ঢাকা-কলেজের ছাত্রদের দাবি অযৌক্তিক নয়
সাইয়িদ রফিকুল হক
কয়েকদিন আগে ঢাকা-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকার নিউমার্কেট ও এর আশেপাশের সকল দোকানদারদের এক প্রবল ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক ছাত্র। আর নাহিদ নামক একজন পথচারি (বিশ্বস্তসূত্রমতে, সে কুরিয়ার-সার্ভিসের একজন ডেলিভারিম্যান ছিল) নিহত হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তার করুণ মৃত্যু হয়েছে। এই সংঘর্ষ যে থেমে গেছে তা নয়―এটি এখনও চলমান। প্রকাশ্যে, বিচ্ছিন্নভাবে এখনও সংঘর্ষ না-চললেও আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সমানতালে চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত:
নিউমার্কেটের অভ্যন্তরের দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে প্রথমে সংঘর্ষসৃষ্টি হয়। তারপর এটি শুরু হয় ঢাকা-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ: সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় ঘটনার সূত্রপাত। নিউমার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকান ওয়েলকাম ও ক্যাপিটালের কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ওয়েলকাম দোকানের কর্মচারী বাপ্পীর নেতৃত্বে ছুরি-চাপাতি নিয়ে ঢাকা-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চালায় দোকানের কর্মচারীরা। এই ঘটনার খবর ঢাকা-কলেজের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসে।
দোকানদারদের সন্ত্রাস:
১. দোকানদাররা ঢাকা-কলেজের দুই ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।
২. দোকানদাররা একজন নিরীহ পথচারিকে হত্যা করেছে।
৩. দোকানদাররা রোগী-বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর করেছে।
৪. দোকানদাররা ঢাকা-কলেজের ছাত্রাবাসে হামলা করেছে।
৫. দোকানদাররা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে। এতে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও টিভি-চ্যানেলের কমপক্ষে ৩০জন সাংবাদিক তথা মিডিয়াকর্মী আহত হয়েছে।
৬. দোকানদারদের এই সন্ত্রাসে একজন দোকান-কর্মচারী মোরসালিনও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। পরে সে ঢাকা মেডিকেলে মারা গিয়েছে।
এই ঘটনায় ছাত্ররা যে নিশ্চুপ ছিল তা নয়―তারাও আত্মরক্ষার্থে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দোষ দোকানদারদের। তারা সবসময় ছাত্রদের ওপর এভাবে মারমুখো হয়ে ওঠে। এবারই প্রথম ঢাকার নিউমার্কেট ও তার আশেপাশের দোকানদার নামক গলাকাটা, অশ্লীলভাষার প্রয়োগকারী ও ক্রেতাসাধারণদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে উঠেছে। তাই, ঢাকা-কলেজের ছাত্রদের সমর্থনে ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ইডেন কলেজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল হয়েছে। তারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে ছাত্রদের এই আন্দোলনে।
এককথায় বলতে গেলে ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক ও অন্যান্য মার্কেটের দোকানদার ও ফুটপাতের হকাররা ভয়ানক খারাপ। আসলেই নিউমার্কেট ও তার আশেপাশের দোকানদার ও ফুটপাতের হকাররা ভয়ংকর বেআদব হয়ে উঠেছে। তাদের ব্যবহার এত জঘন্য যে তা ভাষায় প্রকাশ করাটাও লজ্জার বিষয়।
তারা সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে সবসময় দুর্ব্যবহার করে থাকে। নারী-ক্রেতাদের দেখলে অশ্লীল কথাবার্তা, মন্তব্য ও আকারইঙ্গিত করে। মেয়েদের সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করতে তাদের মুখে কখনো আটকায় না।
দোকানদার ও হকারদের অশ্লীলতার সামান্য নমুনা:
আসেন আপা শুই!
জোড়ায়-জোড়ায় শুই!!
দশ টাকায় শুই!!!
(এখানে, শুই বলতে সুঁই বুঝতে হবে। তারা মেয়েদের দেখলে এভাবে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়।)
ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংবাদ সম্মেলনে ১০দফা দাবি:
১. এই ন্যাক্করজনক হামলার উস্কানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. আহত সকল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সকল দায়ভার নিউমার্কেট-ব্যবসায়ী-সমিতি ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নিতে হবে।
৩. হকারদের হামলায় নিহত পথচারি নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৫. দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ডিসি, এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে, এবং পুলিশ-প্রশাসনকে কলেজ-প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
৭. প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৯. ক্রেতা-হয়রানি, নারীদের যৌন-হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং-সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মাকের্ট ঢাকা-কলেজের সম্পদ―লিজ বাতিল করে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এই দাবি অনতিবিলম্বে কার্যকর করা না-হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করলে মার্কেটগুলো পরিচ্ছন্ন হবে। নিরাপদ হবে। ক্রেতাসাধারণ সহজে কেনাকাটা করতে পারবে। ভবিষ্যতে এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়তো আর হবে না। তাই, এগুলোর দিকে দায়িত্বশীলদের এখনই মনোযোগ দেওয়া উচিত। ছাত্রদের সঙ্গে বসে এর একটা সুন্দর ও কার্যকরী সমাধান করা আশু প্রয়োজন।
ছবি: গুগল
তথ্যসূত্র:
১. দৈনিক জনকণ্ঠ;
২. দৈনিক ইত্তেফাক;
৩. একাত্তর টিভি ও অন্যান্য।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:০৯