somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিলু নাসের এর দীর্ঘ কবিতা ঃ স্মৃতিকাব্য

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতোবার চোখ রাখি স্মৃতি জানালায়
কতো মুখ, কতো চোখ, ডাক দিয়ে যায়।
স্মৃতির ভেতরে আছে অনেক স্মৃতি
কিছুটা রোদেলা আর কিছু ছায়া বীথি।
আছে রোদ,আছে মেঘ, আরো আছে ঝড়
চন্দ্র তাঁরায় ভরা স্মৃতি চত্বর।
আছে আশা, ভালবাসা, আছে বিশ্বাস
নানা রঙে ঝলমলে স্মৃতির আকাশ।
আছে প্রেম, অভিমান, হতাশা ও ক্ষোভ
তবু দেই বারবার স্মৃতিজলে ডুব।
কারণে অকারণে তাই যায় চলে
যখন তখন মন,স্মৃতির অতলে।
মুক্তো মানিক আর প্রবাল শৈবাল
ঝিনুক গহ্বরে ডুবে, আছে মহাকাল।
তাইতো অবসরে, স্মৃতির দড়ি ধরে
আমিও ঝাপ দেই অতল গহ্বরে।
অকুল সাগরে আমি হয়ে ডুবুরি
নিশিদিন খুঁজি একা হারানো কস্তুরী
ডাক দেয় চুপিচুপি অলীক ময়ুরী
আরব্য রজনীর সেই রাজকুমারী।
দু’হাত বাড়িয়ে আমি কিছু কিছু ছুঁই
আবার পারিনা ধরতে অনেক কিছুই।
রঙিন অনেক স্মৃতি আমাকে না বলে
হারিয়ে গিয়েছে তারা অথৈ জলে।
কোনোটা বা উড়ে গেছে আকাশে বাতাসে
মিশে গেছে বেদনার সহস্র নিঃশ্বাসে।
তবুও যে সব রঙ খুজেঁ আমি পাই
তা দিয়ে স্মৃতির পাতা যত্নে সাজাই।
কিছু স্মৃতি ভাঙাছেঁড়া,কোনটা বা ধুসর
বেশীরভাগ ঝলমলে চির ভাস্বর
হারিয়ে যাওয়া সেই রঙমাখা দিন
আমার ধুসর চোখ,করে দেয় রঙিন।


স্মৃতির সাঁকো বেয়ে . দুরন্ত কিশোর এক দৌড়ে আসে
কখনো কাঁদে আর কখনো সে হাসে
কখনো বালক এসে সামনে দাড়ায়
চুপিচুপি ডাক দেয় হাত ইশারায়।
লাটাই হাতে নিয়ে দৌড়ে কিশোর
আমাকে নিয়ে যায় দূরে বহু দূর
আমি তার পিছু পিছু হাওয়ায় হাওয়ায়
মেঘের ভেলায় ভাসি দূর নীলিমায়।
অনেক পাহাড় নদী পেরিয়ে আমি
হাত’পা ছড়িয়ে দিয়ে যেখানে নামি
চেয়ে দেখি চারিদিকে হরিৎ প্রান্তর
গায়ে জড়িয়ে আমার স্মৃতির চাদর।
সেখানে দেখি সবুজ ঘাসের উপরে
আমার হারানো দিন সাজানো থরে থরে।
সবুজাভ ঘাসে আমি দৌড়ে বেড়াই
পুরনো দিনের কাছে নিজেকে বিলাই।
খুঁজে পাই ভুলে যাওয়া কতো শত মুখ
আমাকে দেখে তারা হয় উৎসুক
উল্টেপাল্টে দেখি ছেঁড়া এ্যালবাম
পেয়ে যাই প্রিয় বহু স্বজনের নাম।
স্মৃতিময় প্রান্তর ভরে দেয় মন
স্বার্থক হয় আমার নীলিমা ভ্রমন।


কবিতা গল্প আছে স্মৃতির ভেতর
আছে গ্রাম মেঠোপথ শহর নগর।
কিশোর-কিশোরী - আছে তরুণ তরুণী
এখনো কানে আসে,মৃদু পায়ের ধ্বনি।
স্মৃতিপথ জুড়ে আছে নদী,পাখি,ফুল
বেতফল, লুকলুকি, আছে জামরুল
আছে আম, জাম আর কাঠাল লিচু
কিছুটা ঝলমলে,আবছা কিছু।


বর্ষায় খাল,বিল উথাল-পাথাল
হাওর বাওর আর জোড়াতালি পাল
স্মৃতির বন্দরে এখনো উড়ে
কখনো পোড়ায় আর কখনো পুড়ে।
স্মৃতিতে বর্ষাকাল,শ্রাবণ ঘনঘোর
কানামাছি লুকোচুরি,ছড়ায় রোদদুর
দোয়েল ঘুঘু ডাকা উদাস দুপুর
গ্রাম্য বালিকার পায়ের নুপুর
কিচ্ছা কাহিনী শত, স্মৃতিতে ভরপুর।


স্মৃতিতে ভয়ডর -দুঃসাহসিকতা
ইসকুল পালানোর সেই প্রবনতা
রয়েছে তমাল,বট, ঘন বাঁশঝাড়
সুবুজাভ ধান ক্ষেত দূরের পাহাড়
আর-
“মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়েশা আক্তার”.
রাখালছেলের বাঁশি বাউলের গান
জোনাক আলোয় ভরা স্মৃতির বাগান।

হিমকবরি,জবা কুসুম-
স্মৃতির ভেতরে গুমরে মরে
" যাও পাখি বলো তারে..সে যেন ভুলেনা মোরে "।

আমলকীর মৌ-খেলারাম খেলেযা -
নিষিদ্ধ লোবান
ছড়ায় হৃদয়ে আজো চন্দন ঘ্রাণ।
মাসুদরানা, দস্যু বনহুর, দুর্ধর্ষ কুয়াশা
স্মৃতির ভেতরে রোজ করে যাওয়া আসা।
স্মৃতিতে গোর্কি আছে আছে পুশকিন
মার্ক্স এঙ্গেলস আর আছেন লেলিন।

স্মৃতির ভেতরে আছে যুদ্ধ,বিধ্বস্ততা
মিছিল,মিটিং,শ্লোগান, প্রিয় স্বাধীনতা
আছে সুখ, উল্লাস, বিশ্বাসঘাতকতা
রক্ত আগুন মাখা স্মৃতির পাতা।

রাজ্জাক,শাবানা,ববিতা,সুজাতা
স্মৃতির মখমলে ঝরায় স্নিগ্ধতা
শচীন,কাননবালা,পুরনো কলেরগান
হৃদয়ের মাঝে আজো আছে অম্লান
মান্না, সতীনাথ,বশির,জব্বার
স্মৃতির খেয়াঘাটে করে যে পারাপার।

আজ বহুদিন পর এই মধ্য বয়সে
আমাকে কাঁদায় সেই স্মৃতিরা এসে
স্মৃতির বাতাসে ভাসে কখনো নয়ন
কখনো সিক্ত হয়,খরায় পীরিত মন।
স্মৃতির মায়ার টানে ,রোদ্র আসেনা প্রাণে
রক্তক্ষরণ তাই বাড়ে অকারণে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×