আজ একজন স্বনাম ধন্য ব্লগারের ফেসবুক স্ট্যাটাস এ দেখলাম তিনি অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী এবং গায়ক হায়দার হোসেন কে ছাগু উপাধী দিয়েছেন কেননা তাদেরকে দিগন্ত টিভিতে দেখানো হয়েছে। স্ট্যাটাসটি দেয়ার সাথে সাথেই তার কিছু চ্যালা-চামচা ধুমায়া লাইকান শুরু করল এবং মূহুর্তের মধ্যেই রোকেয়া প্রাচীর প্রাইজ ট্যাগ ঠিক করে ফেলল, হায়দার হোসেনের ১৪ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলল। আবার আধাঘন্টা পরেই স্ট্যাটাস আপডেট, স্ট্যাটাসটি প্রকাশিত হওয়ার পরে এইমাত্র রোকেয়া প্রাচী ফোন করেছিলেন। তিনি জানালেন যে দিগন্তটিভিতে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটি দুই বছর আগের, যেখানে তিনি, ইশিতা এবং হায়দার হোসেন অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু দিগন্ত এবছর এমনভাবে প্রকাশ করেছে যাতে মনে দর্শকদের মনে হয় যে অনুষ্ঠানটি নতুন। সে রোকেয়া প্রাচীকে অভিনন্দনও জানালো। সাথে সাথেই আবার সেই মুরিদরাও তাকে অভিনন্দন জানালো।
এটা ঘটনা। আসুন একটু আলোচনা করি পরিস্থিতিটা নিয়ে। আমরা অনেকেই জানি রোকেয়া প্রাচী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন। যারা জানেন না, তারাও তাকে গনজাগরন মঞ্চের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেতে দেখে থাকবেন। আর হায়দার হোসেনের কথা বলা বাহুল্য। শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উত্তাল গানটি তিনিই গেয়েছেন। তাহলে কোন যুক্তিতে এদেরকে জামাতী পণ্য বানানো হল? এইসব ব্লগারদের হ্যা-তে হ্যা আর না-তে না বলেনা দেখে? এই স্ট্যাটাসটি দেবার আগে কি তার উচিৎ ছিলনা নিশ্চিত হয়ে তারপর কাওকে জামাতিদের গোলাম বানানো?
এই ধরনের ব্লগারদের যখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ-বিপক্ষের মানুষ চিহ্নিত করতে বলা হবে (যেটা ইতিমধ্যে বলা হয়ে গেছে) তখন তাদের করা তালিকার গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু হবে? তারা যে নিজেদের সাথে ভিন্ন মত পোষরকারীদের শায়েস্তা করার জন্য এমন করবেনা তার নিশ্চয়তা কে দেবে? স্পাইডারম্যানের চাচার একটা কথা খুবই গুরুত্বপুর্ণ "with great power comes great responsibility". কিছু ব্লগারদের হাতে আজ সত্যিই অনেক ক্ষমতা। কিন্তু সেই ক্ষমতা ব্যবহার করার যোগ্যতা কি তাদের আছে? একটা দেশ, দেশের মানুষ, এবং তাদের চেতনা নিয়ে ফাজলামো করার অধিকার কারও নেই। এরকম একটা পাবলিক স্ট্যাটাস দেবার পর উচিৎ ছিল প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রর্থানা করার। কারন তার সেই স্ট্যাটাস দেখে আমিও কনফিইজ হয়ে গিয়েছিলাম, ক'দিন আগেই যার গান শুনে আমি উৎসাহিত হয়েছিলাম, সে কিকরে রাজাকারের দালাল একটি চ্যানেলে গান করে। এই ধরনের ব্লগাররাই গলা ফাটাচ্ছে, বিভ্রান্ত হবেন না, করবেন না। আবার তারা নিজেরাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতানা এতটা সস্তা জিনিস না যে, কয়েকটি ব্যক্তির কথাতেই সেটা মিথ্যা হয়ে যাবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোন একটি রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি না, সেই দলের তোষামদি না করলেই যে সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়ে যাবে।
যে ব্লগাররা আন্দোলন পরিচালিত করছে তারা বিভিন্ন সময়ে নিজেরাই নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নাবিদ্ধ করেছে। প্রথমে তারা দ্বায়িত্ব নিয়ে বলল যে, এটা অরাজনৈতিক গণজাগরন, তারপর তারাই বলল যে, রাজনৈতিক না হলে আবার আন্দোলন হয় কিভাবে? তাদের কারো কারো মতে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানী শোষন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে না, বরং ধর্মনিরপেক্ষতার যুদ্ধ ছিল। পুরো ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এরকম, যে আ.লীগ এর অন্ডথলি মুখে নিয়ে পায়ুপথে নাক গুজে থাকতে হবে, তাহলেই আপনি দেশপ্রেমিক। আর যদি বলেন পায়ু থেকে গন্ধ বের হচ্ছে তাহলেই আপনি রাজাকারের বাচ্চা। শাহবাগ আন্দোলন দুইভাগ হবার পেছনে এই ধরনের মানসিকতাই দায়ী। বাংলাদেশ একটি গনপ্রজাতন্ত্রী দেশ। ভিন্ন মত থাকবেই।গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রই তো তাই।৪২ বছর পর জাতি যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক হয়ে এক পতাকাতলে দাঁড়িয়েছিল তখন এই ধরনের কার্যকলাপ করা হলে যদি জাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে তাহলে সে দায় আম জনতার নাকি এই ধরনের ফেমস্লাট ব্লগারদের?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




