“আই হেইট পলিটিক্স”-এর স্লোগানধারীরা সন্ত্রাসবাদী হয় কীভাবে?
সাইয়িদ রফিকুল হক
আগে মানুষ দেশ ও দশের জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতো। এতে দেশ ও দশের মঙ্গলও হতো। আর এখন একশ্রেণির কুলাঙ্গার দেশকে ও দেশের মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করার জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। এরা সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। দেশ ও দেশের মানুষকে জিম্মি করছে। দেশের ক্ষতিসাধন করাই যেন এদের একমাত্র নেশা ও সাধনা। প্রচণ্ড ধ্বংস-নেশায় উন্মত্ত হয়ে এরা নৈরাজ্য ও হঠকারিতায় লিপ্ত হয়েছে। এদের কোনোভাবেই ভালো তো বলা যায়ই-না। এরা মানুষ কি-না তা নিয়েও রয়েছে ঘোরতর সন্দেহ!
ব্যক্তিস্বার্থে, কারও উস্কানিতে, আর অপরাজনীতর স্বার্থে যারা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাদের বিরুদ্ধে দেশ ও দেশের মানুষের একতাবদ্ধ হওয়া উচিত। তাদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত “ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট”। এর বিকল্পভাবনা এখনও আমার মাথায় আসেনি। পরে এলে সংশোধন করে দিবো।
১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক “শান্তিচুক্তি”র পর থেকে পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করছিল। এতে পাহাড়িরা শান্তিতে ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করে আসছিল। “শান্তিচুক্তি”র পর “শান্তিবাহিনী”র লোকেরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল। এর ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিল পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র। কিন্তু যাদের মনে ব্যাধি ও শয়তানি তারা মানুষের এই সুখশান্তি কখনোই সহ্য করতে পারে না।
২০১৭ সালের দিকে পাহাড় আবার অশান্ত হয়ে উঠতে থাকে। “মিয়ানমার” নামক সন্ত্রাস-রাষ্ট্রের সহযোগিতায়, পৃষ্ঠপোষকতায় ও মদদে পাহাড়ি মানুষের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে গড়ে ওঠে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন “কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট” (কেএনএফ)। এর নেতা হিসাবে আবির্ভূত হতে থাকে একটা নাথান বম। তবে কিছুদিন সে এনজিও-ব্যবসাও করেছে। কিন্তু তাতে পুরোপুরি মন দিতে ও মন বসাতে পারেনি। কিন্তু দেখা যায় তখন সে লোকসমাজে অবাধে চলাফেরা করতো। তfর কারণ, সে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অশগ্রহণ করতে চেয়েছিল। সে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিল। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
জনশ্রুতি আছে, সেই বছর নাথান ও আরও কয়েকটি যুবক মিলেমিশে নাকি পার্শ্ববর্তী “মিয়ানমারে”র চিন রাজ্যে গিয়েছিল। এরপর সে নাকি প্রায়ই ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যে যাতায়াত করতো বলে জানা যায়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে নাথান স্থানীয় একজনকে নিজের এনজিওর অফিসে তুলে ব্যাপক মারধর করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এভাবেই সর্বপ্রথম নাথানের সন্ত্রাস আত্মপ্রকাশ করে। সেদিন এই ঘটনার পর পরই সে এলাকা ত্যাগ করেছিল।
নাথান বম বর্তমানে ভয়ানক জঙ্গি টাইপের সন্ত্রাসী। এর পুরো নাম নাথান লনচেও বম। পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন বম-জঙ্গি নেতা। সে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামক একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি-সংগঠনের প্রতিষ্ঠাত-সভাপতি। এর পাশাপাশি সে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ) নামক জঙ্গি-আর্মির নেতা হিসেবে দায়িত্বও পালন করছে। ২০১৭ সালে এই জঙ্গি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সে অজ্ঞাত। ওয়াকিবহালদের মতে, কেএনএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁর অবস্থান একেবারে অজ্ঞাত ও অজানা। কিন্তু সে নিয়মিত পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। শান্তি আলোচনার কথা বলে সে তিনবার কথার বরখেলাফ করেছে। সবশেষে সে বান্দরবানের একটা ব্যাংকে ডাকাতি করে তাতে ব্যাপক লুটপাটও করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, এই নাথান বম একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের “চারুকলা” অনুষদের শিক্ষার্থী ছিল। এরা কত আদর্শের কথা বলেছে তখন। আর কথায়-কথায় বলতো “আই হেইট পলিটিক্স”। এরা তখন চলমান ও সুস্থধারার রাজনীতিকে অগ্রাহ্য করে কথিত “আই হেইট পলিটিক্স” নামক ভ্রান্তধারা ও ভ্রান্তধারণার জন্ম দিয়েছিল। এরা মনে করতো, রাজনীতিকে ঘৃণা করতে পারলেই আধুনিক ও ভালোমানুষ হওয়া যাবে! চারুকলায় সে নাকি একসময় বেশ মেধাবী শিক্ষার্থীও ছিল। সেখান থেকে স্নাতক করার পর সে যুক্তরাজ্যেও পড়ালেখা করেছে। এখন এদের এই দেশবিরোধী অপরাজনীতি করতে সামান্যতম লজ্জাবোধ করে না? নাকি এখনও মূর্খের মতো বলবে: “আই হেইট পলিটিক্স”!
এখন আমাদের প্রশ্ন: যারা একদা মনে মনে রাজনীতিকে প্রবলভাবে ঘৃণা করতো। যারা মুখে-মুখে বলতো “আই হেইট পলিটিক্স” তারা কীভাবে, এভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী হয়? কেউ জানলে দয়া করে উত্তরটা দিবেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে আরও জেনেছি, এই নাথান বম নাকি চাকরি পেতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ, সে চাকরি খুঁজে পায়নি!!! চাকরি জোগাড় করতে পারেনি!!! আবার শুনেছি, সে ব্যবসা করতে গিয়েও নাকি ব্যর্থ হয়েছে!!! এই সামান্য ব্যর্থতা!!! মানুষের জীবনে কতরকমের ব্যর্থতা থাকে। মানুষ কতকিছুতে ব্যর্থ হয়!!! তাই বলে ব্যর্থতার দায়ভার সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে দিয়ে কাউকে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদী হয়ে যেতে হবে?
নাথান বম’রা আসলেই ভণ্ড। আপাদমস্তক ভণ্ড। আর চূড়ান্তভাবে ভণ্ড। তাই, তারা নিজের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারেনি। নিজে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা তার নিজের সম্পূর্ণ একার। এজন্য সে কখনোই সন্ত্রাসের মতো ঘৃণ্য পথ বেছে নিতে পারে না।
নাথান বম’রা নাকি ক্ষুদ্র একটা জনগোষ্ঠীর অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে এদের সংখ্যা পাঁচ-ছয়শ’র বেশি নয়। তারা পাঁচ ভাই ও এক বোন। সে সবার ছোট। তাছাড়াও তার নিজস্ব পরিবার রয়েছে। তার স্ত্রী একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে। তার গোটা পরিবারের ভবিষ্যৎ কী? চরম অবিবেচক ও নিতান্ত মূর্খ ব্যতীত এমন কাজ কেউ কখনো করবে? এর বিচারের ভার পাঠকের হাতে তুলে দিলাম।
পরিশেষে মনে আবারও প্রশ্ন জাগে: যারা একসময় কথায়-কথায় বলতো “আই হেইট পলিটিক্স” তারা কীভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হয়? এদের মধ্যে কি একবারও বিবেকবোধ জাগ্রত হবে না?
ছবি: গুগল
সাইয়িদ রফিকুল হক
বটিয়াঘাটা, খুলনা।
০৮-০৪-২০২৪
তথ্যনির্দেশ:
দৈনিক জনকণ্ঠ
দৈনিক খবরের কাগজ
দৈনিক মানবকণ্ঠ
দৈনিক ইত্তেফাক
ও
লেখকের নিজস্ব বিশ্লেষণ ও অভিমত।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১৮