একটি ছেলে মাতৃ ভাষায় কথা বলার দাবীতে রাজপথে বর হল। মুখে একটি উচ্চারণ, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা
চাই’। ঠা ঠা গুলি চলল ফাল্গুনের বিকেলে। অতঃপর ছেলেটি একটি শহিদ মিনার হয়ে গেল। এটি
কোনো রূপ কথার গল্প না। এ এক সত্য ইতিহাস। এই সত্য বদলে দিয়েছিল বাঙালির ইতিহাস।
ভিরু বাঙালির তকমা ভুলে তারা হয়ে উঠেছিল সাহসী যোদ্ধা। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে আমাদের শহিদ মিনার। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবীতে মেডিকেল
কলেজ প্রাঙ্গণে বের হওয়া শান্ত মিছিলে গুলি চালায় পাকিস্তান সরকারের দালালেরা। এতে সালাম, বরকত,
রফিক, জাব্বর, শফিউর সহ অনেকে প্রাণ হারায়। তাদের কেউছিল মেধাবী ছাত্র, কেউ ছিল সামান্য
কেরানি কেউবা একেবারে গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের দোষছিল একটাই-- তারা মায়ের ভাষার কথা
বলতে চেয়েছিল। ২২ তারিখ মেডিকেল কলেজেরে সেই রক্তাক্ত প্রাঙ্গণে শহিদ মিনার উদ্বোধন করেন
শহিদ শফিউরের পিতা। মিনারটি ছিল ১০ ফিট উঁচু ৬ ফিট চওড়া। ২৬ তারিখ পুলিশ ও
সেনাবাহিনী শহিদমিনারটি ভেঙে ফেলে। ১৯৫৭ সালে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেলে আবার শহিদ
মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। জনৈক মন্ত্রীর এটির ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপনের কথা থাকলেও
জনগণ, ছাত্র সমাজ তা মেনে নেয়নি। এটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম
শহীদ রিক্সাচলক আওয়ালের ছয় বছরের কন্যা বসিরন। শহিদ মিনারের মূল নকশা চিত্রশিল্পী হামিদুর
রহমানের। সে নকশায় কিছু সংস্কার করে ভাস্কর নভেরা আহমেদের তত্ত্বাবধানে ১৯৬৩ সালে শহীদ
মিনারের কাজ শেষ হয়। শহিদ রবকতের মা হাসিনা বেগম এটির উদ্বোধন করেন। এই শহিদ মিনার
আমাদের অনুপ্রেরণা। জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২০