somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ কি অদৃশ্যের জ্ঞান (ইলমে গায়েব) রাখেন ? -

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রশ্ন -
কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত , যে সকল বর্ণনাতে বলা হয়েছে , আল্লাহ্ ব্যতীত কেউই অদৃশ্যের জ্ঞান (ইলমে গায়েব) রাখে না এবং যে সকল বর্ণনাতে বলা হয়েছে নবী-রাসূলগণ তাঁর অনুমতিক্রমে গায়েবের জ্ঞান রাখতেন ---
কিভাবে এ দু’ধরনের বর্ণনাকে সমন্বয় সাধন করব ?

উত্তর দিয়েছেন -
আয়াতুল্লাহ্ নাসের মাকারেম সিরাজী --

উত্তর -
বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা এ দু’ধরনের বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারি ।

ক) -
প্রসিদ্ধতম যে পদ্ধতির মাধ্যমে এর সমন্বয়ের ব্যাখ্যা করা হয় তা হল ‘গায়েবের জ্ঞান’ সত্তাগত ও স্বাধীনভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট ।
অন্য কেউ স্বাধীনভাবে এ জ্ঞান রাখে না । বরং তাদের এ জ্ঞান আল্লাহ্ প্রদত্ত ।
যেমন সূরা জ্বীনের ২৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে --
আল্লাহ্ কাউকেই গায়েবের রহস্য সম্পর্কে অবহিত করেন না , তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত।

নাহজুল বালাগাতেও এরূপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ।
যখন হযরত আলী (আঃ) মুসলিম দেশগুলোতে মোঙ্গলদের আক্রমণের বিষয়ে খবর দেন তখন তাঁর এক সঙ্গী তাঁকে প্রশ্ন করেন ,“ হে আমীরুল মুমিনীন ! আপনি কি ’ইলমে গায়েব’ জানেন ?”
তিনি মুচকি হেসে বলেন , “এটি’ইলমে গায়েব’ নয় , এটি এমন এক ইলম যা ইলমের অধিকারীর (রাসূলের) নিকট শিক্ষা লাভ করেছি ।”
৩ এ সমন্বয় পদ্ধতিকে অনেক মনীষীই গ্রহণ করেছেন ।

খ) -
‘গায়েব’ - এর রহস্য দু প্রকারের ।
এক ধরনের গায়েব মহান আল্লাহর জন্য নিদিষ্ট এবং অন্য কেউ সে সম্পর্কে জানে না ।
যেমন কখন কিয়ামত সংঘটিত হবে ।

অন্য প্রকার গায়েব আল্লাহ্ তাঁর নবী ও আউলিয়াদের জানিয়ে থাকেন ।
নাহজুল বালাগায় উপরোক্ত খুতবাতেই হযরত আলী (আঃ) বলেছেন , ‘ইলমে গায়েব’ হল কিয়ামতের জ্ঞান এবং এই আয়াতে (সূরা লোকমানের ৩৪ নং আয়াত) যে বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো , যেমন কিয়ামতের সময় কেবল তিনিই জানেন । তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে সে সম্পর্কে অবহিত ।
(যদিও) কেউ জানে না আগামীকাল কি করবে এবং কোন্ ভূমিতে সে মৃত্যুবরণ করবে কিন্ত আল্লাহ্ তা জানেন ।

অতঃপর ইমাম (আঃ) এর ব্যাখ্যা করে বলেন , “মহান আল্লাহ্ যা কিছু মাতৃগর্ভসমূহে রয়েছে (কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই) সে সম্পর্কে সার্বিক অবগত ।
পুত্র সন্তান না কন্যা ?
সুন্দর না অসুন্দর ?
দানশীল হবে না কৃপণ ?
সৌভাগ্যবান হবে না দুর্ভাগা ?
বেহেশ্তবাসী হবে না দোযখবাসী ?... এ বিষয়গুলো হলো ‘ইলমে গায়েব’ যা তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না ।
এগুলো সেই জ্ঞানের অন্তর্গত নয় যা তিনি তাঁর রাসূল (সাঃ) কে শিখিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন ।”

কোন কোন মানুষ হয়ত মাতৃগর্ভে শিশুর আকৃতিগত কিছু বৈশিষ্ট্য , বৃষ্টি পতনের সময় ও প্রকৃতি সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা দিতে সক্ষম ।
কিন্ত এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিটি বিষয়ের বিশ্লেষণ দান তাদের পক্ষে সম্ভব নয় , অথচ মহান আল্লাহ্ এ সকল বিষয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সকল কিছু সম্পর্কে অবগত ।
মৃত্যুবরণের বিষয়টিও অনুরূপ ।

গ) -
এ বিপরীতধর্মী আয়াত ও হাদীসসমূহকে ব্যাখ্যা করার তৃতীয় পথ -
‘গায়েব’ - এর রহস্য বিভিন্ন বর্ণনা মতে দু’টি স্থানে লিখিত রয়েছে ।
প্রথমটি হল ‘লাওহে মাহফুয’ যা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় ।
এ সম্পর্কে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অবহিত নয় ।

দ্বিতীয়টি হল ‘লাওহে মাহু ওয়া ইসবাত’ যা অবস্থার কারণে পরিবর্তনশীল ।
অন্যদের তিনি এ বিষয়ে অবহিত করেন ।

ষষ্ঠ ইমাম সাদেক (আঃ) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে , তিনি বলেন ,“ আল্লাহর এক ধরনের জ্ঞান রয়েছে যে সম্পর্কে কেউই অবহিত নয় । অন্য প্রকার জ্ঞান সম্পর্কে তিনি তাঁর নবী ও ফেরেশতাদের অবহিত করেন । যে জ্ঞান তিনি নবী ও ফেরেশতাদের দিয়েছেন সে সম্পর্কে আমরা অবহিত ।”

ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন (আঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে , তিনি বলেন , “ যদি কোরআনের একটি আয়াত না থাকত তবে অতীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত যা ঘটবে সে সম্পর্কে আমি খবর দিতাম ।”
প্রশ্ন করা হল , কোন্ আয়াতটি ?
তিনি বলেন , “ যে আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন -
يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ

" -- আল্লাহ্ যা ইচ্ছা মুছে দেন ও বহাল রাখেন এবং
মূল গ্রন্থ তাঁর নিকটেই --।”
সূরা - আর রা’দ / ৩৯ ।

তথ্যসূত্র -- জ্যোতি ১ম বর্ষ , ৪র্থ সংখ্যা ।

নিবেদনে -
সাকিল আহমেদ ।

সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

লেখাটি সংগৃহীত ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৬:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×