somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ০৪

০১ লা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

بسم الله الرحمن الرحيم

মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ

কুরআনের দৃষ্টিতে লাইলাতুল বারাআত - ১

১।

এ পর্যন্ত যে রাতের ৫টি নাম ও নামকরণের কারণসহ উদ্ধৃত হয়েছে সে লাইলাতুল বারাআত তথা শবেবরাত সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমে যে আলোচনা এসেছে সেটা একটু গবেষণা ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।

২।

এ মহাগ্রন্থের ২৫ তম পারা ও ৪৪ নং সূরা “ দুখানের ” শুরুতে যে পাঁচটি আয়াত রয়েছে সে আয়াতগুলোই লাইলাতুল বারাআত বিষয়ক আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। তাই আয়াতগুলো প্রথমে অর্থসহ পেশ করা হচ্ছে।

حم وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ

“ হা মীম (এ অক্ষরদুটি হরূফে মুকাত্ত্যিয়াত বা বিকর্তিত বর্ণ যার অর্থ আল্লাহই ভাল জানেন) শপথ প্রকাশ্য কিতাবের। নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক জ্ঞানপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে আমিই প্রেরণকারী। ”

( সূরা দুখানঃ ১-৫ )

আয়াতে উল্লেখিত ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ (বরকতময় রাত) শব্দের ব্যাখ্যা বা তাফসীরকে কেন্দ্র করেই “ কুরআনের দৃষ্টিতে লাইলাতুল বারাআত ” শীর্ষক আলোচনার সূত্রপাত।

লাইলাতুম মোবারাকা’র ব্যাখ্যায় মতানৈক্য

১।

উক্ত ليلة مباركة লাইলাতুম মোবারাকাহ শব্দটির উদ্দেশ্য ও মর্ম যেহেতু অস্পষ্ট; সুনির্দিষ্ট নয়, তাই শব্দটি দ্বারা কোন রাতকে বুঝানো হলো; এ নিয়ে প্রাচীন কাল থেকে কুরআনের ব্যাখ্যাকারী মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কোন কোন মুফাসসির এ শব্দ থেকে শবেবরাত (মধ্য-শাবানের রাত) বলে আখ্যা দিয়ে এ আয়াত থেকে শবে বরাত প্রমাণিত হয় বলে মত প্রকাশ করেছেন। আবার অধিকাংশ মুফাসসির এ শব্দ থেকে শবে ক্বদর অর্থ করে, লাইলাতুম মুবারাকাহ শব্দ দ্বারা রমজানের ঐ পবিত্র রজনী যা সূরায়ে ক্বদরে বর্ণিত আছে – সে রাতকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। আবার মুফাসসিরীনের একটি ক্ষুদ্র জামাত এ আয়াতের লাইলাতুম মুবারাকাহ শব্দ থেকে শবে মেরাজ উদ্দেশ্য বলেও মত প্রকাশ করেছেন। এ কারণে সূরায়ে দুখানের এ আয়াত নিয়ে প্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থে তিন ধরণের মতামত পাওয়া যায়। যেহেতু কুরআনের উক্ত তাফসীরগুলো সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হাদীছের আলোকে করা হয়েছে। তাই মতামতগুলোর মধ্যে কোন মতকেই একেবারে ভ্রান্ত ও বাতিল বলে আখ্যা না দেয়াই হক্বপন্থী মুসলমানের নীতি বলে আমরা মনে করি। হ্যাঁ নিঃসন্দেহে যে ক্ষেত্রে কুরআনের বর্ণনা অস্পষ্ট সে ক্ষেত্রে মুফাসসিরগনের মাঝে মতপার্থক্য থাকলে কোন একটি মতকে অপর মতের উপর প্রাধান্য দেয়ার অবকাশ অবশ্যই আছে। সুতরাং এসব তাফসীরের মাঝে বিচার বিশ্লেষণ করলে অভিজ্ঞ আলেমদের নিকট এ কথা সুস্পষ্ট যে, উক্ত আয়াতের লাইলাতুম মুবারাকাহ (বরকতময় রাত) শব্দের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তাফসীর হলো শবে ক্বদর; শবে বরাত নয়।

২।

তবে এখানে গভীরভাবে লক্ষ্যণীয় যে, যারা এ লাইলাতুম মুবারাকাহ শব্দের ব্যাখ্যা ‘ শবে ক্বদরকে ’ প্রাধান্য দিয়েছেন, তারা কেউ শবে বরাত নামক মধ্য-শাবানের রাতের গুরুত্বের ব্যাপারে এবং শবে মেরাজের ব্যাপারে যে সব হাদীছ বর্ণিত আছে সেগুলো ভিত্তিহীন বলে মত প্রকাশ করেননি। বরং তারা শুধুমাত্র উক্ত আয়াতে লাইলাতুম মুবারাকাহ এর ব্যাখ্যা যে শবে বরাত বা শবে মেরাজ নয় – শুধু এ কথাটি ব্যক্ত করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে যে সব তাফসীরবিশারদ উক্ত আয়াতে লাইলাতুম মুবারাকাহ এর ব্যাখ্যায় শবেবরাত বলে সাব্যস্ত করেছেন তারা কখনও কুরআন অবতরণের রাত্রি, মহা পবিত্র রজনী – শবে ক্বদর কে গুরুত্বহীন বলে মত পোষণ করেন নি। বরং তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ রাত বলেই সাব্যস্ত করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে শবে মেরাজকেও গুরুত্বপূর্ণ রাত বলে বর্ণনা করেছেন।

৩।

মোট কথা প্রায় সকল তাফসীরবিশারদ শবে ক্বদরতো মানতেনই তার সাথে সাথে শবে বরাত ও শবে মেরাজকেও অস্বীকার করতেন না। কেননা এ মর্মে কুরআনের তাফসীরসহ বহু হাদীস বর্ণিত আছে। যদিও সূরা দুখানের আয়াতের ব্যাখ্যা যে শবে বরাত তা অগ্রাধিকারযোগ্য বলে মত পোষণ করেন নি।

ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ এর তিন তাফসীর

সার কথাঃ

সুতরাং দুখানের আয়াতে ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ এর তাফসীরে মোট তিনটি মত পাওয়া গেলোঃ

১।

অধিকাংশ মুফাসসিরের মতানুসারে এর ব্যাখ্যা শবেক্বদর। অন্য কোন রাত দিয়ে এর ব্যাখ্যা সঠিক নয়, কেননা শবেক্বদর মাহে রমজানেই অবস্থিত। তাই মধ্য শাবানের রাত বা শবে মে’রাজ (২৭ শে রজবের রাত) এ দুই তাফসীর এখানে অগ্রহণযোগ্য। উপরন্তু এ রাত্রিতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কথা রয়েছে। আর কুরআন যে শবে ক্বদরে অবতীর্ণ হয়েছে এটা প্রায় চুড়ান্ত। যেমন সূরায়ে ক্বদরে তার বিবরণ রয়েছে।

২।

প্রসিদ্ধ মুফাসসির শায়েখ কামেল আবু মুহাম্মদ সীরাজী (রহঃ) তার স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ “ তাফসীরে আরায়েসুল বয়ান ” এ লিখেছেন যে, সূরা দুখানের আয়াত

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ

এর মধ্যে বরকতপূর্ণ রাতের অর্থ হচ্ছে, শবে মেরাজ। তিনি আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে বলেনঃ এভাবে মুবারক রাতের অর্থ হলো, শবে মেরাজ, যে রাতে আল্লাহর হাবীব (সঃ) স্বীয় বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন। রাতটি রসূল (সঃ) এর জন্য বরকতপূর্ণ এ ভাবে যে, এ রাতে তিনি আল্লাহকে দেখতে পেয়েছেন এবং আল্লাহ তার ক্বলবের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন।

( দেখুন তাফসীরে আরায়েসুল বয়ানঃ খ – ২, পৃ – ৪৪৪, সূত্র শবে বরাত কেয়া হায়, মাওলানা ইসলামুল হক্ব )

৩।

তৃতীয় তাফসীর হলো, সূরায়ে দুখানের এ আয়াতের তাফসীর হলো শবে বরাত। মতটি হযরত ইকরামাহ ও ক্বাতাদাহসহ অনেকে গ্রহণ করেছেন। এ মতের পক্ষে জোরালো যুক্তি হলো, এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাময় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পৃথক করণের কথা কুরআনে বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিস্তারিতভাবে সুনির্ধারণ ও সুনির্দিষ্ট করে দেয়া এবং কোন বিষয়ে আল্লাহ তাআলার কি সিদ্ধান্ত তা সংশ্লিষ্টদের নিকট হস্তান্তর করা প্রভৃতি সম্পন্ন করে দেয়া হয়, যার বিবরণ হাদীছ শরীফে সবিস্তারে এসেছে।

৪।

এ তিনটি মতামতের মধ্যে দ্বিতীয় মতের উপর শুধু আল্লামা সিরাজীর উল্লেখিত উদ্ধৃতি ছাড়া তেমন কোন দলীল-প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই তাফসীরকারকগণ মতটিকে উল্লেখ করতে দেখা যায় না।

কিন্তু প্রথম ও তৃতীয় মত অধিকহারে তাফসীর গ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে। অধিকাংশ মুফাসসির প্রথম মতকে জোরালোভাবে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি তৃতীয় মত তথা শবেবরাতকেও উপেক্ষা করেন নি। বরং তাদের মধ্য থেকে প্রায় সকল মুফাসসির তৃতীয় মতের পক্ষেও দলীল প্রমাণ পেশ করেছেন। কেবল হাতেগোণা দু’একজন মুফাসসির সঠিক থেকে বহুদূরে ( ابعد ) অথবা ( بشئ ليس ) তেমন ওজনী নয় ইত্যাদি শব্দ দ্বারা মন্তব্য করেছেন। তাই মতদ্বয়ের কিছু বিস্তারিত বিবরণ প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থসমূহ থেকে নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো।

মুফাসসিরীনদের দৃষ্টিতে ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ এর তাফসীর শবে ক্বদরের পাশাপাশী শবে বরাতও বটে

১।

অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে যেহেতু ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ এর তাফসীর শবে ক্বদর বিধায় বলা যায়, এটিই প্রায় সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য। সুতরাং এর পক্ষের প্রমাণাদি এখানে উল্লেখ করার তেমন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যেহেতু বর্তমান বিশ্বের কিছু কিছু আলেম সূরা দুখানের আয়াতে ( ليلة مباركة ) লাইলায়ে মুবারকাহ এর মধ্যে শবে বরাত বা শবে মেরাজ নিয়ে আলোচনা করার কোন অবকাশই নেই বলে মত ব্যক্ত করে থাকেন এবং কেউ এ রকম ব্যাখ্যা দিলে তাকে ভ্রান্ত, ভ্রষ্ট আখ্যায়িত করে বিরোধিতায় লিপ্ত হন, বিধায় এখানে কেবল ঐ সব তাফসীরের উদ্ধৃতি পেশ করছি যেখানে লাইলাতুম মুবারাকাহ এর তাফসীর মধ্য-শাবানের রাত তথা ‘ শবেবরাত ’ দ্বারাও করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেন ঐসব ফেৎনাবাজের অজ্ঞতা মূর্খতা সকলের নিকট স্পষ্ট হয়ে যায়।

তাফসীরগ্রন্থ

এখানে যেসব তাফসীরগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হবে তা হলঃ

১। তাফসিরে কবীর
২। তাফসীরে রুহুল মায়ানী
৩। তাফসীরে রুহুল বায়ান
৪। তাফসীরে কুরতুবী
৫। তাফসীরে তবরী
৬। তাফসীরে বগবী
৭। তাফসীরে খাযেন
৮। তাফসীরে ইবনে কাছীর

এখানে উল্লেখ্য যে, যেসব মুফাসসিরে কেরাম ليلة مباركة এর ব্যাখ্যায় শবে ক্বদরকে বুঝিয়েছেন, শবে বরাতকে নয়, তারা কিন্তু তাই বলে কেউই শবে বরাতকে অস্বীকার করেন নি কখনো। বরং হাদীসের দলীল দ্বারা তারা অনেকেই শবে বরাত এবং এর ফাযায়েল বর্ণনা করেছেন। আর লক্ষ্যণীয় বিষয়টি হলো, যদি শবে বরাতের কোন অস্তিত্বই ইসলামী শরীয়তে না থাকত, তাহলে যেসব মুফাসসিরে কেরাম শবে ক্বদর বুঝিয়েছেন, তারা স্পষ্টভাবে নিশ্চয়ই তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করতেন যে, শবে বরাত বলতে তো কিছু নেই, তাই এ ব্যাখ্যা কখনো হতে পারে না বা এটি বিদআত !! কিন্তু তারা কেউই এ কথা উল্লেখ করেন নি, শুধু বলেছেন যে ليلة مباركة এর অর্থ শবে ক্বদর, শবে বরাত নয়।

প্রথম তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে কবীর


১।

ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ তাফসীরে কাবীরে সূরা দুখানের আয়াতে ( ليلة مباركة ) লাইলাতুম মুবারকাহ দ্বারা কোন রাত্র বুঝানো হল, এ ব্যাপারে উল্লেখ করেনঃ

“ এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশের মতে এটি হলো লাইলাতুল ক্বদর তথা শবে ক্বদর আর হযরত ইকরমা (রহঃ) সহ অপর একদল আলেমের মতে এ রাতটি হলো শবে বরাত আর তা হলো লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। (মধ্য শাবানের রাত্রি) ”

( তাফসীরে কবীরঃ খ – ১৪, পৃ – ৩৩৮ )

২।

অতঃপর ইমাম রাযী (রহঃ) প্রথম মতের পক্ষে সবিস্তারে দলিল উল্লেখ করার পর বলেনঃ

“ (অতঃপর) যারা এ আয়াতের ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ এর অর্থ শবে বরাত করেছেন তাদের দৃষ্টিতে শাবানের মধ্য রাত্রের চারটি নাম প্রসিদ্ধ রয়েছে যথাঃ লাইলাতুম মুবারাকাহ, লাইলাতুল বারাআত, লাইলাতুস্‌সক ও লাইলাতুর রহমাহ। বলা বাহুল্য যে, লাইলাতুল বারআত এই জন্যই নামকরণ করা হয়েছে যে, টেক্স আদায়কারী, জনগণ থেকে পূর্ণ কর আদায় করে নেয়ার পর তাদেরকে “ বারাআত ” (অর্থাৎ দায়মুক্ত) লিখে দিতেন। তদ্রূপ আল্লাহ তাআলাও মুমিন বান্দাদেরকে এ রাত্রিতে ক্ষমা মার্জনা করে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্ত বলে লিখে দেন তাই এ রাতকে শবেবরাত বলা হয়। ”

( তাফসীরে কবীরঃ খ – ১৪, পৃ – ২৩৯ )

দ্বিতীয় তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে রূহুল মাআনী


আল্লামা আলূসী (রহঃ) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে রূহুল মাআনীতে উল্লেখ করেছেনঃ

“ এবং হযরত ইকরামা ও আরো একদল মুফাসসিরীনেকেরাম বলেন যে, এ রাতটিই হলো শাবানের মধ্য রাত অর্থাৎ শবে বরাত। যার নাম রাখা হয়েছে, লাইলাতুররহমাহ, লাইলাতুমমুবারাকাহ, লাইলাতুস্‌সক (দায়মুক্তির রাত) এবং লাইলাতুল বারাআত (মুক্তি প্রাপ্তির রাত) দিয়ে যারা এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, তারা এর মর্যাদা সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো, যা ইমাম ইবনে মাজাহ ও ইমাম বায়হাকী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ শুয়াবুল ঈমানে হযরত আলী (রঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেনঃ যখন মধ্য-শাবানের মধ্যরাত হবে তোমরা রাতভর ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে যাও এবং দিনে রোযা রাখ, কেননা আল্লাহ তাআলা এ রাত্রে সূর্যাস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, আর আহবান করতে থাকেন, কে আছ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব, কে আছ রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দান করব, কে আছ যাচনাকারী? আমি তাকে দান করব। কেউ কি এরূপ আছ? কেউ কি এরূপ আছ? এভাবে ফজর পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। ”

(তাফসীরে রূহুল মাআনীঃ খ – ৯, পৃ – ১১০ অংশ ১২ )

শেষ কথাঃ

যেহেতু অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামের মতে লাইলাতুম মুবারাকাহ এর অর্থ শবে ক্বদর, তাই এই মতই অধিক গ্রহণযোগ্য। তবে মুফাসসিরীনের এক জামাআত এর অর্থ শবে বরাতও করেছেন বিধায় কেউ লাইলাতুম মুবারকাহ এর অর্থ শবে বরাত করলে তাকে ভ্রান্ত বলার কোন অবকাশ নেই। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ সামনে আরও আসবে ইনশাল্লাহ। এখানে লক্ষ্য করুন, সারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় দুটি তাফসীর গ্রন্থ যথা তাফসীরে কাবীর এবং তাফসীরে রুহুল মাআনী - উভয় কিতাবের মুফাসসির কিন্তু কেউই শবে বরাতকে অস্বীকার করেন নি, বরং শবে ক্বদরের পাশাপাশি লাইলাতুম মুবারাকার অর্থ শবে বরাতকেও যে অনেক মুফাসসিরে কেরাম উল্লেখ করেছেন, তাই তারা তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন এবং এর ফাযায়েল সম্পর্কে হাদীসও বর্ণনা করেছেন। আরও লক্ষ্যনীয় যে, হাদীস বর্ণনা করার পর তারা কেউই হাদীসগুলোকে জাল বলেন নি, বা শবে বরাতের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেন নি। যদি ইসলামী শরীয়তে শবে বরাতের কোন অস্তিত্বই না থাকত, তাহলে এসব জগতবিখ্যাত মুফাসসিরে কেরাম তাদের কিতাবে এ কথা অবশ্যই উল্লেখ করতেন যে, শবে বরাত বলতে তো কিছু নেই, অতএব এখানে শবে বরাতের প্রসঙ্গ আসবে কোথা থেকে ? তারা কিন্তু কেউই সেরকম কোন উক্তি করেন নি। তাই কাউকে ভ্রান্ত বলার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, আমরা নিজেরাই ভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি কি না ?

আজ শেষ করব পবিত্র কোরআনের শুরুতেই মহান রব্বুল আলামীন আমাদের যে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, তা দিয়েঃ

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও
সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ
তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

আমীন।


( চলবে ইনশাল্লাহ )

( পরবর্তী পর্বঃ কুরআনের দৃষ্টিতে লাইলাতুল বারাআত - ২ )

৩য় পর্বঃ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:২৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×