somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদিস “আ’শারাহ মুবাশশারাহর”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন সাহাবী বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন) ব্যাপারে আলোচনা

০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আহলে সুন্নাতের রাবীগনের(হাদিস বর্ননাকারীগন) মধ্যে বিশেষ করে আহমাদ ইবনে আ’উফের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছে যে,নবী(সাঃ) বলেছেনঃএই ১০জন হচ্ছেন বেহেস্তবাসীঃ ১/আবুবকর ২/ওমর ৩/আলী(আঃ)৪/উসমান ৫/তালহা ৬/যুবাইর ৭/আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ৮/সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ৯/সাঈদ বিন যাইদ ১০/আবু উবাদাহ ইবনে জাররাহ (তিরমিজী,খন্ড-১৩,পাতা-১৮২;সুনানে আবি দাউদ,খন্ড-২,পাতা-২৬৪।)এই হাদিসটি সাঈদ ইবনে যাইদের উদ্বৃতিতে সামান্য পার্থক্য সহকারে উল্লেখ হয়েছে,সুত্রঃ আল-গাদীর,খন্ড,পাতা-১১৮)।
এটি হচ্ছে একটি জাল হাদিস।আহলে সুন্নাত এই জাল হাদিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।আর এই ১০ জনের নাম সমুহকে “আশারাহ মুবাশশারাহ”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন।) পবিত্র মসজিদে নববীর দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল।আর তাদের এই বিষয়টি সাধারন মানুষের মধ্যেও বিশেষ প্রসিদ্ব।এখানে এই বিষয়ের উপর একটি আলোচনা লক্ষ্যনীয়ঃ
একজন আহলে বাইতি আলেম বলেনঃমদীনায় একটি কাজের জন্য আ’মিরিন বে মারুফের দফতরে গিয়েছিলাম।ঐ দফতরের প্রধানের সাথে আলোচনা করতে করতে আশারাহ মুবাশশারাহর প্রসঙ্গে কথা ঊঠলো।
বললামঃ আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে।
প্রধানঃ বলুন।
আহলে বাইতি শিয়া আলেমঃ এটা কিভাবে সম্ভব যে, ২ জন বেহেস্তবাসী একে অপরের সাথে যুদ্ব করে?তালহা ও যুবাইর যারা ঐ ১০জনের মধ্যে আছেন তারা হযরত আয়েশার ছত্রছায়ায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের(আঃ) বিরুদ্বে (তিনিও হচ্ছেন বেহেস্তবাসী) বসরায় জঙ্গে জামালের সুচনা করে এবং যে কারনে বহু লোক নিহত হয়েছিল?
যখন কোরান বলছে যে, “যদি কেউ কোন মু’মিনকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তবে তার শাস্তি হচ্ছে দোযখ আর সে চিরদিনের জন্য সেখানে থাকবে” ( সুরা হাক্কঃ৪৪)।
এই আয়াতের আলোকে যারা সেদিন মু’মিনদের বিরুদ্বে যুদ্ব করেছিল তারা অবশ্যই দোযখে যাবে।কেননা তাদের কারনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
অতএব, বিচক্ষনতার দৃষ্টিতে বিচার করলে বুঝা যায় উক্ত “আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস।
প্রধানঃ যারা সেদিন যুদ্ব করেছিল তারা হচ্ছে মুজতাহিদ।তাই তারা ইজতিহাদের ভিত্তিতে রায় দিয়েছিল।সেই কারনে তারা উপায়হীন ছিল।
আহলে বাইতি আলেমঃ রাসুলের(সাঃ) হাদিসের বিরুদ্বে( এবং কোরানের বিরুদ্বে) ইজতিহাদ করা জায়েজ নয়।আর যেহেতু তিনি বলেছেন,যা সকল মুসলমান গ্রহন করে থাকেঃ
-“ হে আলী!তোমার সাথে যুদ্ব করা মানেই আমার সাথে যুদ্ব করা আর তোমার সাথে সন্দ্বি করা মানেই আমার সাথে সন্দ্বি করা( মানাকিবে ইবনে মাগাযিলি,পাতা-৫০;মানাকিবে খাওয়ারিযমী,পাতা-৭৬, ও ২৪)।
রাসুল(সাঃ) আরো বলেনঃ “ যে আলীকে আনুগত্য করবে সে যেন আমার আনুগত্য করলো আর যে আলীর সাথে বিরোধীতা করবে সে যেন আমার সাথে বিরোধীতা করলো(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল- ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)।
“ আলী সত্যের সাথে এবং সত্য তার সাথে।যেখানেই আলী থাকবে সত্যও সেখানেই থাকবে “(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল- ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)।
সুতরাং ফলাফল দাড়াল এই, ঐ যুদ্বের এক পক্ষ হচ্ছে সত্যের পক্ষে আর তিনি হচ্ছেন আলী(আঃ) এবং অন্য পক্ষ হচ্ছে বাতিল।অতএব,“আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস কেননা বাতিল পক্ষকে কখনো বেহেস্তবাসী বলা যায় না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই হাদিসের রাবী হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আ’ঊফ আর সেও ঐ ১০ জনের একজন।সে এমন এক ব্যক্তি যে ওমরের ইন্তেকালের পর তার তৈরীকৃত শুরার আলোচনায় আলীর(আঃ) উপর চড়াও হয়ে বলেছিল যে, বাইয়াত কর তা না হলে হত্যা করা হবে।আর এই আব্দুর রহমানই উসমানের সাথে বিরোধীতা করেছে।আর উসমান তাকে মুনাফিক বলেছিল।তাহলে কি এমন পরিস্তিতিতে উক্ত রেওয়ায়েত সঠিক বলে মনে হয়?
আবুবকর ও ওমরকে কি বেহেস্তবাসী হবার সু-সংবাদ দেয়া হয়েছিল?কেননা তারা তো বেহেস্তের নারী নেত্রী হযরত ফাতিমা (সা আ) ওফাতের কারন।আর এ কারনে হযরত ফাতিমা(সা আ) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলেননি।
ওমর কি হযরত আলীকে(আঃ) আবুবকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করার জন্য ভয় দেখায় নি? সে কি বলে নি যে,যদি বাইয়াত না কর তবে হত্যা করা হবে?
আর তালহা ও যুবাইর উসমানকে হত্যা করার জন্য কি পীড়াপীড়ি করে নি? তারা কি ইমাম আলী(আঃ)এর আনুগত্য করা থেকে বের হয়ে যাননি? তারা কি জঙ্গে জামালের যুদ্বে আমিরুল মু’মিনিন ইমাম হযরত আলীর(আঃ) বিরুদ্বে তলোয়ার হাতে তুলে নেয় নি?!
ওই ১০জনের আরো একজন হচ্ছে সা’দ বিন ওয়াক্কাস। সে এই হাদিসটিকে সত্য বলেছে।কিন্তু যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,উসমানকে কে হত্যা করেছে? তখন উত্তরে সে বলেছিলঃআয়েশা যে তলোয়ার উন্মুক্ত করেছে এবং তালহা যে তলোয়ারকে ধার দিয়েছে,সেই তলোয়ার দিয়ে উসমানকে হত্যা করেছে।
উক্ত ১০ জনের একে অপরের সাথে শত্রুতা ছিল।তাহলে কিভাবে বলা যায় যে, তারা সকলেই বেহেশতো বাসী?অবশ্যই বলা যায় না।
এপর্যন্ত আলোচনা থেকে পরিস্কার যে,উক্ত হাদিসটি মিথ্যা।
আরো একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার এই যে,যে ২জনকে উক্ত হাদিসের রাবী হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ,যার উল্লেখিত হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা সম্পৃক্ত নয়।আর সে কারনেই তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।অন্যজন হচ্ছে সাঈদ ইবনে যাইদ,সে মুয়াবিয়ার খেলাফতের সময় হাদিস বর্ননা করতো।সুতরাং এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এই হাদিসে মুয়াবিয়ার পাপী হাতের স্পর্শ আছে।অতএব,আশারাহ মুবাশশারাহ হাদিসটি সনদের দিক থেকে একেবারেই ভিত্তিহীন ও অনির্ভরযোগ্য(আল-গাদীর কিতাবের ব্যাখ্যা নামক গ্রন্থ,খন্ড-১০,পাতা-১২২ থেকে ১২৮)।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×