
করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এসে বাঁধিয়ে দিলো আরেক হুলস্থুল কান্ড। আর তাই ২০২২ ছিল সংকটে ভরা একটি বছর। তবে ২০২২ সালে যেই ধ্বস নেমেছিল, তার প্রভাব থাকবে ২০২৩ সালেও। সবদিক বিবেচনা করলে এ বছরটি হবে একদমই অন্যরকম। কেমন হবে এ বছরের আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অবস্থা?
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মন্দা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইতালির মন্দা হবে দীর্ঘস্থায়ী। আর এজন্য সিইবিআর ২০২২ সালের সুদবৃদ্ধিকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর এই উচ্চ সুদহার বাড়তে পারে এ বছরেও। কারণ সুদহার বৃদ্ধির লক্ষ্য হলো মুদ্রাস্ফীতি বা ইনফ্লেশন হ্রাস করা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে নতুন বছরেও মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে গত চল্লিশ বছরের তুলনার সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। আইএমএফ এর দেওয়া তথ্য বলছে, এ বছরে মুদ্রাস্ফীতি ৮.৮% থেকে কমে ৬% হতে পারে। তবে সাধারণ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পরিমাণটা হবে প্রায় ৮.১%। আর তাই নিশ্চিতভাতেই বলা যায় যে সুদহার কমার কোনো আশা নেই।
তাহলে বৈশ্বিক মন্দা কি ঊর্ধ্বমুখী হবে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো যতদিন না পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার কমছে, ততদিন পর্যন্ত এমনই চলবে। আর তাই এতসব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই গেল বছরে আইএমএফ বলেছিল যে খারাপ সময় আসা এখনো বাকি আছে। আর এভাবেই যদি চলতে থাকে,তাহলে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কমবে প্রবৃদ্ধি। বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০২২ সালের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৩,২%, যা এ বছরে এসে হতে পারে ২.৭% তবে ওইসিডি বলছে যে এই সংখ্যাটা হবে ২.২%। আর এগুলো মিলে ডেকে আনতে পারে স্ট্যাগক্লেশন।

যখন মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়, কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হয়, তখন সেটাকে স্ট্যাগক্লেশন বলে। আর এর কারণে একটি দেশ দুর্বল হয়ে যায় এবং সে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, যেমনটা হয়েছিল ১৫৪৪-১৫৪৫ সালে। ঐ সময় ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি রাজস্বের পরিমাণ বাড়াতে প্রায় দেড় লাখ পাউন্ড মূল্যের রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এরকম পরিস্থিতি না হলেও এ বছরের মুদ্রাস্ফীতিযুক্ত অর্থনীতি খুব বেশি সুবিধাজনক হবে না। আর তাই বিশ্বব্যাংক আগেই সতর্ক করে বলে দিয়েছে যে সামনের দিনে এর চেয়েও খারাপ অবস্থা হতে পারে।
এতকিছুর মাঝে চীন আবার নতুন রূপে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিযোগিতার নামতে চলেছে। জনগণের চাপে চীন সরকার "জিরো কোভিড” নীতি থেকে সরতে বাধ্য হচ্ছে। ৮ জানুয়ারি চীন আন্তর্জাতিক সীমানা খুলে দিয়েছে। প্রায় ৩ বছর পরে দেশটি এখন নতুন করে উৎপাদন ও রপ্তানির বন্যা বইয়ে দিবে বলে অনেকের ধারণা। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এ দেশটি জনগণের চাপের মুখে পরে কতটা দ্রুত শক্তিশালী অবস্থানে গিয়ে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে পারবে সেটাও একটা প্রশ্ন। তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট নিরসনে চীনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার মতো ক্ষমতা আছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিপ্লব কিংবা প্রবৃদ্ধি যা-ই হোক না কেন সংকট কিন্তু দূরীভূত হবে না। সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটার সংকট হতে পারে, তা হলো জ্বালানি। এই সংকটে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যারা রাশিয়ার গ্যাসের উপরে নির্ভরশীল। আর এক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলো রয়েছে শীর্ষে। এই দেশগুলো কাতার, ওমান ও নরওয়ের কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি করলেও, তা যথেষ্ট নয়। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি ফান্ড জানিয়েছে যে ২০২৩ সালেও ইউরোপ জুড়ে গ্যাস সংকট থাকবে । আগেই বলেছি চীন অর্থনীতিতে নতুন করে অবস্থান দখল করতে যাচ্ছে । আর এই যাত্রা যদি হয় সাডম্বরে, তাহলে চীনের প্রচুর জ্বালানি ব্যয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা ও সংকট বাড়বেই।

বৈশ্বিক বাণিজ্যের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে প্রযুক্তি বাণিজ্য। আমরা দেখেছি যে ২০২২ সালে এই খাতে মারাত্মক ধস নেমেছিল। মেটা-গুগল এবং আমাজনের মতো কোম্পানিগুলো বহু কর্মী ছাঁটাই করেছে। একই সাথে এসব কোম্পানির লস হয়েছে প্রচুর, যার সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি ডলার। তাই ২০২৩ সালে আইটি খাতের উন্নয়নে বিশ্বকে নড়েচড়ে বসতে হবে। একটি ভুল সিদ্ধান্ত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যেহেতু ২০২২ সালে প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সামষ্টিক লাভের পরিমাণ কম ছিল, তাই অনেকেই মার্কেটিং এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমাতে চলেছে। আর এর প্রভাবটা সরাসরি গিয়ে পড়েছে গুগল মেটা এবং অ্যামাজনের ওপরে। কারণ এই তিন কোম্পানির দখলে রয়েছে বিশ্বের মোট ডিজিটাল অ্যাডভারটাইসমেন্ট মার্কেটের ৭৪%।
এছাড়াও ২০২৩ সালে আরেকটি খাত প্রভাবিত হবে সেটি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির জগৎ। এটার প্রমাণ মিলেছে বিটকয়েনের মূল্যের দর পতন থেকে। ২০২২ সালের শুরুতে যে বিটকয়েনের মূল্য ছিল প্রায় ৪৬০০০ ডলার, বছর শেষে সেই বিটকয়েনের মূল্য ছিল প্রায় ১৬৫০০ ডলার। এছাড়াও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত এফটিএক্সের দূর্নীতিও এই জগৎকে বেশ নড়বড়ে করে দিয়েছে। তবে একটি বিশেষ আইটি খাতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদেরা। সেটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুনিয়া। এর উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আর যদি এগুলো সফল হয়, তাহলে এআইয়ের ব্যবহার বাড়বে এবং উন্নত প্রযুক্তি আমদানি-রপ্তানির ঢল নামবে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিখাত সমৃদ্ধ হবে। তার উপরে চীন যদি পূর্ণশক্তি নিয়ে অর্থনৈতিক যুদ্ধে নামতে পারে, তাহলে তো কথাই নাই!
এখন প্রশ্ন আসতে পারে বিশ্বের অর্থনীতির এই অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাধারন নাগরিকদের মতামত কি? এক কথায় বলতে গেলে তারা আসলে বেশ উদ্বিগ্ন। গত ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্যারিস ভিত্তিক সংস্থা ইপসস বিভিন্ন দেশে ২৪,৪৭১ জনের মধ্যে একটি জরিশ পরিচালনা করে। এই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৫% ব্যক্তি বলেছেন যে মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের তুলনায় এবছর বেশি হবে। ৭৪% মানুষের ধারণা যে সুদহার ও পূর্বের তুলনায় বাড়বে। উদ্বেগের বিষয় হলো ৬৮% ব্যক্তি মনে করেন, এ বছরে বেকারত্বের হারও বাড়বে। জরিপের প্রায় অর্ধেক মানুষের ধারণা হলো বিশ্বের প্রধান শেয়ার বাজার গুলোর পতন ঘটবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষও ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শংকিত।
কিন্তু ও প্রশ্ন হল আমাদের বাংলাদেশের কি হবে? বাংলাদেশ কোনভাবেই আশংকার বাইরে নয়। ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ এবং বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধিই হবে এ বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশেও এই তিনটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। এমনিতেই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভাটা পড়েছে, তার উপর যদি মন্দা তীব্রতর হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বাংলাদেশ কী কী সম্ভাবনা, সমস্যা ও আশঙ্কার মুখোমুখি হতে পারে সেটা নিয়েই কথা বলব।
প্রথমে সমস্যা ও আশঙ্কার ব্যাপারে বলি। আসলে আমরা এখনো করোনার ধাক্কা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। তাই আমাদের জন্য এ বছরটা খুব ভালো ভাবে না। সমস্যা আর সংকট লেগেই থাকবে। এক্ষেত্রে সবার আগে ব্যাংকের সমস্যার কথা বলতে হয়। বর্তমানে দেশের ২০টির ও অধিক ব্যাংক ঋণ খেলাপি-টাকা নয় ছয় করে এবং দেউলিয়ার কাতারে নাম লিখিয়েছে। তাই এর প্রভাবে জাতীয় অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি জনজীবনেও দুর্ভোগ নেমে আসবে। আর এর জন্য দায়ী হলো কেন্দ্রীয ব্যাংকের দুর্বলতা, সরকারের অবহেলা এবং সুশাসনের অভাব।
এখানেই শেষ নয়; অর্থ পাচার ও একটি বিরাট সমস্যা। দেশের প্রভাবশালী ও ধনী বক্তিরা অর্থ পাচার করছে সুইস ব্যাংকে এবং বিদেশে গড়ছে "বেগম পাড়া"। আর এর পাশাপাশি যেহেতু দেশের রিজার্ভে ডলারের সংকট,তাই বাংলাদেশ এখন বহুলাংশে রেমিটেন্স নির্ভর হবে। তবে হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা এদেশে প্রবেশ করলে সেক্ষেত্রে সরকারকে হিমশিম খেতে হবে।
আগেই বলেছি যে মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বকে খুব যন্ত্রণা দিবে। আর এই যন্ত্রণার ফলে একটি দেশ মারাত্মক সংকটে পড়তে পারে যেমনটা হয়েছিল ১৫৪৪-১৫৪৫ সালে। সেকালে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে দেড় লাখ পাউন্ডের রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হন। যদিও বাংলাদেশকে এতটা বাজে অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না, তবে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হবে। দেশের বাজারে অনেকক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ী বা নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট কর্তৃক খাদ্য গুদামজাত করণ ও অনিয়ন্ত্রিত দামবৃদ্ধির ফলে এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ জনগণের উপরে। আর এটা ২০২২ সালে মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি বাজারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল না করা যায়, তাহলে আর্থ- সামাজিক উন্নতি তো হবেই না, উল্টো জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকা বারবার থেমে যাবে।
আরও সমস্যা আছে৷ আমাদের পোশাক ও ট্যানারি শিল্পে বহু ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান নাগরিকেরা কাজ করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ধারা অব্যহত থাকলে এ বছর আমাদের অর্থনীতিতে বেশ চাপ পড়বে এবং অনেকেই কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার থেকে যাবে। আরেকটা কথা না বললেই নয়। যেহেতু ২০২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই এ বছর সরকার বিভিন্ন খাতে প্রচুর খরচ করবে। আর এক্ষেত্রে প্রথম টার্গেট হবে ব্যবসায়ীরা। তবে সরকার হয়ত সেবা খাতে ভর্তুকি কমাবে। যদি এমনটা হয়, তাহলে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের দাম বাড়বে বা অসহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
নিম্ন রাজস্ব নিয়ে যেহেতু নতুন বছর শুরু হয়েছে, তাই বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির খুব বেশি আশা করা যায় না। এর উপর যদি দুর্নীতি বাড়ে, তাহলে তো একদম জলে ডুবে মরতে হবে। যেহেতু সব দিকেই চাপ থাকবে, তাই উদ্যোক্তারা ঝুঁকিও মধ্যে থাকবে। আমরা দেখেছি যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে অনেক স্টার্টআপই পেছনে পড়ে গেছে, কেউ বা ব্যবসার প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে গেছে। আসলে এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে। ২০২২ সালে স্টার্টআপের রাজধানী খ্যাত খোদ ইসরায়েলেই বৈশ্বিক বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৫০%। আর এ কারণে অনেক স্টার্টআপ হারিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালেও এই দশা দেখা দিবে। তবে আশা করা যায় এ বছরের শেষের দিকে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দেশের উদ্যোক্তারা ধীরে ধীরে ট্র্যাকে ফিরে আসতে পারবে, যদি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকে।

এতসব সমস্যার মাঝে অনেকে IMF এর ঋণের কথা ভাবছেন। তারা ভাবছেন যে আইএমএফ ঋণ দিলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাবে। কিন্তু এ ধারণা খুব একটা সত্যি হবে বলে মনে হয় না। কারণ আই এম এফ ঋণ দিবে কিস্তিতে, পুরোটা একবারে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশের প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। কারণ দেশে এখন গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রচুর ঘাটতি। এ ঘাটতি মেটাতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অনুদান একবারে প্রয়োজন। এছাড়াও অন্যান্য চাহিদা তো রয়েছেই।
এখন প্রশ্ন হলো- তাহলে সম্ভাবনা বা সমস্যার সমাধান কোথায়? বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় দেশ-একচোখ করেই বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো বহুলাংশে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উপর নির্ভরশীল। তাই রপ্তানি বাড়াতে হবে। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেশে যেভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে, তা যদি এবছরেও দূরীভূত না হয়, তাহলে শিল্পক্ষেত্র গুলো এগোতে পারবে না। বৃহৎ মাঝারি শিল্পগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা থাকবে, যদি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হয়। আর এর মাধ্যমে হয়ত কিছুটা প্রশান্তি পাওয়া যেতে পার।
একটি কথা না বললেই নয়। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ২০২৩ সাল হবে অন্যরকম। উন্নত বিশ্বের কোম্পানিগুলা চাইবে স্বল্প খরচে সার্ভিস পেতে। আর এই সুযোগটাই যদি বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা লুফে নিতে পারে। তাহলে তাদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আর এর ফলে অর্থনীতির উপর থেকে, কিছুটা হলেও চাপ কমবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জোর দেওয়া উচিৎ। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে থাকে। বিপুল সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ার দের একটা অংশকে যদি বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ করে গড়ে তোলা যার তাহলে দুটি ফায়দা পাওয়া যেতে পারে। প্রথমত তাদের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তিশিল্পে ব্যপক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত তাদেরকে কিংবা এসব প্রযুক্তিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হার বাড়তে পারে।
তাহলে শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত তথ্য, ধারণা আর বাস্তবতা, জানতে পারলাম, সেগুলোর সারমর্ম কী? ২০২৩ সাল বিশ্ববাসীর জন্য উদ্বেগজনক হবে। তবে এই উদ্বেগের মাঝে তারাই প্রশান্তির দেখা পারে, যাদের নাগরিক এবং সরকার উভয়ই সচেতন হয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে লড়াই করে যাবে। আর বাংলাদেশের কথা যদি বলতে হয়, তবে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশিঃ প্রথমত, সরকারের সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত অর্থনীতি এবং গ্যাস। বিদ্যুতের মতো উপাদানের পর্যাপ্ত সরবরাহ। আশা করি আমাদের দেশ থমকে যাবে না, বরং লড়াই করবে। আমাদেরকে শুধু কাজ করে যেতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




