বহুদূর থেকে এসেছি আমি
আমাকে বসতে দাও,তোমাদের গোলাপ বাগানে।
আমারও বাগান ছিলো একদিন-
ছিলো উদ্যান, সবুজে সবুজময় খেজুরবৃক্ষ আর জলপাই সারি।
আমার বাগান জুড়ে পোকামাকড় গড়েছে আবাস,
সবুজাভ বনে আজ কার্তুজ ঘ্রান। খেজুরের চিড়ল পাতায়-
রক্তচোষা বাদুরেরা ঝুলে আছে নির্ভয়ে
আঁকাবাকা পাহাড়ী পথে কেবলই মৃর্তুর এপিটাপ-
আমাকে বসতে দাও তোমাদের গোলাপ বাগানে।
আমিও উঠেছি বেড়ে বালিকাহ্ নদীর তীরে বৃষ্টিজলে,
ঘাসের শিহরে আর, রমনীর উষ্ণ আলিঙ্গনে
আমারও কেটেছে দিন ফুলও বৃক্ষের সাথে
ঝর্নার সচ্ছ জলে পা’ ধুয়ে।
আমার নদী,ঝর্না, আর নবী আইয়ুবের পদাঘাতে সৃষ্ট
সেই অলৌকিক নহরে এখন রক্তের ঢেউ
শিশুর মন্ডু, যুবতির কাটা স্তন
আর জননীর হৃৎপিন্ড ভেসে যায় সেখানে প্রতিদিন
তাই আমি দেশান্তরি
আমাকে বসতে দাও তোমাদের নদী তীরে,মসৃন পথে।
বহু পথ মাড়িয়ে মরু আর সাগর পেরিয়ে
আজ রিক্ত হস্তে এসেছি তোমাদের দ্বারে
আমাকে বসতে দাও - সীমানা বিহীন আকাশের নীচে।
আমার আকাশ জুড়ে গর্জমান বোমারুবিমান
জলেস্থলে দেশীবিদেশী হন্তারক সাজোয়াযান
তাদের হিংস্র বুটের নীচে স্বপ্ন আর গোলাপের পাপড়ী।
মারনাস্ত্রের আঘাতে আমার শহর বিধ্বস্ত
পথে পথে প্রতিদিন মানবতা ধর্ষিত হয়
ধর্মের নামে চলে রক্তের হোলি আর জীবনের নাশ
মরুপ্রান্তর জুড়ে চোরাবালি করে চিক চিক।
বহুদিন হলো আমি মানুষ দেখিনি, মানবতা দেখিনি।
মানুষের খোঁজে, রক্ত আর আগুন মেখে
উদভ্রান্ত নীল তৃষ্ণায় এখানে এসেছি মানুষের বাগানে।
দ্যাখো, চেয়ে দ্যাখো, আমার শরীর জুড়ে হিংস্র পশুর আচড়
ক্ষত, ঘাম, আর রক্তের দাগ, অশরীর পার্থিব গন্ধ,
আমার অশ্রুতে রক্ত আর বিষাদের স্বাদ
গোড়ালীতে পেরেকের দাগ
অংসখ্য মৃত পাখিদের দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে আমি এসেছি
ক্লান্ত প্রাণ এক
আমার কাঁধে বহু নবী রাসুলের জংধরা স্বপ্নের কফিন
আর ঝুলিতে আরব্যরজনীর সুপ্রাচীন পান্ডুলিপি
আমাকে বসতে দাও তোমাদের স্বপ্নীল আঙিনায়...
দিলু নাসের
২০সেপ্টেম্বর ২০১৫
Like
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩২