somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোগবাদ, র্দূনীতি ও কর্পোরেট বাণিজ্য (ষষ্ঠ পর্ব)

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ বিশ্বায়নের ডামাডোলে বিশ্বজুড়ে আজ চলছে ভোগবাদ দর্শনের প্রচন্ড দাপট। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মনন আজ "ভোগেই তৃপ্তি"- এ বেদবাক্যে উজ্জীবিত। চারদিকে 'চাই, চাই আরো চাই" ধ্বনি। খোদ আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর গরীবতর দেশ এ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একাংশ পর্যন্ত এই ভোগবাদ দর্শনকে ক্রমান্বয়ে করে নিচ্ছে জীবনের ব্রত। এ ভোগবাদ দর্শনের স্বরূপ উন্মোচনের লক্ষ্যেই এ লেখার অবতারণা। কয়েকটি পর্বে এ লেখাটি সম্পন্ন হবে। বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কাঙ্খিত।]

প্রথম পর্ব: Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link
তৃতীয় পর্ব: Click This Link
চতুর্থ পর্ব: Click This Link
পঞ্চম পর্ব: Click This Link

ষষ্ঠ অধ্যায়

বিশ্বব্যাপি সর্বগ্রাসী দূর্নীতি এবং ভোগবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। দূর্নীতি মূলত: নৈতিকতা এবং মানবতা বিরোধী কার্যক্রম। বুশ কতৃক পরিচালিত ইরাকে আগ্রাসী যুদ্ধ ছিল পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানবতা বিরোধী কার্যক্রম। এই যুদ্ধের মূল কারণ বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর ইরাকের খনিজ সম্পদ লুন্ঠনের প্রয়াস। এ যুদ্ধ শুধুমাত্র নৈতিকতা বিরোধী ছিল না বরঞ্চ যুদ্ধটি সংগঠিত হয়েছিল আর্ন্তজাতিক আইনের সব বিধি নিষেধ অমান্য করেই। বাংলাদেশের লুম্পেন বুর্জোয়া শ্রেণী যে দূর্নীতি তরে থাকে মাত্রা বিবেচনায় বুশ কতৃক ইরাক আক্রমণ কি কম দূর্নীতি?

আবার কর্পোরেট সংস্কৃতি যখন রাষ্ট্রের সব আইন মেনেও ধনী-দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টির কার্যকারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কি তাকে সুনীতি আখ্যা দেওয়া যায়? উন্নত বিশ্বে কর্পোরেটগুলো অনেক নৈতিকতা বিরোধী কার্যক্রমকে আইনসিদ্ধ করে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো যে নীতিহীন দূর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় কিংবা আর্ন্তজাতিক আইনি কাঠামোয় সিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে এর উৎসমুখ কোথায়? এর উৎসমুখ অনুধাবন করতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে পুজিঁবাদী দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূলভাগীদার কারা এবং কারাই বা রাষ্ট্রের নেপথ্য চালিকা শক্তি।

বর্তমান বিশ্বরাজনীতির ভরকেন্দ্র, পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কথাই বিবেচনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্র তার রাষ্ট্রকাঠামোতে বহুবছর পুঁজিবাদী দর্শন চর্চা করে আজ নব্য পুজিঁবাদ তথা ভোগবাদী সমাজে পরিণত।

ইংরেজী একটি প্রবাদ -- He who has the gold makes rules -- স্বর্ণের মালিক যিনি তিনিই হয়ে থাকেন আইন প্রণয়নকারী। পুজিঁবাদী বিশ্বের জন্য এ প্রবাদটি যে চরম সত্য তা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিশ্লেষণেই প্রতীয়মান হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার ভাগীদার দুটি দল রিপাবলিক এবং ডেমোক্রেট কহুজাতিক কোম্পানীগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। অন্যান্য যে সব ছোট দল যারা পুঁজিবাদী দর্শনের বিপক্ষে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবি মানুষ সহ সেখানকার ১৩% জনগোষ্ঠী যারা দারিদ্র সীমার নীচে রয়েছে তাদের সপক্ষে কথা বলে , সে সব ছোট দল মূলত: আর্থিক কারণেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না। আমাদের দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত দেশগুলোতেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য টাকা একটি বড় উপকরণ। এই প্রস্তাবনা প্রতিফলিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের আর্থসামাজিক অবস্থান বিশ্লেষণে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের এ পর্যন্ত নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিদের অর্ধেকেরও বেশী উপরের দিকের ৩% ধনীক শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত। আর এদের কমপক্ষে ১২ জন হচ্ছে উচ্চমার্গের এলিট শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত। ২০০৫ সালের এক সমীক্ষায় জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩৫ জন রিপ্রেজেনটেটিভদের মধ্যে ১৪৩ জনই বিলিয়নার। অন্যদিকে প্রতি ৩ জন সিনেটরদের মাঝে একজন বিলিয়নার। এই সব ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ কোন না কোনভাবে কর্পোরেট বা বহুজাতিক সংস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই তথাকথিত গণপ্রতিনিধিদের স্বার্থ মূলত: কর্পোরেট স্বার্থ। এখানে প্রসঙ্গত: উল্লেখ করা যেতে পারে ক্লিন্টন এবং বুশ প্রশাসন কতৃক প্রণীত GATT (General Agreement on Tariff and Trade) -এর একটি নীতিমালা সংশোধনের কথা। GATT এর পুরানো নীতিমালায় মানবেতর অবস্থায় শ্রমিকদের দিয়ে কিংবা পরিবেশ দূষণকারী ব্যবস্থায় পণ্য উৎপাদন করলে উৎপাদনকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হত। কর্পোরেট বাণিজ্যের স্বার্থে নতুন নীতিমালায় এ শাস্তি ব্যবস্থা রদ করা হয়। মোদ্দা কথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা হয় কর্পোরেট বাণিজ্যের স্বার্থে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রাধীন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ প্রভৃতির নীতিমালাগুলোও কর্পোরেট স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।

যা-হোক, যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো, যারা বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর মালিক সে সব দেশে দূর্নীতি দৃশ্যমান নয় কারন তারা বহুলাংশেই নৈতিক দূর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইন সিদ্ধ করে নিয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

চলবে ....











[
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৫৯
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×