somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দোয়া করবেন,সকল সাদাকাপড় পরিহিত পরপারের মায়েদের জন্যে

২৭ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খড়খড়ে রোদ।
হাতে কিছু ঈদের শপিং।
মনের কোনে একধরনের বিষন্নতা কাজ করছে।
কারো জন্যে কিছু কেনা মিস করিনি তো।না,সব ঠিকঠাক আছে।
ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাচ্ছি।
এবার হয়ত বেশ কিছুদিন ছুটি কাটাবো।
একাকিত্বের রাজধানীতে থাকতে থাকতে জীবন টা কেমন যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।যদিও বাড়িতে গেলে একাকিত্ব আরো ঘিরে ধরবে।তারপরেও নিজের ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় অসংখ্য স্মৃতি জমা পড়ে আছে।আর আছে কিছু চাপা পড়া করুন আর্তনাত।একটি নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের করুন আর্তনাত।
২০১৪ এর রমজান মাস।ছয়মাস যাবৎ আমার মা বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।বয়স টাও তেমন আহামরি কিছু না।তবে অনুপাতিক হারে আম্মুর শরীরে জমাট বাঁধা রোগগুলোর অনেক বয়স হয়েছে।১৫ টি বছর ধরে এই রোগগুলো আম্মুর লিভার,কলিজা,হাড়-মাংস পর্যন্ত চিবিয়ে চিবিয়ে গিলেছে।চিকিৎসাও অনেক করিয়েছে।একটি মধ্যবিত্ত পরিবার যতটুকু করতে পারে, তার চেয়ে অনেকাংশে বেশি করিয়েছে বাবা,মামারা।কিছুতেই কিছু হয়নি।
সম্ভবত ২৫ রমজান।জোহরের নামাজ পড়ে আম্মুর জন্যে দোয়া করলাম।ঘরে এসে আম্মুর চৌকির কাছে গেলাম। পিছনের ঘরের ওই চৌকি টাতে আম্মু ৬মাস যাবৎ শুয়ে আছেন।আম্মু আমার চোখ লাল দেখে বুঝতে পারে আমি কান্না করেছি।আমার আম্মু আমার সব কিছুই বুঝতে পারত।২০১১-১২ সালের দিকে শহরে একটা গার্মেন্টস এ চাকরি করতাম।তখন আমার বয়স ১৮ বছরের মত।পেটের দায়ে গ্রাম থেকে শহরে গিয়েছিলাম।একদিন রাত্রে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম।হাতে থাকা মোবাইলে রিং হচ্ছে।রাত বারোটায় মোবাইলের স্ক্রিনে MA লিখাটা দেখে হৃদপিন্ডের কম্পনটা বেড়ে গিয়েছিল।হ্যালো আম্মু,আস্সালামুআলাইকুম।ঐই দিক থেকে আমার আম্মুর কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বর ভেসে এলো।আম্মু স্বপ্নে দেখেছিলেন আমাকে কেউ মারধর করছে।আমার চোখের জল আর আটকাতে পারলাম না।একটু আগে যে গার্মেন্টস ম্যানেজার ফাইল দিয়ে আঘাত করল তখন ও চোখের টল টল করা পানিটাকে অন্যের হাসির খোরাগ হব ভেবে পড়তে দেয়নি।কিন্তু আমার আম্মুর স্বপ্নের কথা শুনে পানিটাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে শহরের অনেকটা নির্জন রাস্তায় লেমপোস্টের আলোতে হাটছি।আর সমানে চোখের পানি ঝরাচ্ছি।আমার আম্মু এরকম সবকিছুই জেনে যেতেন।তেমন করে সেদিনও চোখ লাল দেখে বলেছিলো কেন কেঁদেসিছ।আমি বলেছিলাম, আম্মু আল্লাহ্'র কাছে আগে দোয়া করতাম তোমার দীর্ঘায়ু চেয়ে।কিন্তু তোমার কষ্টের কথা চিন্তা করে সবাই বলতেছে তোমার সহজ মৃত্যুর জন্য যেন আল্লাহ্'র কাছে দোয়া করি।কথাটা আর শেষ পারলাম না।আম্মু আমাকে কাছে টেনে কপালে একটা চুমু দিয়ে চোখের পানি শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে দিলো। আর হাতের মধ্যে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল ঈদের কাপড় নিয়ে নিতে।এক হাজার টাকাতো একটা নরমাল পাঞ্জবী কিনতেও লাগে।আর আম্মুও জানতেন এই টাকাটা দিয়ে তেমন কিছুই কিনতে পারবো না।
আম্মুকে বললাম,আমার তো নতুন জামা আছে। টাকাটা দিয়ে তোমার জন্যে একটা শাড়ী কিনে আনি।তিনচার বছর ধরেই দেখছি আম্মু নিজের জন্যে কিছুই কিনত না।
পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আম্মুর কিছুই কিনা হয়না।আম্মু আমাকে জড়ীয়ে ধরে বলেছিলেন যেদিন আমার ছেলে আয়-রোজগার করবে সেদিন আমার ছেলের টাকা দিয়ে শাড়ী কিনব।
আজ তার ছেলে আয় রোজগার করছে।মায়ের জন্যে শাড়ী কিনার সামর্থ্য হয়েছে।কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলেছে ছেলেটা।শাড়ী পড়ার মানুষটা যে অনেক আগেই সাদা কাপড় পরে নিয়েছে।
আমার মায়ের জন্য কিছু করতে না পারাটা আমাকে রাত্রে ঘুমোতে দেয়না।মা, কিছুই করতে পারলামনা তোমার জন্যে। সবার কাছে একটা অনুরোধ কেউ মাকে কখনো কষ্ট দিবেননা।দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্যে। দোয়া করবেন,সকল সাদাকাপড় পরিহিত পরপারের মায়েদের জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×