somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকড়সার ফাঁদ শেষ পর্ব

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পুর্বের পর্ব

ময়নার মৃত্যুতে মাস্টার, রুপা আর মজনু ফকিরসহ আরও অনেকের কান্নাকাটিতে ভরে গেছে মাস্টারের বাড়ী। এমন সময় ডুগডুগি-মাসআল্লা, মাস্টার সাব ময়নার দাফন আর জেয়াফতের লাই গেদু সাহেব নগদ ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা দান করেছেন।এটা কেডা ?

মাস্টার: রূপা, আয় মা। গেদু সাব আমার একমাত্র মাইয়া রূপা। আপনারেতো কইছি, সামনের মাসে বিয়া।
গেদু: আলহামদুলিল্লাহ, ছেলে যেন কী করে?
মাস্টার: ছেলে এবার ওকালতি পাশ করছে।

ডুগডুগি : উকিল জামাই পাশে থাকলে আর চিন্তা কি?

গেদু: আমি চেয়ারম্যানের পিছনে খামাখা সময় নষ্ট করছি, এই ঘটনার পর দেখি তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়। পলিটিক্স একটা কথা আছে... কনডম মাল লইয়া টানা হেচড়া করিতে নাই। কাজেই চেয়ারম্যান বাদ, নতুন রিকুইটমেন্ট একাব্বর মাস্টার। নামের শেষে দুঃখ দুঃখ ভাবটা চাঙ্গা করিলে আর ঠেকায় কে? তাই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত গ্রামের পরবর্তী চেয়ারম্যান, একাব্বর মাস্টার।আপনার পরেই আমার ইলেকশান। গিভ এন্ড টেক। অাপনি অতি দ্রুত ইলেকশান বাজেট ঠিক করে আমার সাথে ঢাকায় দেখা করবেন।

মাস্টার: গেদু সাব, আমার সম্পত্তির বিষয়টা?

গেদু: জামাই বাবাজি ফিরিয়া আসুক। একটা শক্ত করিয়া পিটিশান লিখিয়া দিবে, উকিল মানুষ, প্যাচগোছ ভালোই বুঝিবে। বাদ বাকী তদবীরের কাজ আমার হাতে ছাড়িয়া দেন বলে গেদু আর ডুগডুগি চলে যায়।


গেদুর কাছ থেকে চেয়ারম্যানী ইলেকশানের সমর্থন পেয়ে মাস্টার চেয়ারম্যানের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধের চুরিতে সান দেয়ার পরিকল্পনা করে। এমন সময় ডাক পিয়নের প্রবেশ- হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।

রূপা: কার চিঠি বাবজান।
মাস্টার :কার আবার, রাসুর। আমাগো জামাই বাবাজির।

জনৈক: মাস্টার পড়, কি লিখছে রাসু? পড়।

মাস্টার: “আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন স্যার, প্রথমেই আমার অতি ভক্তিপূর্ণ সালাম নিবেন”
দেখছো মিয়া, এরই কয় আদব। আমার ৪০ বছরের মাস্টারি জীবনে আমি মানুষ চিনতে ভুল করি নাই।

জনৈক: তুমি পইড়া যাও না।

মাস্টার: “গেরামের ময়-মুরুব্বিদেরও আমার সালাম দিবেন। রূপারে আমার ..........” কিরে রূপা পড়–মু?
রূপা: বাজান, তুমি খালি খালি মসকরা কর।

মাস্টার: আচ্ছা থাক “পর সমাচার এই যে, আমি ভালোভাবেই ওকালিত পাশ করিয়াছি। স্যার আপনার ঋণ আমি কখনো শোধ করিতে পারুম না। অনেক কষ্ট করে আপনি আমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। গ্রামের রাসু ঢাকা শহরে এসে কি শিখেছে জানি না। তবে তার আকাংখার পরিমাণ গগণ চুম্বি। দেশের গন্ডি ফেরিয়ে লন্ডনে ব্যারিষ্টারি ডিগ্রী এখন আমার একমাত্র স্বপ্ন। দোষ নিবেন না স্যার। আমি বহু বার বহুভাবে গ্রামের রাসুর আবিস্কারের চেষ্টা করছি, পারি নি। আপনারা গ্রামে যে রাসুরে চিনতেন, শহরে মানুষের ভিড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। জানি ক্ষমা পাবো না। তবুও বলছি, সম্প্রতি, আমি আমার এক সহপাঠিনিকে বিবাহ্ করেছি।

রূপা: বাজান, তোমার মনে আছে, খুব ছোট বেলার কথা? কতইবা বয়স আমার। স্কুলের পড়া একদম মুখস্থ করতে পারতাম না। তা নিয়া তোমার সে কি রাগারাগি। তুমি আমারে কইছিলা, পড়া মুখস্থ করতে পারলে একটা ময়ূর পঙ্খী কিনা দিবা। সারা রাত আমি ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে মুখস্থ করলাম....... পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো, কাননে কুসুম কলি সকলিই ফুটিলো। সকালে ঘুম থেইকা উইঠা পড়ালাম ...............পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো, কাননে কুসুম কলি, ঝরিয়া পড়িলো। ভুইলা গেছি সব খাইয়া বসে আছি। সেদিন তুমি আমারে খুব মারছিলা। দেখো পিঠে হাত দিয়ে দেখো, সে মাইরের দাগ এখনো আছে। আইজ ময়ূর পঙ্খী যদি না পাই, তয় তোমারেও আমি ছাড়ু–ম না। উত্তর দেও বাজান, উত্তর দেও। চুপ কইরা থাইকো না। তোমারে আগেই কইছিলাম, ওত খোয়াব আমারে দেখাইয়ো না।

মাস্টার: আমার ঘরে আমি আইজ মাকড়সা, কি করলে মাইনসের জীবন আরও দীর্ঘ হয়, জানি না। ৪০ বছরের মাষ্টারি জীবনে আমি মানুষ চিনতে ভুল করি নাই। কিন্তু আজ এত বড় ভুল আমি কেমনে করলাম। আমি আরও দীর্ঘ জীবন চাই। না হলে পুনঃজন্ম চাই। তখন না হয় আবারও একবার সাবধানে পা ফেলবো।মাষ্টার কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়।



রূপা : চিঠিটা হাতে তুলে পুনরায় পড়ে আবার চুড়ে ফেলে দেয়। এতদিন যে ছায়াটার লগে রাইত দিন সংসার করছি, সে ছায়াটা আজ মানুষ হইছে। আস্ত একটা মানুষ। সে মানুষটাই ছিড়া ছিড়া খাইছে আমার স্বপ্ন আর সুখ। যে মানুষটারে আপন মাইনসের চেয়েও বেশি আপন মনে করছিলাম, সে যে একবারও মনে করলো না এ টা বিশ্বাস করি কেমনে?


মাস্টার : রূপা? এ রুপা শান্ত হও মা,শান্ত হও।

রুপা : কে রূপা? আমার লগে তার কি সম্বন্ধ? ঐ রকম হাজার রূপারা জন্মায় আর মরে। তাতে কী আসে যায়। রূপারা পুডি মাছ হইয়া জন্মায় আর বোয়াল মাছের খোরাক জন্মায়। মৌ-মাছিরে আগুনে না পোড়াইলেতো আর মধু খাওন যায় না। সবার দরকার মধু। কয়টা মৌমাছি আগুনে মরল, তার খবর রাখে কেডা? আমিও নিজের আগুনে নিজেই পুইড়া মরতাছি।

কেউ বুঝলো না, আমার অন্তরে মধ্যখানে বইশা আরেকটা মানুষ কথা কয়। নড়েচড়ে, তারে একবার বাহিরে আইনা জিজ্ঞাস করুম কেন পাগল করছিলা আমারে? ভাবছো মাইয়া মানুষ। খুদ-কুড়া দিলেই সন্তুষ্ট থাকে। তার মধ্য যে খোয়াব আছে সেটারে কেউ দাম দেয় না। বুঝেনা নারীর জন্মের সত্যটারে। তারও শরীলের ভিতর রক্তের মধ্যে পুতুলের লাহান আরেকটা মানুষ সবসময় কান্দে, আর সে মানুষটারে দুনিয়া দেখাইবার চায়। মা ডাক শুনবার চায়। তার বুকটা পুরুষ পুরুষ শরীরের দলা মোছড়ায় গুড়াগুড়া অইবার চায়। জীবনের জন্য মরনের ঘরে এক লগে পা রাখবার চায়।

নারী জন্মের কষ্টের কান্না থামাইবার কোন ঔষোধ কি আছে? সেটা সে জানে না। জানে না বলেই কাঁন্দন আসলে ফুলে ফুলে কাঁন্দে। সহজে থামাইতে পারে না কেউ। তারপরেও আমি মানুষ। আমার মধ্যে কাঁন্দন আছে, মায়া আছে, বিশ্বাস আছে এতদিন খোয়াব আর বিশ্বাসের খোলসে যারে লালন করছি সে হইলো রাসু। আপনাগো কারো লগে যদি রাসুর দেখা হয়, খোয়াবে অথবা বাস্তবে তারে শুধু একটা কথাই জানাইয়া দিবেন........... একাব্বর মাষ্টারের মেয়ে তারে ক্ষমা কইরা দিছে।

চোখেরে আন্ধার কইরা আমি আর অপেক্ষায় থাকুম না। আমার কষ্ট, আমার বেদনা, আমার আশা, আমার ভালোবাসা, আমার পাপ, আমার যন্ত্রনা, সব, সব একাকার ঐ ফলবতী বৃক্ষের মতন। যে বৃক্ষ ছায়া দেয় সস্তি পায় না, ফল ধরায় রাখতে পারে না। ঐ মাকড়সার জালের মধ্যে একবার ধরা পড়লে আর বাঁচতেও পারে না............ কাঁদতে কাঁদতে হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যায় রুপা।
..................... সমাপ্ত

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×