somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাই একটি নতুন শ্লোগান

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী Henry Edward Garett তাঁর Great Experiments of Psychology বইটিতে চমৎকার এক গল্পের অবতারণা করেছিলেন, যেটি আমার পরবর্তী আলোচনার ওপর বেশ স্থুলভাবে প্রভাব বিস্তার করে রাখবে। বাঙ্গালীর সুবিপুল রসবোধের কাছে গল্পটি একরকম মামুলীই বলা চলে, কিন্তু এর আড়ালে, আবডালে আরেকটি অতিশয় সম্ভাবনাময় ভাবনা দোল খাচ্ছে, সেদিকে দৃকপাত করে এর যথার্থ মর্মোদ্ধার আবশ্যক। গল্পটি এমন, এক ছাত্র ইংরেজি ক্লাসে কোন এক প্রসঙ্গক্রমে I have went home লেখার জন্যে তার শিক্ষকের কাছ থেকে ব্যাপকভাবে তিরস্কৃত হল। শিক্ষক অতঃপর বাক্যটির প্রমাদগত কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে প্রবৃত্ত না হয়েই তাকে বললেন, ‘বাক্যটি একশতবার লিখে নিয়ে এসো!’ ছেলেটি অতিশয় ক্ষুণ্ণ হলেও শিক্ষকের আদেশ মান্য করল। কিন্তু, লেখা শেষে দেখতে পেল মান্যবর শিক্ষক স্কুলত্যাগ করেছেন। অগত্যা ডেস্কের ওপর একটা নোট রেখে এল সে। তাতে লেখা , I have written ‘I have gone’ one hundred times and since you are not here, I have went home! এখান থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। ‘এগোনো’ আর ‘সঠিকভাবে এগোনো’র মাঝে স্বর্গ-নরক ব্যবধান। অনেকেই বলে জাতিগতভাবে আমরা অলস, তা হয়ত ঠিক, কিন্তু গভীরভাবে দেখলে যে দৃশ্যটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় তা হল, আমরা আমাদের আলস্যের ক্ষতিপূরণস্বরূপ অলক্ষ্যে অসম্ভব পরিশ্রম করে চলেছি। একই কাজ আমাদের বারবার করে যেতে হচ্ছে। আমরা একটা ইনফিনিটি লুপে পড়ে গেছি এবং এখান থেকে বেরুতে পারছিনা বিধায় আমাদের সর্বপ্রকার আরোহণ থেমে আছে। এ মুহূর্তে আমাদের একটা break সিকোয়েন্স চাই।

ব্যাঘ্র শাবকই বাঘিনীর কাছে আদরণীয়, হরিণ শাবক নয়। আমরা যদি আশা করতে থাকি আমাদের কেঁচোসদৃশ মেরুদণ্ডটিকে শক্ত করে তুলতে বাহিরের বিমূর্ত কেউ প্লাস্টার অব প্যারিস হাতে দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে হরিণ শাবক হয়ে বাঘিনীর কাছ থেকে আদর প্রত্যাশা করার মত ভুল হবে। বাঘিনী বা হরিণীকে রূপায়ন নির্ভর বাস্তবতায় কোন জাতির মাতৃভাষার ছাঁচে ঢেলে দেখা যায়, তাদের অমৃত দুগ্ধধারা হতে শিশুবৎ জাতিটি সাহিত্য, দর্শন এবং বিজ্ঞানের সম্যক স্বাদ নির্ভরতায় নিঃশঙ্কে আস্বাদন করছে এবং ক্রমে পুষ্ট হয়ে উঠছে। এটাই স্বাভাবিক দৃশ্য। বাস্তবে আমাদের দেশে সেই স্বাভাবিক দৃশ্যটি দেখতে পারছিনা। বরং দেখছি ভাবধারায় যোজন দূরবর্তী এক দৃশ্যবীভৎস, যেখানে বিজাতীয় ভাষায় মনোজগতের যাবতীয় রসদ সংগৃহীত হচ্ছে এবং আদকা এক বিশেষ শিক্ষাভিমানী শ্রেণী গড়ে উঠেছে যারা তাদের দাসবৃত্তিকে মনিবসুলভ আচরণ মনে করছে, তাদের শঙ্কাগুলোর ওপর অহমের মুখোশ পরে আছে এবং এতটাই আঁটসাঁট সে মুখোশ যে মাঝে মাঝে কেউ যখন টান দিয়ে তা খসিয়ে দিতে চাইছে তখন তাদের ভারি লাগছে। এই শ্রেণিটি যখন বংশধর প্রসব করছে তখন Epistasis প্রক্রিয়ায় সে বংশধরের মাঝে পূর্বপুরুষের সূর্যসেন জিন প্রচ্ছন্ন থেকে উত্তরকালীন ‘স্যার’ সৈয়দ আহমদ জিনটি প্রকট হয়ে কোষস্তরে বিকশিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সবার অবস্থা অলক্ষ্যে হয়ে পড়ছে ওপরের প্যারার অন্তঃসারশূন্য ছাত্রটির মত। এবং তারা শিক্ষক হিসেবে যাদের পেয়ে চলেছে, ঐ ছাত্রটির সঙ্গে তাঁদেরও তেমন কোন ইতর বিশেষ নেই।

একটু আগে আমাদের কেঁচোসদৃশ মেরুদণ্ডের কথা বলছিলাম। বলছিলাম সেটিকে প্যারিস প্লাস্টার লাগিয়ে শক্ত করে দেবার মত কোন বিমূর্ত অস্তিত্ব নেই, থাকা উচিৎ নয় এবং প্রক্রিয়াটিও সুস্থ নয়। অথচ আমরা আমাদের মেরুদণ্ডরূপী শিক্ষার ব্যাপারটি নিয়ে ঠিক এ পথেই নিজেদের চোখ ঠাউরে চলেছি। কোন কিছু ‘বলা’র চেয়ে ‘ভালভাবে বলা’টা জরুরী। আমরা যখন উচ্চ অত্যুচ্চ শিক্ষার কদরে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি পড়ছি, তখন এক অস্পষ্ট ভাসা ভাসা দূরের লক্ষ্য আমাদের কল্পনায় আশা যাওয়া করছে যাকে আমরা পুরোপুরি কাছে টানতে পারছি না। ‘ভালভাবে’ জানাটাকে আমরা ভাষার আড়ালের কারণে পুরোপুরি ছুঁতে পারছি না আমাদের ছাত্রত্বকালীন অর্বাচীন সময়ে। আমরা শুধু সেই জিনিসটিই কল্পনা করে নিতে পারি যার একটি নাম আছে। আর এমন যদি হয় নামটি আমাদেরই দেয়া, সেক্ষেত্রে বিষয়বস্তু আমাদের কাছে এতখানি বন্ধুসুলভ হয়ে ধরা দেয় যে আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবনার রুদ্ধ দুয়ার এক ঝটকায় খুলে যায়, শুধুমাত্র তখনই সৃজনের জলে ঢেউ জাগে, কদাচ ঝড়ও ওঠে। কিন্তু আমাদের নিজেদের দেয়া নামগুলোকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। নতুনভাবে নামাঙ্কিতও করতে পারছিনা, কারণ আমাদের ঘটে যথেষ্ট বিদ্যে জমা নেই। বিদ্যে যথেষ্ট জমা নেই বা যা ছিল তাও বিকশিত হতে পারেনি, কারণ আমাদের নিজেদের তেমন কোন গবেষণা নেই যার মাধ্যমে উপাত্তগুলোকে ঝালাই করে আমরা একটা অবকাঠামো দাঁড় করাতে পারতাম। গবেষণা নেই কারণ আমাদের ‘নাকি’ টাকাপয়সা নেই। প্রকৃতপক্ষে যা নেই তার নাম টাকাপয়সা নয়। তার নাম ইচ্ছে। প্রতি মাসেই তো একেকটা হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সুসংবাদ পেয়ে চলেছি। যাদের যৎকিঞ্চিত ইচ্ছে আছে, পরশ্রীকাতরের দল প্রতি মুহূর্তে তাদের পেছন থেকে জামার খুট খামচে ধরছে। ফি বছর কৃতবিদ্য না বেরিয়ে বেরুচ্ছে এতো এতো ঘোড়া, যারা টগবগ টগবগ করে দৌড়ে গিয়ে ভিড়ছে বিশ্বাসঘাতক পরশ্রীকাতরদেরদের দলে, কেননা হালে ওটাই নাকি লাভজনক। সংখ্যাধিক্যের দাসবৃত্তি এতো নিচে নেমে গেছে যে তারা পুনরায় জেগে ওঠার চেতনাকে অবজ্ঞা করতে শিখে গেছে, কথায় এবং কাজে বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভেটো দিতে শিখে গেছে। গবেষণা আমাদের হচ্ছে বটে, তবে শব্দটির পূর্বে ‘অপ’ উপসর্গটি যোগ করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের অসম্ভব ধীশক্তি সম্পন্ন অপগবেষণা গন্ধরাজ নয়, মাংসাশী দুর্গন্ধযুক্ত রিফ্লেশিয়া আর্নল্ডী ফুল ফুটিয়ে চলেছে একে একে। আমরা চোরাপথে মাদক আমদানি, অর্থ পাচার, জালিয়াতি, ঠগবাজি, তাবৎ নোংরামি আর খুনোখুনিতে বিপুল অধ্যবসায়ে ফাঁ ফাঁ করে এতো ওপরে উঠে গেছি যে, অন্য কোন জাতি ঘাড় হেলিয়ে আমাদের উচ্চতা দেখতে গিয়ে মড়াৎ করে ঘাড় ভেঙে পড়তে পারে। মেধাই বটে! সৎসৃজনের জলে ঢেউ না জাগানিয়া বৃথা-পঙ্গু একটা শিক্ষাব্যাবস্থা আমাদের, যেখানে মেরুদণ্ডের পরিবর্তে নিরন্তর কেঁচো তৈরি হচ্ছে, আর পার্শ্ববর্তী দেশসহ তাবৎ ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ তাকে টেনে ছিঁড়ে ফেলার জন্যে মুখিয়ে আছে।

কখন মনিষীদের জন্ম হয় অথবা মনীষা বিকশিত হয়? কখন একটি নতুন ভাবনা একটি নতুন যুগ সৃষ্টি করতে পারে? যখন তা একটি সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎসহকারে অন্তরে প্রতিভাত হয়। মানুষ যখন জ্বলন্ত কল্পনায় চোখের সামনে দেখতে পায় আশু অবাক স্বাচ্ছন্দ্য, তখনই বন্ধ্যাত্ত্বের বিকলন ঘটে, মনীষার জীয়নকাঠির প্রহারে চিৎকার করে ওঠে সময়, যুগ সৃষ্টি হয়। এদেশে প্রতিটিবার যুগ সৃষ্টির সন্ধিক্ষণের অঙ্গারকণিকা আমরা নিরীক্ষাভীতির অসৎ স্পর্ধার ছাই দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। আর নয়। এবার উচ্চকিত কণ্ঠে চাই একটি নতুন শ্লোগান! শিক্ষার আদ্যোপান্তে বাংলা চাই। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চ অত্যুচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চাই আমাদের মজ্জাগত মাতৃভাষাটিকে। এ শ্লোগানটিকে গণ্য করতে হবে আমাদের গৌরবের ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এর ঠিক পরবর্তী শ্লোগান হিসেবে। যে শিক্ষাব্যাবস্থার লক্ষ্য মানুষ, তা মানুষকে অমর করে। দার্শনিক বারট্রাণ্ড রাসেলের On Education বইটির ভাষ্য এটি। একে সমাকলন করলে দাঁড়ায় যে শিক্ষাব্যাবস্থার লক্ষ্য আপামর মানুষ, তা আপামরকে অমর করে। বাস্তবতা এ ভাবনার সঙ্গে সমসুর নয়, কিন্তু কতখানি অসুর? মানবমুখী শিক্ষাব্যবস্থাটি তাৎক্ষনিক অমরত্ব দেবে অল্প কজনকেই, কিন্তু পুরো সমাজেকে খুব ধীরে তৈরি করে নিয়ে উচ্চতর স্বপ্নের পথে উস্কে দেবে ঠিক ঠিক। আমরা হয়ত আমাদের জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পারব না, তথাপি আমাদের অনাগত সন্তানেরা সেই আশু স্বর্ণসময়ে যৌবনপ্রাপ্ত হবে। একটা দেশতো এভাবেই এগোয়! রা.বি’র সাবেক ভি.সি মুহম্মদ শামসুল হক রচিত, আবদুল্লাহ আল মুতী অনূদিত ‘শিক্ষা ও জাতির উন্নয়ন’ বইটিতে একটি পরিসংখ্যানিক তথ্য মেলে, ১৯১৭ সালে রাশিয়ার গোটা জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ ছিল নিরক্ষর। আর আমরা যখন নিজেদের হাতে লেখা মাতৃভাষার প্রথম গণিত বইটি, ‘বাঙ্গালা গনিতাঙ্ক’, হাতে পাই তখন ১৮৩৪ সাল![সুত্রঃ শতবর্ষে বাঙ্গালীর বিজ্ঞান চর্চা, তপন চক্রবর্তী] পার্থক্যটা দেখুন। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, যাদের শুরুটা এতোখানি এগিয়ে ছিল তারা আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে! এর কারণ, একটা পর্যায়ে এসে আমাদের শেখার প্রক্রিয়াটিতে পরিকল্পিতভাবে গলদ ঢুকিয়ে দিয়েছিল বিজাতীয় শাসক গোষ্ঠী এবং তা তাদের স্বার্থেই, যা আজও আমরা লক্ষ্যে অলক্ষ্যে লালন করে চলেছি। কিন্তু কিসের আশায়?

আপন ভাষা উচ্চশিক্ষার বিষয়বস্তুকে বাজিয়ে দেখার অধিকতর প্রেষণা যোগায়, আরও গভীরে যাবার বাসনা জাগায়। ইংরেজি বা ডয়েচ ভাষার উচ্চশিক্ষা যদি এক হাজার বাঙ্গালি শিক্ষার্থীর মাঝে অন্তত দশ জনকে প্রকৃত বিদ্যানুরাগী বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলে থাকে, তবে বাংলা ভাষার উচ্চশিক্ষা অন্তত বারো জনকে প্রকৃত বিদ্যানুরাগী ও বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে সক্ষম। সংখ্যাটি নির্ঘাত বারো নয়, হবে এরও ঢের বেশি। যাহোক, এই বাড়তি দুজনই প্রজন্মান্তরে দু’শতে, দু’হাজারে, দু’লক্ষে, দু’কোটিতে বিবর্ধিত হবে সময়ের ফেরে, এটা পরীক্ষিত, এমনটাই হয়ে এসেছে আজকের যত উন্নত দেশে। আমরা অন্য সমৃদ্ধ ভাষাসমূহ শিখব, তা আমাদের অর্জন অনূদিত করে তাদের জানাবার খাতিরে, তাদের অর্জন অনুবাদ করে নিজেরা জানবার খাতিরে, কখনই নিজেদের গবেষণা বা ভাবনার চর্চার খাতিরে নয়, এটা অযৌক্তিক! আঠারো শতকের প্রথম দিককার কিছু ভালমানুষ ইউরোপিয়ানের প্রচেষ্টার কাছে আমরা ভীষণ ঋণী। বাঙালীর মেধাকে জ্ঞানচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিতে তাঁরা জ্ঞানবিজ্ঞানের বই বাংলাতে রচনা করতে শুরু করেছিলেন। রবার্ট মে রচিত ‘মে গণিত’(১৮১৭) বাংলায় রচিত প্রথম গণিত বই। পিয়ার্সের রচিত ‘ভূগোল বৃত্তান্ত’(১৮১৯) প্রথম ভূগোলশাস্ত্রের বই। বাংলায় প্রথম অস্থিও শারীরবিদ্যার বই ‘বিদ্যাহারাবলী’ (১৮২০), লেখক ড. ফেলিক্স কেরী, প্রথম রসায়নের বই ‘কিমিয়া বিদ্যাসাগর’(১৮২৪), লেখক জন ম্যাক, প্রথম পদার্থবিজ্ঞানের বই ‘পদার্থবিদ্যা সার’(সমসায়িক সাল), লেখক ইয়েটস [সুত্রঃ শতবর্ষে বাঙ্গালীর বিজ্ঞান চর্চা, তপন চক্রবর্তী]। দেখা যাচ্ছে যে সত্য দু’ শতক পূর্বে ক’জন ভিনদেশীর মনে আমাদের জন্যে দরদ সহকারে উপলব্ধ হয়েছিল, সে সত্য আজ নিজেরাই পায়ে দলে চলেছি, সেই দরদটুকু আজ আমাদের নিজেদের জন্যে নিজেদের প্রতিই বরাদ্দ নেই।

আমাদের সব ঢেলে সাজাতে হবে, এভাবে চলতে দিতে পারা যায় না। উন্নয়নের কারণ ও চালক তো জানাই আছে, শিক্ষা, এটাও জানা আছে ভবিষ্যতের জন্যে শিক্ষার মতন বড় পুঁজি অথবা এর মত বড় বিনিয়োগ দ্বিতীয়টি নেই। এবার শুধু তাকে ভেতরে পশাবার পালা। চলমান-আশু গনতান্ত্রিক সরকারকে তার ভার তুলে নিতে হবে। নিজেদের মাঝে দুর্নীতির মাধ্যমে তাঁরা নিয়তই সহস্রকোটি টাকা লোপাট করছেন বা করতে সুবিধে করে দিচ্ছেন। সহস্রের শত কোটি টাকা যদি দেশের কৃতবিদ্যজনদের ভরণপোষণে, গবেষণা আর জ্ঞানচর্চার পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যয় করেন, প্রবাসরত গুণী শিক্ষাবিদ চিন্তাবিদদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাঁদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেন, তবে পরের ভাষায় এখনকার মত পেট চালানো বিদ্যে নয়, বরং নিজ ভাষায় বিশ্ব চালানো মত বিদ্যে অর্জন করে নিতে আমরা বড়জোর পঞ্চাশ বছর সময় নেব। কুড়ি বছর রেখেছি ভিন্ন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ নিত্য আহরিত জ্ঞান অনূদিতকরণে আর কুড়ি বছর রেখেছি আমাদের নিজস্ব মৌলিক জ্ঞানের বুননে। আরও দশ বছর ধাতস্থ হওয়ার জন্যে। ব্যাস, তারপর শুধু আরোহণ। এই যে এতো পেষণের মাঝে থেকেও থেকে থেকে আমাদের মাঝ থেকে বিশ্বমানের সাহিত্যকর্ম দর্শন এসেছে, চিত্রকর্ম চলচ্চিত্র এসেছে, হালে পৃথিবী বদলে দেয়া অর্থনীতির তত্ত্ব এসেছে, চাঁদের জন্যে বানানো রোবট এসেছে, এসব একইসাথে যেমন এক রহস্য তেমনই আবার আমাদের তীব্র প্রাণপ্রাচুর্যের পরিচায়ক । আমরা যখন আমাদের মেধাকে এবে কাজে লাগিয়ে সিস্টেমটাকে স্রেফ বদলে দিতে পারব, তখন আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ আগামী শতবছরের মাঝে পৃথিবীর শান্তি-প্রশস্তির নেতৃস্থানীয় একটি পদ নিয়ে নেবে, সে ব্যাপারে ষাটভাগ ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই। একবার শুধু শুরু করে দেয়ার অপেক্ষা। পরবর্তীতে সব আপনিই এগোবে।

যাঁদের কাছে আমার এ লেখার বিষয়বস্তু ভাল লেগেছে, তাদের জন্যে লেখা এখানেই শেষ। আর যাদের কাছে বড্ড ঘোরালো এবং অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে তাদের জন্যে বিষয়বস্তুর সঙ্গে ক্ষীণসুত্রে প্রাসঙ্গিক এমন একটি মজার ছক শেয়ার করছি। এ ছকের উদ্ভাবক টারমেন-মেরিল মনোবিজ্ঞানী জুটি। ১৯৩৭ সালে কিছু পরিবর্ধন পরিমার্জনের মাধ্যমে তাঁরা Intelligence Quotient Test সংক্ষেপে IQ Test এর বেশ উন্নতি ঘটান। IQ Test কোন একজন মানুষের মানসিক বয়েস ও প্রকৃত বয়েসের অনুপাত যার ফলাফলটিকে ভগ্নাংশ এড়ানোর জন্যে ১০০ দ্বারা গুণ করা হয়। মানসিক বয়েস নির্ণয়ের জন্যে যে ধারার প্রশ্নাবলী তৈরি হয়, তার জন্যে এ বিজ্ঞানীদ্বয় অপর ফরাসী মনোবিজ্ঞানী জুটি বিনে এবং সাইমনের কাছে বিশেষ ঋণী। ছকটির তথ্যসূত্র ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী লিখিত শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের কথা বইটি।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×