somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাছ চাষে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের অনুপাত ও ব্লুম

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যারা পুকুরে মাছ চাষ করি তারা Bloom শব্দটির সাথে পরিচিত।সাধারণত ফাইটোপ্লাকংটনের আধিক্য হলে আমরা ব্লুম বলে থাকি।কেন ব্লুম হয়? এটি উপকারী না অপকারী? বৈষয়িক উষ্ণতা,পুকুরের জলে অত্যাধিক পুষ্টি উপাদান,রাসায়নিক ও জৈব সারের অধিক ব্যবহার,ঝড়-বৃষ্টি,কৃত্রিম খাদ্য,পুকুরের তলদেশে অক্সিজেনের স্বল্পতা এই সকল বিষয়ের উপর ফাইটোপ্লাংকটনের আধিক্য নির্ভরশীল।

ফাইটোপ্লাংকটনের ব্লুম দুই ধরনের হতে পারে ভাল ফাইটোপ্লাংকটনের ব্লুম আর ক্ষতিকর ফাইটোপ্লাংকটনের ব্লুম।যে ধরণের ফাইটোপ্লাংকটন হোক না কেন, ব্লুম সব সময়ই মাছ চাষের জন্যে ক্ষতিককর।কারণ ব্লুম এর নীচে Dead Zone তৈরি হয়।
খারাপ ফাইটোপ্লাংটনের মধ্যে রয়েছে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া, ডায়নোফ্লাজিলেট ইত্যাদি। সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার কয়েকটি প্রজাতি আমাদের পুকুরে দেখা যায়- Microcystis,Dolispermum (Anabaena),Cylindrospermopsis,Planktothrix আর Aphanizomenon। এদের মধ্যে কার্বন-ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পেলে Anabaena এর আধিক্য ঘটে।
ব্লুম এর অন্যান্য বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করবোনা।আজ পুকুরের নাইট্রোজেন (N) ও ফসফরাসের অনুপাত এবং ব্লুম সৃষ্টিতে এর ভূমিকা কি তা জানবো।

পুকুরের জলে N সাধারণত এমোনিয়াম নাইট্রোজেন,এমোনিয়া নাইট্রোজেন,নাইট্রেট নাইট্রোজেন,নাইট্রাইট নাইট্রোজেন,দ্রবিভূত জৈব নাইট্রোজেন এবং পার্টিক্যাল নাইট্রোজেন রুপে বিদ্যমান থাকে।আর ফসফরাস সাধারণত ফসফেট রুপে এবং দ্রবিভূত রিয়্যাক্টিভ ফসফরাস(SRP) রুপে বিদ্যমান থাকে। SRP মাছের সরাসরি কোন কাজে আসেনা।
ফসফরাস জলজ ইকোসিষ্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।ফাইটোপ্লাংকটনের গ্রোথই আসবেনা যদি ফসফরাস কমে যায় বা আবদ্ধ অবস্থায় থাকে।এটি বিবেচ্য নয় যে আপনি কতটুকু নাইট্রোজেন পুকুরে প্রয়োগ করেছেন।অতিরিক্ত ফসফরাস ক্ষতিকর এমোনিয়াম নাইট্রোজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

পুকুরে ভাল মানের ফাইটোপ্লাংকটনের গ্রোথের জন্যে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের অনুপাত ৪:১ থেকে ২০:১ শ্রেয়।আপনার জলের রঙ আসছেনা আপনি ইউরিয়া,ডিএবি অথবা টিএসপি প্রয়োগ করছেন।দুইটি ঘটনা তখন ঘটতে পারে।ব্লুম হতে পারে কিম্বা পুকুরের জলে কোন রঙই আসেনি।আবার এমন ঘটনা ঘটছে তাপমাত্রা বেশী থাকার পর পুকুরে ব্লুম এসে গিয়েছে।এক্ষেত্রে চাষী সাধারণত খাদ্যকে দোষারোপ করে।বিষয়টি তেমন নয়।তবে কাছাকাছি। আপনার পুকুরের নাইট্রোজেন-ফসফরাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্যে ব্লুম এসেছে।
এবার তাপ প্রবাহের সময় নাটোরের বেশ কয়েকটি পুকুরে আমি ব্লুম দেখেছি। এদের মধ্যে একটি পুকুরে ক্লোরেলার ব্লুম (হোসেন এগ্রোর ৩ নং পুকুর) আর বাঁকী পুকুরগুলিতে সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার ব্লুম ছিল।আর সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে মাইক্রোসিসটিস ছিল প্রধান।মাইক্রোসিসটিস নিউরো ও হেপাটো দুই ধরণের টক্সিনই নিঃসরণ করে।যা মাছ চাষ ও পরিবেশের জন্যে বিপর্যয়।
কেন মাইক্রোসিসটিসের ব্লুম হলো। নাটোরের মাটিতে ফসফরাসের মাত্রা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশী।শুধু নাটোর নয় বৃহত্তর রাজশাহীর মাটিতে ফসফরাস তুলনামূলক বেশী।এখন যে বিষয়টি হয়েছে তাহলো ক্রমাগত তাপপ্রবাহের সময় পুকুরের তলদেশে অক্সিজেনের স্বল্পতা ছিল ফলে বেনথিক জোন (পুকুরের তলদেশ) থেকে ফসফরাস বেশী বেশী রিলিজ হয়েছে।ফলে নাইট্রোজেন-ফসফরাসের অনুপাত বদলে গিয়েছে।ফসফরাসের আধিক্য ঘটেছে।মাইক্রোসিসটিসের ব্লুম হয়েছে।

সুতরাং নাইট্রোজেন-ফসফরাসের অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।বাণিজ্যিক মাছ চাষে খাদ্যের খরচ কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা অপরিসীম।

নাটোর
০৬/১০/২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×