somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনের বাড়িতে পাঠানো ইফতারি নামক যৌতুকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান!

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পবিত্র রমাজান মাস মুসলিমদের জন্য রহমত মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস; যা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। তাকওয়া অর্জনের জন্য কেবলমাত্র নামাজ ও রোজা আদায় যথেষ্ট নয়। নামায ও রোজার পাশাপাশি আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে সংশোধনের। বাকি ১১মাসে করা সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে তাকওয়া অর্জনের।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
للصائم فرحتان يفرحهما اذا افطر فرح، واذا لقى ربه فرح بصومه، وفى رواية : اذا لقى الله فجزاه فرح،
রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দিবেন, তখন সে আনন্দিত হবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৪, ১৮৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৩, ১৬৪, ১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৪২৯, ৭১৭৪; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৬৬

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেলো রমজানের রোজা রাখার উদ্দেশ্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার সন্তুষ্ট অর্জনের মাধ্যমে তাকওয়াবান হওয়া। কিন্তু আমাদের বর্তমান মুসলিম সমাজ কি বাস্তবে তাকওয়া অর্জনের পথে এগুচ্ছে? আমরা কি পারছি আমাদের বিগত ১১মাসের খারাপ কাজ থেকে বিরত হয়ে এক মাসের জন্য আল্লাহ মুখি হতে? না, আমরা তো বরং এই একমাসে যতটুকু সম্ভব আল্লাহকে ভুলার চেষ্টায় মত্ত হয়ে আছি।

প্রথম রমজান থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন রকমের কুপ্রথা চর্চার মাধ্যমে শেষ হয় আমাদের রমজান। ইফতারি তাল পাঠানো দিয়ে শুরু হয় আমাদের প্রথম রমজান। আর শেষ হয় ঈদের মার্কেটিং করতে করতে। এই হচ্ছে আমাদের মুসলমানি নমুনা। দয়া করে কেউ আবার ভুল বুঝে এখানে মন্তব্য কইরেন না যে, আমি ধর্মান্ধতার ডাক দিচ্ছি।

সরকারি মন্ত্রীর দাবী অনুযায়ী বাংলাদেশের দারিদ্রতার হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বেসরকারি দুটি সংস্থার গবেষণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলে। সানেমের মতে ৪২ শতাংশ এবং সিডিপির মতে ৩৬ শতাংশই দরিদ্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। তারা পরবর্তী আর কোন আপডেট দেয়নি।

উপরের হিসেবানুযায়ী আপনি বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত বলতে পারবেন না। যেহেতু বাংলাদেশের ৯১% মুসলিম, সেহেতু এই মুসলিমদের বিশাল একটি অংশ্যই দারিদ্রতার ফাঁদে বন্দী। উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে তাদের বোন-কন্যাদের বাড়িতে ইফতার পাঠাতে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। তাদের একটা অংশের কাছে এটা আনন্দের কারণ। আরেকটা অংশ অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় মেনে নিয়েছেন অনায়াসে। কিন্তু এই দুটি অংশের কারণে বাঙালি মুসলিম সমাজের দরিদ্র পরিবারগুলোকে না চাওয়া সত্বেও মেনে নিতে হচ্ছে বিভিন্ন উপরি নির্যাতন। যা একটি বাচ্চার জন্ম উৎসব থেকে নিয়ে খতনানুষ্ঠান, বিয়েশাদি এবং মৃত্যুর পরের কুলখানি পর্যন্ত। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রমজান মাসের ইফতার। যা সম্পূর্ণ হারাম একটি যৌতুক প্রথা।

বিভিন্ন মৌসুমি আবরণে বিরামহীন যৌতুকের ধারাবাহিকতার একটি হচ্ছে এই ইফতারি যৌতুক প্রথা। যা আমাদের মুসলিম সমাজের একটি অংশকে তিলেতিলে শেষ করে দিচ্ছে। এই কুপ্রথার কারণে কত মাতাপিতার জীবন হয়ে যাচ্ছে বিভীষিকাময় তার কোন হিসেব নেই। অনেকে মেয়ে বাঁচিয়ে রাখতে দারস্থ হচ্ছেন সুধি মহাজনদের। নিচ্ছেন লুন ব্যাংক থেকে। সেগুলো আদায় করতে গিয়ে ছাড়তে হচ্ছে নিজেদের ভিটেমাটি। এভাবে ভিটেমাটি হাড়িয়ে পরিবারগুলো হয়ে যান শহরমুখী। শহুরে বিত্তবানেরা পান নতুন চাকর আর গ্রামের ধনীরা হয়ে উঠেন প্রকাণ্ড মহাজন।

অথচ এমন অনেক উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের সদস্য রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থেই চান এসব কুপ্রথা সমাজ থেকে দূর হোক। কুপ্রথা মুক্ত হোক মুসলিম সমাজ। কিন্তু তারাও সমাজের ভয়ে বা বিভিন্ন বাঁধাধরা নিয়মের কারণে এগুচ্ছেন না। বাস্তবিক অর্থে তাদের এই নিরবতাই কিন্তু মুসলিম সমাজের ধ্বংসের কারণ। অথচ তাঁরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টায় মুসলিম সমাজকে রক্ষা করতে পারেন। কুপ্রথায় শিকার পরিবারগুলোকে বুঝিয়ে মুক্তি দিতে পারেন এই কুপ্রথা থেকে। প্রত্যেকের চিন্তাভাবনা আলাদা, যেমন আপনার থেকে আমার। কিন্তু যখন সকলেরই উদ্দেশ্য হয় মুক্তি, তখন চিন্তাভাবনার ভিন্নতা হয়ে উঠে মুক্তি পথের পাথেয়। তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান থেকে, নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে রুখে দাঁড়াই ইফতারি প্রথার খোলসে চলা যৌতুকের বিরুদ্ধে।

ছবি ও তথ্যাদি বিভিন্ন সাইট থেকে নেওয়া।

কুপ্রথার বিরুদ্ধে আমার পূর্বের লেখা দান নয়, প্রয়োজন অধর্ম রোধন!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×