মাছ সাধারণত দুইটি উৎস হতে খাবার পেয়ে থাকে।প্রথমত প্রাকৃতিক খাবার এবং দ্বিতীয়ত কৃত্রিম খাবার। প্রাকৃতিক খাবারের মধ্যে আছে জুপ্লাংটন ও ফাইটোপ্লাংকটন।আর কৃত্রিম খাবারের মধ্যে আছে বিভিন্ন কোম্পানী এর খাবার যা সাধারণত ভাসা,ডুবন্ত ও মেস হয়ে থাকে।অপরদিকে কৃষক নিজেও বানিয়ে পুকুরে প্রদান করে থাকে।
আমাদের মধ্যে যারা বাংলা মাছ চাষ করে থাকে তাদের অনেকের এমন ধারণা আছে যে মাছ চাষে কৃত্রিম খাদ্যে ২২%-২৫% প্রোটিন থাকলেই চলে।বেশী প্রোটিন যুক্ত খাবার মাছ হজম করতে পারেনা।এই ধারণাটি ভুল অথবা আংশিক সত্য।যে পুকুরের জলে ভাল মানের প্লাংকটন থাকে সেই পুকুরে ২০%-২৫% প্রোটিন যুক্ত কৃত্রিম খাবার সরবরাহ করলেই মাছের উৎপাদন ভাল হয়।যদি প্লাংকটনের মান ভাল না থাকে, তবে? অনেক মাছ চাষী অভিযোগ করেন যে মাছ কৃত্রিম খাদ্য বেশী খাচ্ছে কিন্তু সেই হারে উৎপাদন বাড়ছে না। এই ক্ষেত্রে খাদ্যের মানের পাশাপাশি পুকুরের প্লাংকটনের মানও উৎপাদন কম হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।প্লাংকটনের মান ভাল না থাকলে বাংলা মাছের ( ৭০০ গ্রাম-১০০০ গ্রাম) ক্ষেত্রে ৩০% CP যুক্ত খাবার সরবরাহ করাই উত্তম।এই ক্ষেত্রে খাবার কম লাগে।
পুকুর গাড় সবুজ থাকলেই যে ভাল মানের প্লাংকটন আছে ধারণাটি সঠিক নাও হতে পারে।যেমন সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থাকলেও তো পুকুরের জল সবুজ বর্ণের হয়। কিন্তু এর আধিক্যে মাছ উৎপাদনে ধ্বস নামবে। কারণ সায়ানো ব্যাক্টেরিয়া নিউরো টক্সিন ও হেপাটো টক্সিন নিঃসরণ করে। ফলে মাছ মারা যায় ও খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে বা বন্ধ করে দেয়।
ফাইটোপ্লাংকটনের মধ্যে ডায়াটম,ক্লোরেলা,পেডিয়েস্ট্রাম ইত্যাদি বেশী থাকলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কৃত্রিম খাদ্য কম লাগে।বিশেষ করে পেডিয়েস্ট্রাম রুই এবং সিলভারকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে সহযোগিতা করে।জুপ্লাংটনের মধ্যে আছে কপিপড,ডাফনিয়া,রটিফারস ইত্যাদী। এদের শুষ্ক ভিত্তিতে প্রোটিন থাকে ৪২%-৫৭% যা কিনা কেনা খাদ্যেও নেই।আমাদের নাটোরের মৎস্য চাষীদের মধ্যে অদ্ভুদ একটি ধারনা আছে ডাফনিয়া,কপিপড জলে দেখলেই পুকুরে বালাইনাশক মেরে পোকা মেরে ফেলে।এত উপকারী পোকা মেরে তারা নিজের অজান্তেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পোকা মারতে নিষেধ করলে বলে ওরা অক্সিজেন টানছে,এছাড়া উকুনের সমস্যা হতে পারে।মাছের কানে সমস্যা হয়। উকুন হলে উকুন মারুন।আর উপকারী পোকা বেশী হলে খাদ্য কমিয়ে দিন, মাছ ওই জুপ্লাংকটন খেয়ে নেবে।এবার নাটোরের ছাতনীতে আমরা একটি ৩০ বিঘার পুকুরে মাছ ছাড়ার পর এক মাস খেতে দেই নাই।মাছের বৃদ্ধি এতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
পুকুরে প্লাংকটন স্ট্যাটাস সব সময় এক থাকেনা।এ বছর যখন হিট প্রবাহ চলছিল তখন কিছু পুকুরে কাতলের গ্রোথ কম ছিল এমনকি রুইয়েরও।প্লাংকটন স্ট্যাটাস ওই সব পুকুরে গত বছরের তুলনায় খারাপ ছিল।যেমন নেপালদীঘিতে ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে কপিপডের মাত্রা অনেক কম।
সাধারণত মাছ চাষে আমরা শুধু প্রোটিন নিয়েই চিন্তা করি।এমাইনো এসিড সিকোয়েন্স,ভিটামিনস,মিনারেলস নিয়ে ভাবিনা।ফাইবার কন্টেন্ট নিয়ে ভাবিনা।যেমন রুই যদি ১ কেজি ওজনের চাষ করেন তবে আপনার খাদ্যে আয়রন থাকতে হবে ৮৩ মিলিগ্রাম/কেজি,ভিটামিন-C থাকতে হবে ৯৮ মিলিগ্রাম/কেজি,কোলিন ৯৭৮ মিলিগ্রাম/কেজি।আপনার কেনা খাদ্য এই শর্ত পূরণ করে?
আবহাওয়া দিন দিন বিরুপ হচ্ছে ফলে লাভজনক কৃষি উৎপাদনে আমাদের আরও স্মার্ট হতে হবে।
নাটোর
০৪/১০/২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




