'মানবতার জন্য ইসলাম কতটুকু কল্যাণকামী?' প্রশ্নে মুসলিমরা একটু নড়েচড়ে বসবেন এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মুসলিমদের অধিকাংশই জন্মসূত্রে মুসলিম। সে কারণে অধিকাংশজন ধর্মের ব্যাপারে শুনা কথাকেই ইশ্বরের কথা বলে ধরে নেন। আর এই সুযোগে ধর্ম ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেন তাদের নিকট এক-একজন ইশ্বর।
ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক, ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, আযহারী, মাওদুদী, আহলে হাদিস, ফুলতলী, রেজবী, আটরশী, মাইজভান্ডারি, দেওয়ানভাগীদের ভক্তরা সে কারণেই নিজেদের পীর/আমীরদের বিরুদ্ধে কোন সত্য কথাকেও সহজে মেনে নিতে পারে না। আর এই না মেনে নেওয়ার স্বাভাবিক বিষয়টাই সৃষ্টির প্রতি ইশ্বরের দাবী। ইশ্বর তার সৃষ্টির নিকট যেমন প্রাপ্তির আশা করেন পূজা, তেমনি আমাদের এইসব পীরেরা নিজেদের ভক্তকুলের কাছে দাবী করেন তাদের প্রতি একক বিশ্বাস। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ইবাদতের নাম করে ভক্তদের থেকে তারা এই একক বিশ্বাস আদায় করে নেন অতি কৌশলে। এভাবে ধর্মভীরুর নাম করে সমাজে সৃষ্টি হয় ধর্মান্ধ। সে কারণেই আমরা দেখি, এই ধর্মান্ধ ভক্তরা নিজেদের ইশ্বরদের জন্য সত্য অস্বীকারের বিশ্বাসকে হৃদয়ে লালন করেন এবং নিজেদের ইশ্বরদের অপপ্রচারে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডকে বারবার অস্থিতিশীল করে তুলেন। কেহ তা করেন নিরবে, কেহ বা করেন হট্টগোলের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ ধর্ম পালন করতে গিয়ে এই যে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি(এইসব পীর/আমীর)কে ইশ্বর ভেবে ধর্ম পালন করে যাচ্ছেন তা কিন্তু ইসলাম নয়। এই পন্থা বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়ে যায়, ইসলাম ধর্মের নামে অসংখ্য অধর্ম সৃষ্টি হয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। এই অধর্মের ভেতর কিন্তু মানবতার বেঁচে থাকা হয়ে উঠছে না। নিজেদের অধর্ম রক্ষায় এসকল আশেকানরা মানবতারিরোধী কত যে কুকর্ম করে চলেছেন তা বর্ণনাতীত। এরা খুবই অনায়াসে নিজদের কুধর্মের জন্য যে কাউকে জবাই করতে পারেন। তারা ইসলামের নাম করে, জিহাদের নাম করে মানুষের শান্তি কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে সমাজকে করে তুলে উত্তপ্ত, সুষ্ঠু মানুষের জন্য বসবাসের অনুপযোগী। এভাবেই তারা সুদীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে মানুষের স্বাধীনতা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ভিন্ন-ভিন্ন দলের প্রত্যেকে নিজেদের সাচ্চা মুসলিম দাবী করেন, তবে প্রকৃতার্থে এদের মধ্যে কে সাচ্চা মুসলিম তা বুঝা সাধারণের জন্য বিরাট দায়। মুখে মুসলিম দাবি করলেও বাস্তবে তারা যা করেন তা কিন্তু ইসলামের অংশ নয়। তারা ইসলামের নাম করে নিজেদের উগ্রতায় রাজপথে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে দাঙ্গাফাসাদের মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলছেন। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অনুষ্ঠানে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে দেখা যায়। যদিও আমি আজ পর্যন্ত এদেরকে মানবতার জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক হতে দেখি নি। যা দেখেছি তা তাদের নিজেদের মধ্যে ডাস্টবিনের কাদাছোড়াছোড়ি ছাড়া ব্যতিক্রম কিছু নয়। যদি তারা সত্যিকার অর্থেই ইসলামকে লালন করতেন, তবে কেন তারা নিজেদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলেন?
একটা গল্প দিয়ে শেষ করলে বুঝে আসবে তা খুব সহজে।
একবার সন্ত্রাসি জঙ্গিরা রাস্তায় এমন একটা গাড়ি থামায় যে গাড়ির ভিতরে এক খ্রিষ্টান দম্পতী ছিলেন। এরকম গাড়ি থামিয়ে নির্যাতন করা তাদের নিত্যকার আমল। তো জঙ্গিরা তাদের গাড়ি থেকে টেনে বের করে জিজ্ঞেস করল,
– মুসলমান নাকি?
ভদ্রলোক উত্তর দিলেন,
– হ্যাঁ।
এবার বুদ্ধি করে জিজ্ঞেস করল,
– কোরআনের একটা আয়াত বলো তো?
ভদ্রলোক চোখ বন্ধ করে, বাইবেলের একটা বড় প্যারাগ্রাফ বলে গেলেন!
জঙ্গিরা খুশিতে গদগদকণ্ঠে বলল,
– আলহামদুলিল্লাহ.. তোমরা যেতে পারো।
গাড়িতে উঠে ভদ্রলোকের স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন,
– তোমার সাহস তো কম না... যদি জঙ্গিরা বুঝে যেত যে এটা কোরআনের কোন আয়াত না! তবে কী হতো একবার ভেবে দেখেছো?
ভদ্রলোক উত্তর দিলেন,
– যদি তারা আসলেই কোরআন জানতো, তাহলে আজ জঙ্গি হতো না।
ছবিঃ সামু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৭:৫৯