পাকিস্তানের ২৩ বছরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মাত্র ৪৭ বার হারতাল ডেকেছিলেন। তাও যাতে কারো জান ও মালের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে। সেই আন্দোলনে বিশাল জনগণের সম্পৃক্ততার কথা আমরা সবাই জানি। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লোক হয়েছিল ৩০ লক্ষের বেশি। একাধিক সামরিক হেলিকপ্টার ময়দানে টহল দিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল শ্রোতাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন তাঁর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ছিল মাত্র ১৪ হাজার টাকা। ৩২ নম্বরের জমিটা তিনি চাকরি সুবাদে এক কম্পানির কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি তার বাবাকে পৈত্রিক তিনশ বিঘা জমি বর্গদারদের দান করে দিতে বলেছিলেন। এই হল বঙ্গবন্ধু। যাঁর ব্যক্তিচরিত্রের খুঁত ধরার জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা অধিদপ্তর সদা তৎপর থাকত। যাতে একটা ইস্যু তৈরি করে জনগণকে ভুল বোঝানো যায়। তাঁর ব্যক্তিচরিত্রের কোনো ত্রুটি খুঁজে বের করতে ওরা ব্যর্থ হয়েছে বার বার।
আজকের রাজনীতির সাথে একবার তুলনা করে দেখুন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির-- আকাশ জমিন ফারাক।
বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের একটাই ত্রুটি ছিল। তিনি বাংলার মানুষ ভীষণ ভালবাসতেন। ৭৫ এর মার্চ মাস থেকে দেশি-বিদেশি গোয়েন্দারা তাঁকে বার বার বলেছে, ‘আপনার জীবন নাশের আশঙ্কা আছে।’ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলতেন,‘যাঁদের আমি এত ভালবাসি তারা আমাকে হত্যা করতে পারে না।’ যখন তাঁকে হত্যা করতে আসে ঘাতকরা, তাঁর বাড়ির দেয়াল ঘেসা টিনের ঘরে ৭জন দেহরক্ষি থাকত। তাদের না ছিল উন্নত অস্ত্র না ছিল প্রশিক্ষণ। বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে ইশারা করে তাদের বলেন, ‘তোমরা নিজেদের জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে যাও। ওদের সাথে তোমরা পেরে উঠবে না, অহেতুক মারা পড়বে।’ তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু প্রধান দেহরক্ষী কর্ণেল জামিল বঙ্গবন্ধুর এই আদেশ মানতে আস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন যে বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার চেষ্টায় জীবন দিতেই তিনি গর্ববোধ করবেন। এবং তিনি শহীদ হন। কর্ণেল জামিল বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার ব্যাপারে কখনো সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি বার বার বঙ্গবন্ধুকে গণভবনে থাকার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নেয় নি।
আজ বঙ্গবন্ধুর ৯৬ তম জন্মদিন। আজ এসব কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে। জন্মদিন আনন্দের কিন্তু বাঙালির জন্য জাতির পিতার জন্মদিন বেদনার।