আবারও চিকিৎসক পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণ :
দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশজুড়ে দেড় সহস্রাধিক চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এ পদোন্নতি নিয়ে চিকিত্সকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পদোন্নতিতে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও চাকরির জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি। বঞ্চিত চিকিত্সকদের দাবি, নগ্ন দলীয়করণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ পদোন্নতিতে। স্বাচিপ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের খুশি করতে শেষ সময়ে সরকার বিপুল সংখ্যক চিকিত্সককে পদোন্নতি দিয়েছে। ড্যাব নেতাদের মতে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে স্বাচিপ নেতাদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী এ পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হয়। অভিজ্ঞ ও সিনিয়র চিকিত্সকরা পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এর আগে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি ৫৮৫ চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। ওই তালিকাতেও ছিল স্বাচিপ নেতাকর্মীদের ছড়াছড়ি।
রোববার গভীর রাতে সারাদেশের ১ হাজার ৫২৯ চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মঞ্জুরুল হোসেন স্বাক্ষরিত দুইটি আদেশে ৪৩৩ জনকে সহযোগী অধ্যাপক ও ৪২৩ জনকে সহকারী অধ্যাপক করা হয়েছে। এছাড়া উপ-সচিব খালেদা আক্তার স্বাক্ষরিত দুইটি আদেশে ৫৬১ ও ১১২ জনকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত বেশিরভাগ চিকিত্সক ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের নেতাকর্মী। এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না থাকায় অনেক সিনিয়র চিকিত্সক পদোন্নতি পাননি।
একটি সূত্র জানায়, বরিশালে সহযোগী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে নিয়মিত হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন সাতজন। এরা হলেন ডা. ভাস্কর সাহা, ডা. রনজিত খান, ডা. অধীর কুমার সাহা, ডা. মাহবুবুর রহমান, ডা. এহসানুল হক, ডা. মো. কামরুজ্জামান ও ডা. গোলাম রহমান। এরা ২০১১ সালের ১ নভেম্বর সহকারী অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পেয়েছিলেন। ওই তালিকার অনেকেই এবার পদন্নোতি পাননি। সহকারী চলতি দায়িত্ব থেকে নিয়মিত সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন ১৪ জন। এরা হলেন ডা. কামরুল ইসলাম খান, ডা. বিপ্লব কুমার দাস, ডা. বিকাশ চন্দ্র বনিক, ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন, ডা. এস এম সরোয়ার, ডা. উত্তম কুমার সাহা, ডা. চন্দনা সরকার, ডা. শিখা রানী দাস, ডা. মাখসুমুল হক, ডা. আবদুর রাজ্জাক, ডা. আবুল হোসেন, ডা. তৌহিদুর রহমান, ডা. রেজাউল হোসেন ও ডা. সেলিম রেজা। এছাড়া বরিশাল সদর হাসপাতালের ডা. দেবব্রত পাল, ডা. প্রদীপ কুমার বনিক, ডা. জি এম নাজিবুল হক, ডা. হাবিবুর রহমান, ডা. আক্তারী খানম, ডা. খোরশেদ আলম (গৌরনদী), ডা. সিদ্দিকুর রহমান (ঝালকাঠি), ডা. মনিরুল আহসান (বাবুগঞ্জ), ডা. সালাউদ্দিন (দৌলতখান) জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং ডা. আনোয়ারা সুলতানা প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে দেড় সহস্রাধিক চিকিত্সকের পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিত্সক জানান, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা বা জ্যেষ্ঠতার বিচার না করে স্বাচিপ নেতাকর্মীদের বেছে নেয়া হয়েছে পদোন্নতিতে। এসব চিকিত্সক আরও বলেন, সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া বিএমএ নির্বাচনের সময় সারাদেশ সফর করেন স্বাচিপের মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সনাল। এ সময় স্বাচিপ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ পদোন্নতির তালিকা করা হয়।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফরেনসিক বিভাগে তালিকায় সবচেয়ে সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও পদোন্নতি হয়নি তার। বরিশালের ডা. আক্তারুজ্জামান, ডা. আনোয়ার হোসেন, ডা. জাকির হোসেন ও ডা. জহিরুল হক মানিকসহ অনেকেই পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ড্যাব করার অপরাধে মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপর তাকেসহ অনেক চিকিত্সককে দেশের বিভিন্ন স্থানে হয়রানিমূলক বদলি করা হয়।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আজিজ রহিম বলেন, সরকারের শেষ সময়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের পুরস্কার দিতে গণপদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতিতে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং সিনিয়রিটি মানা হয়নি। দলীয় চিকিত্সকদের পদোন্নতি দিতে অযোগ্য, অদক্ষ এবং জুনিয়রদের পদোন্নতি হয়েছে। লম্বা এ তালিকায় হাতেগোনা ২-৪ জন ভিন্ন মতাবলম্বী চিকিত্সকের নাম রয়েছে। বাকি সবাই স্বাচিপ নেতাকর্মী। তিনি বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাপক এ অনিয়মের কারণে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে স্বাস্থ্য খাত। প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ।