বঙ্গবন্ধুর লোকান্তরিত হওয়ার পর থেকে আওয়ামীলীগ কর্তৃক ভারতের পাচাটার দৃশ্যটি যে হারে বৃদ্ধি পেয়ে আসছে তারই একটি নিদর্শন হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের এই অরাজকতাপূর্ণ অবস্থা। মধ্যখানে আমরা নিজেদেরকে নিরপেক্ষ দাবী করতে গিয়ে কোন দিকে চলে যাচ্ছি তা স্পষ্ট করতে পারছি না। নিজেদের শুদ্ধিকরণ আমাদেরকে ধাবিত করছে এই অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার সহায়ক হিসেবে।
বিবিসির ২ নভেম্বরের নিউজে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হেফাজতের যে কর্মকাণ্ডের বর্ণনা আসে তা ছিল গত শুক্রবারের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাপকতা বিস্তারকারী আন্দোলন। অথচ তার দমন প্রক্রিয়া ছিল গত শুক্রবারের তুলনায় অনেক নমনীয় পর্যায়ের। প্রশ্ন এখানে আওয়াজ তুলে, গত শুক্রবারের দু'শ মুসল্লিকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের প্রশাসনকে কেন এতো কঠোরতা অবলম্বন করতে হল? যদি প্রশাসন নামের আওয়ামীলীগের সেবকেরা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হেফাজতের তাণ্ডবপূর্ণ আন্দোলনে কোন আক্রমণ পূর্বক সমাধান বের করতে পারে তবে গত শুক্রবারে কেন পারলো না?
গত শুক্রবার যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় মসজিদের মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করার দৃশ্য আমাদের সামনে না আসার কারণ আমাদের সাংবাদিক ভাইদের উপর আক্রমণ। হ্যা, এমনটাই ঘটে সবসময়। আওয়ামিলীগ ও তার অঙ্গ সংঘঠনগুলো নিজেদের অপকর্মের কোন ক্লু কখনো রাখতে চায় না। সেই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবারে ছবি তুলতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর তারা হামলা করে। কারও ক্যামেরা, কারও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। গত শুক্রবার অন্তত ১০ জন সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিক আহত হন।
বায়তুল মুকাররমের দক্ষিণ গেটে আন্দোলনকারী ২০০ জন মুসল্লীকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের পুলিশলীগ ১ হাজার ১৩৭টি গুলি (৮২৭টি রাবার ও ৩১০টি সিসা) ও ৯৩ কাঁদানে গ্যাসের শেলও নিক্ষেপ করে। যদিও পুলিশের দাবী এখানে দু'পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতেই তারা এর আশ্রয় নেয়। কিন্তু তাদের এক তরফা এই দাবী না মানা ছাড়া আমাদের গণমাধ্যমের অন্য কোন পথ খোলা নেই।
বড়ই দুঃখের বিষয় যে, বর্তমান বাংলাদেশে আন্দোলনের জন্য কারো জন্যই কোন উপযুক্ত স্থান খোলা নেই। আবার সবার জন্যই খোলা। সরকার দেশটাকে নিজের মত করে পরিচালনা করতে গিয়ে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের অদক্ষতার ছাপকে গ্রহণ করছে সফলতার সার্টিফিকেট হিসেবে। বিশ্বে তা দেখাচ্ছে নিজেদের পয়েন্ট বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে। সেখানে কোন কোন আন্দোলনকারীর কপালে ঘটছে ঘরে ফেরা আর কোন কোন আন্দোলনকারীর ভাগ্যে জোটছে মৃত্যু। সহজ ভাষায় বলা গেলে, বর্তমান বাঙলায় জন্ম ও মৃত্যুর মালিক কেবলই আওয়ামিলীগ।
আমি এই পোস্টে কোন মোল্লা তন্ত্রের পক্ষ নিচ্ছি না। আমি কথা বলি বাঙালি নিয়ে। যেখানে যুক্ত হিন্দু—মুসলিম, আওয়ামী—বিএনপি সবাই। আমার এই বিষয়ের লেখা এক পোস্টেই সমাপ্ত হওয়ার নয়। যদি পুলিশলীগ বায়তুল মুকাররমে আক্রমণ না করে শান্তভাবে আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতো। তবে হাটহাজারীতে পাঁচটি নিরিহ প্রাণের মৃত্যু ঘটতো না। পুলিশের আক্রমণের পরেই হাটহাজারীতে আক্রমণ হয়। যদি বায়তুল মুকাররমে পুলিশলীগ আন্দোলকারীদের উপর ১ হাজার ১৩৭টি গুলি (৮২৭টি রাবার ও ৩১০টি সিসা) ও ৯৩ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ না করে কৌশলে শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হত, তবে দেশের এমন অরাজকতার সৃষ্টি হতো না।
পরিশেষে বলতে গেলে, পুলিশের এই স্বেচ্ছাচারিতা ও হেফাজতের এই বোকামিতে যে ক্ষতি হয়েছে তার পুরো দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। সরকার দলীয় আওয়ামীলীগকেই বহন করতে হবে এই ১৯টি মৃত্যুর দায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬