পুরস্কার বা AWARD প্রদান নীতিমালা দরকার:
আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরস্কার বা AWARD দেওয়ার একটা হিড়িক পড়ে গেছে।
কেউ পুরস্কার নিচ্ছে আর কেউ পুরস্কার দিচ্ছে। অনেকে আছেন সম্মানের দিক বিবেচনা করে পুরস্কার নিতে আসছেন না তার বদলে অন্য একজন পুরস্কার বা AWARD নেওয়ার জন্য মঞ্চে আসছেন। আবার অনেকে আছেন তিনি তার হাত দিয়ে পুরস্কার দেওয়ার জন্য মঞ্চে আসছেন।
এই পুরস্কার বা AWARD প্রদান অনুষ্ঠান আবার অনেক বড় সড়ো করে জমকালো ভাবে কোন অভিজাত হোটেল বা অডিটরিয়ামে আয়োজিত হচ্ছে।
টেলিভিশন লাইভ কাভারেজ হয়।
পত্র-পত্রিকায় বড় করে ছবি ছাপা হয়ে নিউজ কাভারেজ হয়।
যিনি পুরস্কার বা AWARD পাচ্ছেন তার হাতে একটা ক্রেষ্ট তুলে দিচ্ছেন বা কখনো কাঁধে উত্তোরীয় ঝুলায় দিচ্ছেন। বাসায় গেলে যার কোন মুল্য নেই। অথচ যারা এই পুরস্কার দিচ্ছেন তারা বাণিজ্যিকভাবে দিচ্ছেন। তারা পুরস্কার বাণিজ্য করছেন।
“মেরিল প্রথম আলো” পুরস্কার বা AWARD একটা প্রেস্টিজিয়স পুরস্কার। এমনও মানুষ আছেন যিনি পরপর তিনবার, পাঁচবারও পেয়েছেন। আরো বেশিও পেতে পারে আমার জানা নেই। এই ধরনের কীর্তিমান গুণিজনকে তো
কোটি টাকা দেওয়া উচিত মেরিল প্রথম আলোর। পুরস্কার বা AWARD নিয়ে ঘর ভরে। অথচ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাদের দেশবাসীর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা হতে হয়। তাহলে এই পুরস্কার বা AWARD দিয়ে কি হবে!!!
যিনি পুরস্কার বা AWARD পান কয়েকদিন ধরে তার উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করা হয়। তখন সময় দিতে হয়। তারপর ঐ প্রদান অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয়। এর কিন্তু একটা ডে মূল্য আছে।
জানিনা যিনি পুরস্কার বা AWARD পাচ্ছেন তিনি সম্মানিত হচ্ছেন কি না। একজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অনেক সাধনা, ত্যাগ, তিথিক্ষা, গবেষনা, কঠোর পরিশ্রম, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে সমাজের বুকে ও দেশের মানুষের মাঝে একটু পরিচিতি লাভ করেছেন। তার সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ তার কাজ, তার কাজের স্বীকৃতি। আর সেই স্বীকৃতিটা এমন ভাবে লুন্ঠন হচ্ছে বাণিজ্যিকীকরণ করে।
(বাংলাদেশ সরকারের বেশ কিছু পুরস্কার বা AWARD আছে। মেডেল বা ক্রেষ্ট, সার্টিফিকেট ও অর্থমূল্য দেওয়া হয়)
আমরা সবাই জানি সরকারের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।বাজেট কম থাকে। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতো সরকারের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে যাবে।তাই না। সরকার যদি এক লাখ টাকা দিতে পারে সেখানে বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানতো পঞ্চাশ লাখ দিতে পারে। যেহেতু বাণিজিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই পুরষ্কারের নাম করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রাউন স্পন্সর, ডায়মন্ড স্পন্সর, গোল্ড স্পন্সর, ব্রঞ্জ স্পন্সর, সিলভার স্পন্সর, টাইটেল স্পন্সর, মিডিয়া ও প্রকাশনা স্পন্সর, যিনি পুরস্কার নিতে আসবেন তিনি টাকা দিবেন, যিনি পুরস্কার দিতে আসবেন তিনি টাকা দিবেন। যিনি দর্শক হিসেবে অডিটরিয়ামে উপস্থিত থাকবেন তিনি টিকিটমূল্য দিয়ে আসবেন। যারা মঞ্চে গান গাইতে আসবেন বা নাচতে আসবেন তারাও আর্থিক সহযোগিতা দিবেন, (প্রমিনেন্ট যারা আছে কেবল তারাই কিছু পায় নামে মাত্র) এরপর দেশী বিদেশী অনুদান ও আর্থিক সহযোগিতাসহ আরো বিবিধভাবে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ বাণিজ্য হয়।
তাহলে পুরস্কার বা AWARD দেওয়া কি এখন বাণিজ্য???
আমার মনে হয় কোন কোন প্রতিষ্ঠান বা অরগনাইজেশন পুরস্কার বা AWARD দিবে বা দিতে পারে তার উপর একটা নীতিমালা হওয়া দরকার।
একটি প্রতিষ্ঠান, কেন পুরস্কার বা AWARD দিবে? তার পুরস্কার বা AWARD দেওয়ার উদ্দেশ্য কি? লক্ষ্য কি? সেই প্রতিষ্ঠানটি কি ধরনের প্রতিষ্ঠান? পুরস্কার দেওয়ার মতো তাদের অর্থনৈতিক ভাবে সামার্থ আছে কিনা? সামাজিক ও রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব আছে কিনা? প্রতিষ্ঠানটির অর্থ উপার্জন হয় কোন পথে? প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স আছে কিনা? টিআইএন আছে কিনা? প্রতিষ্ঠানটি দূনীতিগ্রস্থ কিনা? প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেতন, ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা, সুযোগসুবিধা, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ঠিকমত পাচ্ছে কিনা? প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ঠিকানা আছে কিনা? প্রতিষ্ঠানটি সুধের ব্যবসা করে না কালোবাজারী, বাটপারি ধাপ্পাবাজী, ধান্ধাবাজী করে কিনা?
যারা তার কাজের জন্য পুরস্কার বা AWARD নিবেন, যারা অতিথি হিসেবে পুরস্কার বা AWARD দিতে যাবেন। আপনাদের সম্মানটার কথা মাথায় রাখবেন। আপনি পুরস্কার বা AWARD পাবার যোগ্য কিনা? আপনি একজন গুনি মানুষের হাতে পুরষ্কার বা AWARD তুলে দিবার যোগ্য কিনা? যে প্রতিষ্ঠান পুরস্কার বা AWARD দেবার আয়োজন করেছে তার অবস্থা কি?
ধরেন নায়ক রাজ রাজ্জাকের হাতে AWARD তুলে দিচ্ছেন গুলিস্থানের “ছিড়া টাকা বদল” সমিতির সভাপতি। এখানে নায়ক রাজ রাজ্জাকের সম্মানটা কোথায় গেল!!!
আমি কাউকে ছোট করার জন্য কথাগুলো লিখছিনা। কেউ নিজের দিকে টেনে নিবেন না। প্রয়োজনে উদাহরন ব্যবহার করেছি। আমি বলতে চাইছি পুরস্কার বা AWARD১০০টি না পেয়ে একটা পান সেটা যেন মূল্যবান হয়। একটা মানুষ পুরস্কার বা AWARD পেয়ে যেন তার প্রকৃত স্বীকৃতি পায়। যেমন-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পেয়েছেন।