somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই ভুবন

১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জ্যোৎস্নার আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ।ডাবগাছের পাতায় আলো চিক চিক করছে।দীপ্ত বেশ উত্তেজনা নিয়েই ছাদে বসে ছিল।কঙ্কার আসার কথা।দুপুরে কঙ্কা চুপিসারে এক টুকরো কাগজ ফেলে দিয়েছিল ওর সামনে।ফেলে দিয়েই দ্রুত চলে যায়।দীপ্ত কুড়িয়ে নেয়,পড়ে-রাত আটটা।ছাদে।কাগজের টুকরোটি পকেট হতে বের করে দীপ্ত।ঘ্রাণ নেয়।কঙ্কার শরীরের গন্ধ লেগে আছে কাগজে।পূথিবীর প্রতিটি মেয়েরই শরীরের গন্ধ আলাদা।দীপ্তর চিন্তার সূত্র ছিঁড়ে যায়।নরম দুটি হাত দীপ্তকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরে দীপ্তকে।দীপ্ত হাত দুটি স্পর্শ করে।পৃথিবীর সব চাইতে সুখী মানুষ মনে হয় দীপ্তর নিজেকে।
-তুমি বুঝতে পেরেছিলে আগেই?
-হ্যাঁ।
দীপ্ত জানায়।
-কিভাবে?
দীপ্ত ঘুরে দাঁড়ায়।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চম্পাবতীকে।দীর্ঘ একটা চুমু খায় চম্পাকে।
-আহ ছাড়ো।জ্যোৎস্না রাত।কেউ দেখে ফেলবে।
আদুরে গলায় চম্পা বলে।
-দেখলেই বা।আমরা তো অবৈধ কিছু করছিনা।
মৃদ গলায় দীপ্ত জানায়।
-ছাদে একা একা কার কথা ভাবছিলে এতক্ষণ?
-কার কথা ভাববো বল?আমার একমাত্র সুন্দরী বউয়ের কথাই ভাবছিলাম।
কথা শেষ করে দীর্ঘ একটি চুম খায় দীপ্ত।চম্পাবতীর শরীর ঝন ঝন করে উঠে।
-বসি।
বলেই চম্পা দীপ্তর কোলে বসে পড়ে।জ্যোৎস্না গলে গলে পড়ছে গাছের পাতায়,উন্মুক্ত ছাদে।চম্পার আদুরে মুখে আর দীপ্তর দৃঢ় শরীরে।জ্যোৎস্নার সাথে সাথে গলে যেতে থাকে চম্পা।
-উঁহুঃ এখানে নয়।রাতে, ঘরে।
চম্পার প্রতিবাদের ধারে কাছেও যায় না দীপ্ত।দীপ্তর আদরে পাগল হয়ে উঠে চম্পা।দুটি অর্ধনগ্ন শরীরে জ্যোৎস্না খেলা করে।

-তুমি আমায় ভালোবাস?
চম্পার প্রশ্নে কি উত্তর দেবে দীপ্ত ভেবে পায় না।ভালোবাসি কথাটি বলার আগেই তো ওদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।এই এক বছরের বিবাহিত জীবনে ও বুঝেই উঠতে পারছে না যে সে চম্পাবতীকে ভালোবাসে কিনা।
-কই উত্তর দিচ্ছোনা যে?
চম্পা আবার প্রশ্ন করে।
-কেন তুমি কি বুঝতে পারোনা?
দীপ্ত বলে।
-আগে আমি ভাবতাম বিয়ের পর আমার বর দীর্ঘ চিঠি লিখবে।আর ঠিক ভর দুপুরে আমি সেই চিঠি পড়বো।আমার সেই আশা আর পূরণ হবার নয়।
-মোবাইল আর ইন্টারনেটের এই যুগে তুমি চিঠি পাবে কোথায়?
হাসতে হাসতে দীপ্ত বলে।

দুইদিন শ্বশুর বাড়িতে কাটিয়ে দীপ্ত ঢাকায় ফিরে যায়।চম্পা আরও কয়েকদিন পাবনায় থাকবে।চম্পার ভাই চম্পাকে নাটোরে রেখে আসবে।ঢাকায় ফিরে আসার পর দীপ্তর কাজে মন বসতে চায় না।অফিস যায় আসে।শুধু চম্পার কথা মনে পড়ে।আর মনে পড়ে চম্পার প্রশ্ন-ভালোবাস আমাকে?একদিন সন্ধ্যায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে।হৃদয় থেকে কোন উত্তর উঠে আসেনা।লেখার টেবিলে গিয়ে বসে।মাউস নিয়ে নড়াচড়া করে।কিন্তু কোন লেখাও আসেনা।যখন কোন বিষয় নিয়ে সে উত্তেজিত থাকে তখন কোন লেখাও আসেনা ওর কাছে।অনেক পুরানো ডায়েরী বের করে।একটি জীর্ণ কাগজের টুকরো বের করে ডায়েরীর ভেতর হতে-“রাত আটটায়।ছাদে”।

শ্বেত পাথরের বারান্দায় ছেলেটি পুতুল খেলছিল।ওর সাথে আরও তিনটি মেয়ে ছিল।একজন ছেলেটির বোন।বাঁকী দুইজন দুই বোন।পাশের ঘররের ভাড়াটিয়ার মেয়ে।রুনু আর ঝুনু।রুনু বড়।ঝুনু ছোট।
-কি রে এত বড় ছেলে মেয়েদের সাথে পুতুল খেলছিস।?জ্জা করেনা তোর?
বড় মামাকে আসতে দেখে বেশ খুশিই হয় দীপ্ত।সে ছুটে ঘরে চলে যায়।মাকে পেয়ে যায় রান্নাঘরে।
-মা,বড় মামা আর দিদা এসেছে।
খবর দিয়েই আবার খেলতে চলে যায়।রুনু দীপ্তর চেয়ে দুই বছরের ছোট।সারাদিন দীপ্তর আশে পাশেই ঘোরাঘুরি করে।একসাথে খেলাধূলা,পুকুরে স্নান করা।সব কিছুই একসাথে।দীপ্ত সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।দীপ্তরা যে বাসায় ভাড়া থাকে সেটি অনেক পুরানো জমিদার বাড়ি।বাড়ি হতে কিছু দূর গেলেই ছোট পুকুর।আশে পাশের সব বাড়ির লোকজনই এই পুকুরে স্নান করতে আসে।দীপ্ত রুনু আর ঝুনু দুই বোনকেই সাঁতার শিখিয়েছে এই পুকুরেয়।আর এভাবেই বেশ কয়েকটি বছর কেটে যায়।রুনু যতই বড় হতে থাকে ততই ওর পৃথিবী ছোট হয়ে আসতে থাকে।সে আগের মত আর পুতুল খেলতে পারেনা।দীপ্তর কাছে যেতে পারেনা।ছেলেদের সাথে ওর মেশা নিষেধ।

একদিন ছাদের ঘরে দীপ্ত গল্পের বই পড়ছিল।এমন সময় রুনু এক বালতি কাপড় নিয়ে ছাদে উঠে।কাপড় মেল দেবে।দীপ্তকে দেখেও কোন কথা বলেনা।ছাদে কাপড় মেলতে থাকে।দীপ্তর মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।রুনু এখন যে কেন আর আগের মত ওর সাথে কথা বলেনা ও বুঝতে পারেনা।কাপড় মেলা শেষ হলে রুনু বালতি নিয়ে ওর পাশ দিয়ে চলে যায়।চলে যাবার সময় একটি ভাঁজ করা কাগজ দীপ্তর কোলে ফেলে দিয়ে যায়।দীপ্ত কাগজ খুলে পড়ে।তাতে লেখা রয়েছে-খুব, খুব ভালোবাসি তোমায়।উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম।দীপ্তর পৃথিবী দুলে ওঠে।সে তরতর করে ছাদ থেকে নেমে আসে।কি লিখবে বুঝে উঠতেই পারেনা।আর এভাবেই দুই দিন পার হয়ে যায়।দীপ্তকে দেখলেই রুনু উৎসুকভাবে তাকিয়ে থাকে।চোখাচোখি হতেই দীপ্তই আগে চোখ নামিয়ে নেয়।একদিন রাতে সে চিঠি লিখতে বসে।অনেক ভেবে সে লেখে,তুমি আমার জীবনে রুপকথার রাজকুমারী।তুমি আমার কঙ্কাবতী।তোমায় আমি প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসি।প্রথম কয়েক মাস চিঠি আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।এরপর শুরু হয় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা সাক্ষাৎ।দীপ্তর মা একদিন বিষয়টি ধরে ফেলেন।
-বাবা,রুনুরা মুসলিম।এই সময়টা খুব আবেগের।তুমি আমাদের একমাত্র ছেলে।যা করবে ভেবে কর।
মায়ের কথা শুনে দীপ্তর মুখ লাল হয়ে যায়।

কি সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে চম্পা।অল্প আলোয় খুব মায়াবী লাগছে ওকে।ঘুমন্ত চম্পাকে বুকের মধ্যে টেনে নেয় দীপ্ত।তারপর এক সময় নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।

-তুমি আমাকে ভুলবেনাতো কোনদিন?
কঙ্কা নীচু স্বরে দীপ্তকে বলে।
-না কোনদিন ভুলবোনা।
দীপ্তর ঘুম ভেঙ্গে যায়।ওর বুকের মধ্যে চম্পা নিঃশিন্তে ঘুমাচ্ছে।সে আলতো করে চুমু খায় চম্পার কপালে।চম্পা নড়ে চড়ে জড়িয়ে ধরে দীপ্তকে।

পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে চম্পা জানায়,দীপ্ত ঘুমের মধ্যে কঙ্কা কঙ্কা বলে কউকে ডাকছিল।দীপ্ত জানায় ও যে নতুন গল্পটা লিখবে বলে ঠিক করেছে,সেই গল্পের নায়িকা হবে কঙ্কা।
-আমাকে নিয়ে গল্প লিখবে একটা?
চম্পার কথায় হেসে ফেলে দীপ্ত।
-আচ্ছা গল্প না হোক।নিদেন পক্ষে একটা কবিতা।
-লিখবো লিখবো।
হাসতে হাসতে দীপ্ত বলে।
-হ্যাঁ শুধু আমাকে নিয়েই লিখবে।আমি চম্পাও নই আবার রুনুও নই।আমার গল্প আমার মত করেই লিখবে।
এ কথা বলেই চম্পা খিল খিল করে হেসে ফেলে।হাসি আর থামতেই চায়না।দীপ্ত অবাক হয়ে চম্পাবতীর হাসি দেখতে থাকে।

“ও কঙ্কা,এখন তুমি আর আমার নও।হারিয়ে যাওয়া সময়ের মতই
কিম্বা শুকিয়ে যাওয়া নদীর মতই
তুমি শুধু স্মৃতি।
এখন আমি বেঁচে আছি বর্তমানের ঘরে
পাক ধরা চুল,ঈষৎ চর্বিজমা মুখমন্ডল নিয়ে।

স্বপ্নেই তুমি আসো।যদিও জানি এমন স্বপ্ন মানায় না আর এখন
তাজা ফুলের গন্ধ শুধু বর্তমানকে ঘিরে
বাঁসি ফুলের ঘ্রান কে চায় বল?
আমি হয়তো বেঁচে থাকবো আরও কিছু বছর
আমি হয়তো বেঁচে থাকবো আরও কিছু সুখ,আরও কিছু দুঃখ নিয়ে।

তুমি ভাল আছো কঙ্কা”?

১১/০৫/২০১৯


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×