গেলো কিছুদিন ধরে বিশেষ কিছু ইস্যুতে আমরা মত পার্থক্য ভুলে ধর্ম বর্ণের উর্ধ্বে উঠে সংহতি প্রকাশ করছি। তবে তা খন্ড খন্ড ভাবে; যে যার ব্যানারে। ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন কোন পক্ষকে বাধাগ্ৰস্থ হতে হয়েছে; অপরদিকে কারো কারো ক্ষেত্রে মিলছে অনুকূল পরিবেশ।
আসলে 'সংহতি' জিনিসটা কি! সমাজবিজ্ঞানী এবং দার্শনিকরা তা কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী মাইল ডুরখাইম বলেছেন, অগণিত ক্রিয়াকলাপ বিকাশের জন্য সংহতি দরকার; এ জন্য সহযোগিতা করতে হবে, সমর্থন দিতে হবে। সে হিসাবে বলা যায়, একে অপরের প্রয়োজনে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে ছাড়াও শক্তি ও সামর্থ্যের যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে এক কাতারে সামিল হওয়া বাঞ্ছনীয়।
১৩৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বিখ্যাত বই "The Muqaddimah" এর লেখক, সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে খালদুন দর্শনশাস্ত্রে "সামাজিক সংহতি তত্ত্ব" নামে দারুণ এক ধারণা তুলে ধরেন। এটিকে আমরা নৈকট্য, দৃঢ় যোগ, সঙ্ঘ, ঘনীভূত, সংহতি নামক অভিন্ন বিষয়ের রিফর্ম বলতে পারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তিনি তাঁর তত্ত্বে সংহতির গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা এতটা যৌক্তিক ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে, পরবর্তীতে দেখা গেলো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুগে যুগে চলতে থাকা শাসন ব্যবস্থার একচ্ছত্র আধিপত্য চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যেতে লাগলো তাঁর তত্ত্বের কার্যকারিতায়।
বিশ্বজুড়ে অধিকার আদায়ের প্রশ্নে মানুষ এখনো ইবনে খালদুনের বাতলে দেয়া পথ স্মরণ করে।
ইবনে খালদুনের তত্ত্বটি ফলদায়ক হওয়ার পেছনে যে হিডেন রিয়েলিটি রয়েছে; সেটিও তিনি তাঁর লেখায় ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "বিত্ত-বৈভব ও আয়েশী সংস্কৃতি মানুষের পূর্ববর্তী কর্মচঞ্চল জীবনকে স্থবির করে দেয়।'
ভারতীয় দার্শনিক জিদু কৃষ্ণমূর্তি সংহতি প্রকাশের বিষয়টিকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি আরও গভীর ভাবে চিন্তা করে সংহতির পরবর্তী বাস্তবতা বিবেচনা করে বোঝাতে চেয়েছেন; সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তির সচেতনতায় পারে বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা জাগিয়ে তুলতে।
বিশ্বের একাধিক দার্শনিকের মতবাদ বিশ্লেষণ করে পরিশেষে দেখা গেলো একমাত্র সামাজিক সংহতি দ্ধারা ব্যক্তি জীবনকে পরিশুদ্ধ করে তোলার পাশাপাশি একে অপরের সম্পর্ক মজবুত করে তোলা যায়, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পায় এবং অধিকার আদায় সুনিশ্চিত হয়। পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অপরাধ নির্মূলে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে সামাজিক সংহতি। এটি মানুষের নীতি নৈতিকতার ক্ষেত্রে আপোষহীন মনোবৃত্তির প্রসার ঘটায়। মোটকথা সামাজ ব্যবস্থার কল্যাণে সামাজিক সংহতির কোন বিকল্প নেই।
সামাজিক সংহতি গড়ে তোলা
আমাদের নাগরিক কর্তব্য।