যতোবার চোখ রাখি স্মৃতি জানালায়
কতো মুখ, কতো চোখ, ডাক দিয়ে যায়।
স্মৃতির ভেতরে আছে অনেক স্মৃতি
কিছুটা রোদেলা আর কিছু ছায়া বীথি।
আছে রোদ,আছে মেঘ, আরো আছে ঝড়
চন্দ্র তাঁরায় ভরা স্মৃতি চত্বর।
আছে আশা, ভালবাসা, আছে বিশ্বাস
নানা রঙে ঝলমলে স্মৃতির আকাশ।
আছে প্রেম, অভিমান, হতাশা ও ক্ষোভ
তবু দেই বারবার স্মৃতিজলে ডুব।
কারণে অকারণে তাই যায় চলে
যখন তখন মন,স্মৃতির অতলে।
মুক্তো মানিক আর প্রবাল শৈবাল
ঝিনুক গহ্বরে ডুবে, আছে মহাকাল।
তাইতো অবসরে, স্মৃতির দড়ি ধরে
আমিও ঝাপ দেই অতল গহ্বরে।
অকুল সাগরে আমি হয়ে ডুবুরি
নিশিদিন খুঁজি একা হারানো কস্তুরী
ডাক দেয় চুপিচুপি অলীক ময়ুরী
আরব্য রজনীর সেই রাজকুমারী।
দু’হাত বাড়িয়ে আমি কিছু কিছু ছুঁই
আবার পারিনা ধরতে অনেক কিছুই।
রঙিন অনেক স্মৃতি আমাকে না বলে
হারিয়ে গিয়েছে তারা অথৈ জলে।
কোনোটা বা উড়ে গেছে আকাশে বাতাসে
মিশে গেছে বেদনার সহস্র নিঃশ্বাসে।
তবুও যে সব রঙ খুজেঁ আমি পাই
তা দিয়ে স্মৃতির পাতা যত্নে সাজাই।
কিছু স্মৃতি ভাঙাছেঁড়া,কোনটা বা ধুসর
বেশীরভাগ ঝলমলে চির ভাস্বর
হারিয়ে যাওয়া সেই রঙমাখা দিন
আমার ধুসর চোখ,করে দেয় রঙিন।
স্মৃতির সাঁকো বেয়ে . দুরন্ত কিশোর এক দৌড়ে আসে
কখনো কাঁদে আর কখনো সে হাসে
কখনো বালক এসে সামনে দাড়ায়
চুপিচুপি ডাক দেয় হাত ইশারায়।
লাটাই হাতে নিয়ে দৌড়ে কিশোর
আমাকে নিয়ে যায় দূরে বহু দূর
আমি তার পিছু পিছু হাওয়ায় হাওয়ায়
মেঘের ভেলায় ভাসি দূর নীলিমায়।
অনেক পাহাড় নদী পেরিয়ে আমি
হাত’পা ছড়িয়ে দিয়ে যেখানে নামি
চেয়ে দেখি চারিদিকে হরিৎ প্রান্তর
গায়ে জড়িয়ে আমার স্মৃতির চাদর।
সেখানে দেখি সবুজ ঘাসের উপরে
আমার হারানো দিন সাজানো থরে থরে।
সবুজাভ ঘাসে আমি দৌড়ে বেড়াই
পুরনো দিনের কাছে নিজেকে বিলাই।
খুঁজে পাই ভুলে যাওয়া কতো শত মুখ
আমাকে দেখে তারা হয় উৎসুক
উল্টেপাল্টে দেখি ছেঁড়া এ্যালবাম
পেয়ে যাই প্রিয় বহু স্বজনের নাম।
স্মৃতিময় প্রান্তর ভরে দেয় মন
স্বার্থক হয় আমার নীলিমা ভ্রমন।
কবিতা গল্প আছে স্মৃতির ভেতর
আছে গ্রাম মেঠোপথ শহর নগর।
কিশোর-কিশোরী - আছে তরুণ তরুণী
এখনো কানে আসে,মৃদু পায়ের ধ্বনি।
স্মৃতিপথ জুড়ে আছে নদী,পাখি,ফুল
বেতফল, লুকলুকি, আছে জামরুল
আছে আম, জাম আর কাঠাল লিচু
কিছুটা ঝলমলে,আবছা কিছু।
বর্ষায় খাল,বিল উথাল-পাথাল
হাওর বাওর আর জোড়াতালি পাল
স্মৃতির বন্দরে এখনো উড়ে
কখনো পোড়ায় আর কখনো পুড়ে।
স্মৃতিতে বর্ষাকাল,শ্রাবণ ঘনঘোর
কানামাছি লুকোচুরি,ছড়ায় রোদদুর
দোয়েল ঘুঘু ডাকা উদাস দুপুর
গ্রাম্য বালিকার পায়ের নুপুর
কিচ্ছা কাহিনী শত, স্মৃতিতে ভরপুর।
স্মৃতিতে ভয়ডর -দুঃসাহসিকতা
ইসকুল পালানোর সেই প্রবনতা
রয়েছে তমাল,বট, ঘন বাঁশঝাড়
সুবুজাভ ধান ক্ষেত দূরের পাহাড়
আর-
“মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়েশা আক্তার”.
রাখালছেলের বাঁশি বাউলের গান
জোনাক আলোয় ভরা স্মৃতির বাগান।
হিমকবরি,জবা কুসুম-
স্মৃতির ভেতরে গুমরে মরে
" যাও পাখি বলো তারে..সে যেন ভুলেনা মোরে "।
আমলকীর মৌ-খেলারাম খেলেযা -
নিষিদ্ধ লোবান
ছড়ায় হৃদয়ে আজো চন্দন ঘ্রাণ।
মাসুদরানা, দস্যু বনহুর, দুর্ধর্ষ কুয়াশা
স্মৃতির ভেতরে রোজ করে যাওয়া আসা।
স্মৃতিতে গোর্কি আছে আছে পুশকিন
মার্ক্স এঙ্গেলস আর আছেন লেলিন।
স্মৃতির ভেতরে আছে যুদ্ধ,বিধ্বস্ততা
মিছিল,মিটিং,শ্লোগান, প্রিয় স্বাধীনতা
আছে সুখ, উল্লাস, বিশ্বাসঘাতকতা
রক্ত আগুন মাখা স্মৃতির পাতা।
রাজ্জাক,শাবানা,ববিতা,সুজাতা
স্মৃতির মখমলে ঝরায় স্নিগ্ধতা
শচীন,কাননবালা,পুরনো কলেরগান
হৃদয়ের মাঝে আজো আছে অম্লান
মান্না, সতীনাথ,বশির,জব্বার
স্মৃতির খেয়াঘাটে করে যে পারাপার।
আজ বহুদিন পর এই মধ্য বয়সে
আমাকে কাঁদায় সেই স্মৃতিরা এসে
স্মৃতির বাতাসে ভাসে কখনো নয়ন
কখনো সিক্ত হয়,খরায় পীরিত মন।
স্মৃতির মায়ার টানে ,রোদ্র আসেনা প্রাণে
রক্তক্ষরণ তাই বাড়ে অকারণে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৮