somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তামান্না তাবাসসুম
আমি খুব পজেটিভ মানুষ। যা আমাকে পোড়ায় তা নিয়ে মাঝে-সাঝে লিখি। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে একটা উপস্থিত কবিতা লেখা প্রতিযোগীতায় পুরস্কৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে কলম ধরার যাত্রা শুরু

অপেক্ষা ও অভিমানের গল্প ( ছোট গল্প )

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভোর সাড়ে ছয়টা

এক্সাইটমেন্টে রাতে ভাল ঘুম হয়নি সোমার। ভোর বেলাতেই ঘুম ভেংগে যায়,এমনিতে ঘুম কাতুরে হলেও আজ আর ঘুমাতে চেষ্টা করেনা সোমা। তামিম বলেছে আজ কল দিবে। সে যদি আরলি রাইজার হয় আর সোমাকে ফোনে না পায় তাহলে প্রথম দিনেই ওকে খুব অলস ভাববে।

তামীম, তুখোড় বিতার্কিক। সোমার এক ক্লাসমেট তৃনা ডিবেট করে, একদিন সোমার তিন ঘন্টা ক্লাস গ্যাপ। ওর কোন ফ্রেন্ডও সাথে নেই সেদিন, কিভাবে সময় কাটাবে এই কথা বলতেই তৃনা সোমাকে জোর করে ওদের বিতর্কের রিহার্সেল দেখতে নিয়ে যায়। সোমার এসব একদম ভাল্লাগে না, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে নিয়ে গেলেও এক কথা ছিলো। সেদিন থেকেই মুগ্ধতার শুরু। মানুষ গান শুনে প্রেমে পড়ে, চেহাড়া দেখে প্রেমে পড়ে আর সোমা পড়েছে তামীমের বিতর্ক দেখে, তার ভয়েস থ্রোয়িং দেখে,কথার লজিক দেখে, কথার জাদুতে অপজিশনকে ঘায়েল করা দেখে। তারপর তৃনার সাথে ওদের ক্লাবের বেশ কিছু বিতর্ক প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়েছে, আর প্রতিবারই আরো বেশি মুগ্ধতা নিয়ে ফিরেছে।
বিতার্কিক হওয়ার আগ্রহ না থাকলেও, শুধু তামিমের কাছাকাছি থাকার জন্য ডীবেট ক্লাবে জয়েন করতে চায় সোমা। তৃনা বলে তাহলে সেমিস্টারের শুরুতে অডীশনের মাধ্যমে জয়েন করতে হবে। এখন হবে না। সোমার আগ্রহে ওকে তামিমের কাছে নিয়ে যায় তৃনা। তামিমের সাথে টুকটাক কথাবার্তা হয়, নাম্বার আদানপ্রদান হয়। তামীম বলে সভাপতিক সাথে কথা বলে কাল তোমায় ফোন দিয়ে জানাবো।
তারপর থেকে তামীমের ফোন পাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর আর কাটছেই না সোমার।
সোমা এফএম রেডীয় অন করে, কিন্তু কোন চ্যানেলে তার প্রেজেন্ট মুডের সাথে মিলিয়ে গান নাই। অনেক বার চ্যনেল চেইঞ্জ করে বিরক্ত হয়ে রেডীও অফ করে দেয়।

সকাল সাতটা

ওয়াই-ফাই নাই। এদিকে তামিমকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে সোমার। ইশ কেনযে ওর ছবি আগে থেকে ফোনে সেভ করে রাখলো না। ছোট বোনটা যা পাকা হয়েছে, সারাদিন সোমার ফোন ওর কাছেই থাকে। কোন ছেলের ছবি পেলেই সোজা মাকে বলে দিত।

ফোনে টাকাও শেষ। ২০ টাকা এডভান্স নিয়ে নেট কেনে। তামিমের প্রোফাইলে যায়। তামিম ওর ফ্রেন্ড লিস্টে নাই । পাবলিক করা যত ছবি আছে সব শুরু থেকে আবার দেখে সব কমেন্ট পড়ে ফেলে। এভাবেই এক ঘন্টা পার। ফোনে চার্জ শেষ। তারাতারি চার্জ দেয়।

সকাল সাড়ে আটটা।

নাস্তা খেতে বসেছিলো, কিছুই খেতে ভাল্লাগছে না। কফি নিয়ে বসে। বাড়ান্দায় গিয়ে কফি খেলে ভাল্লাগতো কিন্তু তামিমের কল আসলে যদি টের না পায়, তাই চার্জ দেয়া ফোনের কাছে বসে আছে। কফির কাপে চুমুক দিয়ে সোমা ভাবছে, সে অসাধারন কফি বানায়, তামিমকে খুব শিঘ্রী একদিন তার হাতের কফি খাওয়াতে হবে।

সকাল সাড়ে দশটা

ছোট চাচির কল আসে, রিসিভ করতে ইচ্ছা করছে না। আরো দুবার রিং বেজে কেটে যায়। আচ্ছা তামিমের সাথে কি কি গল্প করা যায়? প্রথম দিন বেশি কথা বলবে না, যা বলবে উত্তর দিবে শুধু। নাহলে বাচাল ভাববে। সাড়ে এগারটায় ক্লাস, এখনি রওনা দেয়া উচিৎ, ধুর আজকে ক্লাসেই যাব না।

দুপুর সাড়ে বারটা

একটা গল্পের বই নিয়ে বসে সোমা, লাইন বাই লাইন শুধু পড়েই যাচ্ছে, কিছুই মাথায় ঢুকছে না। মা ডাকছে রান্নাঘরে কাজে সাহায্যের জন্য, যেতে ইচ্ছা করছে না। এদিকে কালযে প্রেজেন্টেশন আছে ভুলেই গিয়েছিলো সোমা।
জিনিয়াস মানুষরা তো রাত জেগে কাজ করে আর অনেক দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে, তামিম বোধয় এখনো ঘুমাচ্ছে, এই ভেবে মন কে শান্ত করে কাজে মন দেয় সোমা।

দুপুর দুইটা

ধুর কিছুতেই কাজে মন বসানো গেল না। ক্লাসে যায়নি বলে ফ্রেন্ডরা ফোন করছে। কারো ফোন রিসিভ করেনা সোমা। তামিমের উপর একটু একটু রাগ হচ্ছে সোমার। কিন্তু এই অস্থিরতা কিছুতেই তামিমের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। নরমালি কথা বলতে হবে। এতোক্ষন অপেক্ষায় থাকার কথা তো বোঝানোই যাবে না। আগে থেকে বেশি পাগল হয়ে আছে বোঝালে তামিমের ভাব আরো বেড়ে যাবে।

দুপুর তিনটা

রাগ কমানোর জন্য উলটা ১০০ থেকে ১ পর্যন্ত গোনে সোমা। বেশি রেগে গেলে তো কথায় তা প্রকাশ পাবে, তা কিছুতেই করা যাবে না। একেতো বড় মেয়ে, ছোট ভাইকে সারাদিন শাসন করে, তার উপর স্কুলে সব ক্লাসেই ক্লাস ক্যপ্টেন ছিলো সোমা। তাই ওর মধ্যে সবসময়ই একটা ডমিনেটিং ভাব আছে। তামিমের সাথে খুব সুইট করে কথা বলতে হবে। ওর জন্য রেগে আছে এটা কিছুতেই বোঝাবে না।
দুপুরের খারাবও মুখে রুচেনি সোমার। ফোন হাতে নিয়ে এক মনে তামিমের কলের জন্য প্রাথনা করতে থাকে।

বিকাল পাঁচটা

সোমার সবকিছু অসহ্য লাগছে। মাথা দুই পাশে চাপ দিয়ে ব্যথা করছে। সে কখনোই বেশি স্ট্রেস নিতে পারে না।
মামুন ছেলেটা তিন বছর সোমার পিছনে ঘুরেছে। কখনোই পাত্তা পায়নি। সে অনেকবার বলেছিলো আমার মতো ভাল কখনোই কেউ তোমাকে বাসবে না। সোমা ভাবে নিশ্চই ঐ মামুনের অভিশাপেই এখন আমার সাথে এমন হচ্ছে।

সন্ধ্যা সাতটা

প্রেজেন্টেশন এর কাজে কিছুতেই মন বসানো গেল না। ধুর কাল ক্লাসেই যাবে না। পাড়ার ফার্মেসী থেকে একটা মেডীকেল সার্টিফিকেট জোগাড় করে নিবে।

রাত আটটা

এর মধ্যে তামিমের ইনবক্স এ একশ বার মেসেজ লিখে একশ বার ব্যাকস্পেসে সেটা মোছা শেষ। নিজে থেকে আগে নক দিবে না ছ্যাচড়ার মতো।
এমন সময় ফোনে ভাইব্রেশন বেজে ওঠে, লাফ দিয়ে কল ধরতে গিয়ে দেখে কাস্টোমার কেয়ারের নাম্বার।

রাত নয়টা

সোমার চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ছে, নিজেকে খুব ফ্যালনা মনে হচ্ছে। গুগোল করে কষ্ট কমানোর টিপস খোজে। একটা রিমেডি খুব পছন্দ হয়ে যায়।
মনে যা আসে সব একটা কাগজে লিখে ফেলা তারপর ঐ কাগজটা পুড়িয়ে দেয়া। ব্যপারটা এমন যে মনের সব কষ্ট পুরিয়ে দিলাম।
লিখতে বসে অন্যরকম একটা চিন্তা আসে সোমার। তামীমকে একটা লাভ লেটার লিখে ফেলে। এটা ওকে বিয়ের রাতে দিবে। হুম, সোমা ভাবে বিয়ে করলে তামিম কেই করবে।

রাত সাড়ে এগারটা

সোমা বেশ ভালোই একটা ছ্যাকা খেলো আজকে। এজন্যই বলে তুমি যাকে ভালবাসো তার সাথে প্রেম করো না যে তোমাকে ভালবাসে তার সাথে প্রেম করো। তামিমকে যেমনটা ভেবেছিল সে আসলে তেমনটা না। খুব মুডি আর ইরেসপন্সিবল, অসহ্য একটা। কিভাবেযে এমন জঘন্য একটা ছেলের প্রেমে পড়লো সোমা ভেবেই পাচ্ছে না। ফোন নাম্বার দেয়াই উচিৎ হয়নি ঐ ছেলেকে। মানুষ সহজে যা পায় তার মূল্য বোঝে না। লাভ লেটারটা কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেলল সোমা। তামিম কে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিলো।
একটা ঘুম না দিলে মাথাব্যাথা যাবে না,মায়ের ওষুধের বক্স থেকে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে একরাশ অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে পরে সোমা ।

রাত বারটা পাঁচ

সোমার ফোনে ভাইব্রশন বাজছে, স্ক্রিনে ভেসে উঠছে ‘তামিম’ ! অনেক বার মাথার কাছে ফোন ভাইব্রেট করায় ঘুমের ঘোরে ফোন রিসিভ করে সোমা
-হ্যালো কে ?
-হ্যলো চিনতে পারছো, আমি তামিম। সরি বেশি রাতে ফোন দিয়ে দিলাম, দিনের বেলা দিতাম, ভাবলাম রাতে নিরিবিলি কথা বলা যাবে। তুমি কি ঘুমাচ্ছো ?
-হুম। (সোমা তখন ঘুমের টালে অস্থির)
-তোমার সাথে কথা ছিলো, আচ্ছা তাহলে কাল কথা হবে ।
-হুম
-বাই , হ্যাভ এ নাইস ড্রিম।
-হুম।
ওপাড় থেকে লাইন না কেটেই সোমা ঘুমিয়ে যায়।

এবার তামিমও একটু অপেক্ষায় থাকুক !

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×