somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মব্যবসার ফলে ধর্ম বিকৃত হয়, সমাজে অশান্তি দাঁড়ায়, বিকৃত ধর্ম থেকে উৎপত্তি হয় নতুন বিকৃত ধর্মের ।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মব্যবসার ফলে ধর্ম বিকৃত হয়, ধর্ম কাল্পনিক কল্প কাহিনীতে পরিণত হয়। সমাজে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিকৃত ধর্ম থেকে উৎপত্তি হয় নতুন বিকৃত ধর্মের ।

ধর্মীয় বিষয় বলে কোরআন এর মান্দন্ড ভেদ করে কোরআন বহির্ভূত , অমীমাংসিত বিষয় আদি নিয়ে তাদের আলোচনা সেই বিষয়ে নিজস্ব মতবাদে তারা শত শত বই লিখছেন, হাজার বছর ধরে বিতর্ক করে যাচ্ছেন।কিন্তু এখনও সেই বিষয়ে কোন সমাধান এ আসতে পারেনি ।

এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী জাতির কথিত আলেম সাহেবরা, দীনের অতি বিশ্লেষণকারী মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজতাহিদ, মুফতিগণ, ভারসাম্যহীন সুফিবাদী পীর, মাশায়েখ, বুজুর্গানে দীনেরা। তারা তাদের অনুসারী তৈরি করেছেন । তাদের নিজস্ব মতবাদে নিজ স্বার্থে গরে উঠছে তাদের অনুসারি ।ধর্মব্যবসায়ীরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে যার ফলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।
ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা করছে তারা নিজেদের ইচ্ছামত মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রদান করে ধর্মীয় বিধি-নিষেধগুলোকে পরিবর্তন, পরিমার্জন করছে। এর ফলে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো একদিকে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে এবং অপরদিকে যেই বিষয়গুলো প্রকৃতপক্ষে ততটা গুরুত্ব বহন করে না সেগুলো গুরুত্বের বিচারে প্রথম দিকে চলে এসেছে।
“তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না (সুরা বাকারা ৪২)।

” সত্য ও মিথ্যার লড়াই পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তাই যখন একজন ব্যক্তি সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে না তখন সে বিপর্যস্ত হয়। এভাবে একজন ব্যক্তি থেকে একটি পরিবার, একটি পরিবার থেকে একটি সমাজ এবং ধারাবাহিকভাবে গোটা জাতি বিপর্যয়ের শিকার হয়। ধর্মব্যবসায়ীদের নানা ধরনের স্বার্থের দ্বন্দ্বে আজ এক ও অখ- জাতি নানারকম ফেরকা-মাজহাব-তরিকায় ও হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত। এই অনৈক্যের বিষে আজ জাতি জর্জরিত।

মানুষ আলেমদের মনে করে নবীর ওয়ারিশ। যার ফলে তাদের মুখের সকল কথাই তারা পুণ্য মনে করে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কথা এবং তাদের প্রতিটি কথাকে পালনে সওয়াব হবে এ আশায় পালন করা শুরু করে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা হীনস্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে অর্থাৎ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী জনগণের এ বিশ্বাসকেই কাজে লাগায়। তারা জনগণের ঈমানী চেতনাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে।
ধর্মব্যবসা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন -
হে বিশ্বাসীগণ! অবশ্যই ‘আলিম ও দরবেশদের অনেকেই ভুয়ো কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষদের সম্পদ গ্রাস করে থাকে আর আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও।
যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’(সুরা তওবা ৩৪-৩৫)।

পূর্ববর্তী ধর্ম-সম্প্রদায়ের আলেমরাও এভাবে ধর্মের অপব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিত। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা নিজদের জিহবা দ্বারা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেটা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ সেটি কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে।(সুরা ইমরান ৭৮)

তারা কুরআনের আয়াত তো পড়ে; কিন্তু মাসআলা বয়ান করে নিজেদের মনগড়া। সাধারণ লোক মনে করে যে, মৌলভী সাহেব মাসআলা কুরআন থেকেই বলছেন। অথচ বর্ণিত মাসআলার কুরআনের সাথে কোন সম্পর্ক থাকে না। আবার কখনো অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে অতি চমৎকার ভঙ্গিমায় পরিবেশন করে এটাই বুঝাতে চেষ্টা করে যে, এ নির্দেশ আল্লাহর পক্ষ হতে!
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।(সুরা বাকারা ৭৯)।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বারংবার উল্লেখ করেছেন যেন রসুলাল্লাহর উম্মাহর আলেমরা পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট ধর্মব্যসায়ী আলেমদের মত না হতে । আল্লাহ বনী ইসরাইলকে বলেছিলেন, “তোমরা কেতাবের প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর তুচ্ছমূল্যে আমার আয়াত বিক্রি করো না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে গোপন করো না। (সুরা বাকারা ৪১, ৪২)

ধর্মব্যবসায়ীরা এ কাজটি করার মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজেদের জন্য মহান আল্লাহর লানত উপার্জন করছে অপরদিকে জাতিকে টেনে এনেছে ঘোর অন্ধকারে।
➡নিশ্চয় যারা গোপন করে সু-স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন এবং লা‘নতকারীগণও তাদেরকে লা‘নত করে। সুরা বাকারা আয়াত ১৫৯
একজন ধর্মব্যবসায়ী কখনো ঈমানদার হতে পারে না, একজন ঈমানদার কখনো ধর্মব্যবসায়ী হতে পারেন না, ইসলামের প্রচার এবং প্রকৃত ইসলামী দ্বীনের প্রতি, ভাল আমলের প্রতি এবং খারাপ আমল থেকে মানুষকে সতর্ক করার দাওয়াত দেওয়াটা প্রত্যেক মুমিনের সার্বক্ষনিক ঈমানী দায়িত্ব ।
নিজেদের জীবনে কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবার ও পাশ্ববর্তীদেরকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বান করা মুমিন বান্দার আবশ্যক কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা আল-ইমরান : ১০৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণে) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা ন্যায় কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজের নিষেধ কর এবং আল্লাহকে বিশ্বাস কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১০)

এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মুমিনদের একটি বড় দায়িত্বের নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ন্যায় কাজের আদেশ দেয়া এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করা।’ ন্যায় কাজে আদেশ এবং অন্যায় কাজে নিষেধকে একত্রে বুঝায় ‘আল্লাহর পথে আহ্বান’।
হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। সুরা তাহরিম আয়াত ৬

আলেমগণকে ধর্মের প্রচারক/ ইসলামের পাহারাদার হিসেবে উল্লেখ করলেও দুর্ভাগ্য, বর্তমানে আমাদের সমাজে পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত আলেমের সংখ্যা বেড়ে গেছে, দিনদিন বেড়েই চলেছে।
আল্লাহ্‌ বলেন, হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। সুরা হুজুরাত, আয়াত: ৬।

আমাদের জনে জনে সচেতন হতে হবে। আলেম কী বলল, কী পরামর্শ তুলে ধরল–এটি বিশ্বাস করার আগে নিজেই যাচাই-বাচাই করতে হবে। পবিত্র কোরআন পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
আমার লেখা বই এর পাণ্ডুলিপি থেকে আংশিক !

ধর্মব্যবসা ভিডিও


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৪
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×