে না পারে তাতে দোষ দেয়ার কিছুই নেই অন্ততঃ আমি সেই যোগ্যতা রাখিনা এবং এটা এও প্রমান করেনা যে, সে গ্রেট ব্রিটেন এর ডিগ্রীধারী নয়।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা হচ্ছে, অনন্ত জলিল নিজেও খুব ভাল করেই জানেন যে তার ইংরেজীর দৌড় কত! এরপরও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইংরেজী বলার চেষ্টা করাটাই তার বড় ভুল। সে কত বড় সুপারস্টার সে প্রসঙ্গে যাব না। কিন্তু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসাবে তার কথার সমালোচনা হবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা তার একেবারেই নেই। বুদ্ধিমান হলে সে চেষ্টা করত যতটা সম্ভব কম সমালোচনার জন্ম দিতে, এবং সেগুলো মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে। অথচ তা না করে নিজে ভুল ইংরেজী বলছে জেনেও উল্টা সকল দর্শক-শ্রোতার কানে সমস্যা আছে বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছে। সকল দর্শক-শ্রোতা বললাম এই কারনে, যে, আজ পর্যন্ত কোন ব্লগেই আমি একজনও পাইনি (আনিসুল হক সহ) যে কিনা বলেছেন যে অনন্ত জলিল শুদ্ধ করে কথা বলেছেন। তাহলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, অনন্ত জলিলই দর্শক-শ্রোতাদের অপমানজনক কথা বলেছেন, যার জন্য তিনি কখনই ক্ষমা চাননি। উপরন্ত গ্রেট ব্রিটেনের ডিগ্রীধারী বলে নিজের ইংরেজী ভুল হতে পারেনা দাবী করেছেন। বলা বাহুল্য, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে আমি দেখেছি এক কক্ষ বিশিষ্ট্য নাম সর্বস্ব বহু কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়, মূলতঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা হতে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আগতরাই যাদের শিক্ষার্থী। এইসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একটি সময় স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। কাজেই যুক্তরাজ্যে থাকলেই যে, তার ইংরেজী বাঙ্গালীদের চেয়ে ভাল হবে এমন নয়। সেটা বোঝার মত শিক্ষা নেই বলেই হয়ত অনন্ত জলিল দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এমন ঔদ্ধ্যত্ব দেখাতে পেরেছেন। এবং ক্রমাগত নিজেকে সঠিক এবং বাংলাদেশের সকল শিক্ষিত ব্যক্তির শিক্ষাকে ভুল প্রমান করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এই ভাবেই নিজেকে জাতীয় সুপারস্টার জোকারে পরিনত করেছেন।অনন্ত জলিল কে নিয়ে পাবলিক রিঅ্যাকশন তাই হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং এজন্য অন্য কেউ নয় বরং তিনি নিজেই দায়ী। কখনও হয়ত হাসি-ঠাট্টার বহিঃপ্রকাশটা একটু বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে যায়। যেমনটা হয়ে ছিল পিৎজা হাট এ।এক্ষেত্রে নিরবে স্থান ত্যাগ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হত। কিন্তু তিনি বাজে ভাবে রিঅ্যাক্ট করেছেন। তাকে দোষ দিব না।রাগের মাথায় তিনি তা করেছেন এবং পরবর্তীতে ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন।
আমি পিৎজা হাট্ এর সেই ক্লিপটি দেখেছি। সেখানেও তিনি নিজেকে বারবার সঠিক বলে প্রমানের চেষ্টা করছিলেন।

পিৎজা হাটের ঘটনাটাকে অ্যাডাম টিজ হিসাবে ধরা যায় বলে আমি মনে করিনা। একজন পাবলিক ফিগারকে নিয়ে সমালোচনা হবেই। বহিঃপ্রকাশটা খারাপ ছিল মানছি। কিন্তু বর্ষার সেই ব্যক্তিতে প্লেট ছুড়ে মারা (মতান্তরে চড় মারা) কে কোন ভাবেই সমর্থন করা সমীচিন বলে মনে করিনা। কেননা, অশালীনতার শুরুটা তারাই করেছে বিভিন্ন মিডিয়াতে দর্শক-শ্রোতাদের কানে সমস্যা আছে বলে।অনন্ত জলিল বিভিন্ন সময় কটাক্ষের শিকার হন একারনেই।

তবে আমি আনিসুল হক সাহেবের একটি কথার সাথে একমত। মানুষকে অপমান না করলেই কি নয়! সমালোচনা করাটা ভাল, তবে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিরা সবসময় অপরের মর্যাদা রক্ষা করেই সমালোচনা করেন। অভিজাত রেস্তোরায় খাবার সামর্থ্য থাকা আর আত্মমর্যাদা থাকাটা অবশ্য এক নয়।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×