
ধর্মীয় বিষয়ে কারো প্রতি অতিরিক্ত স্রধা ভালবাসা বা মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা ক্রমান্বয়ে তা শিরক এর দিকে ধাবিত করে।
ইহুদীরা তাদের আলেম ওলামাদের রব হিসাবে গণ্য করে। খৃষ্টানগণ তাদের নবি কে ঈশ্বরের সমকক্ষ মনে করে। এমনকী অনেক মুসলমানও কোন কোন ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে কোরআন ও সুন্নাহর উর্ধ্বে স্থান দিয়ে ফেলে এবং বিনা প্রশ্নে তাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস ও মান্য করে। এভাবেই মানুষ শিরকের সাথে নিজেকে জরিয়ে ফেলে।
পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ তা’লা আমাদের সাবধান করছেন।
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَهُمۡ کَحُبِّ اللّٰهِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ ؕوَ لَوۡ یَرَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اِذۡ یَرَوۡنَ الۡعَذَابَ ۙ اَنَّ الۡقُوَّۃَ لِلّٰهِ جَمِیۡعًا ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعَذَابِ
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালবাসার মত ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। আর যদি যালিমগণ দেখে- যখন তারা আযাব দেখবে যে, নিশ্চয় সকল শক্তি আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আল্লাহ আযাব দানে কঠোর।২:১৬৫
এটা যে কেবল মহানবী (সাঃ)-এর আগমনের সময়ই ছিল তা নয়, বরং শিরকের এই প্রচলন বর্তমানেও ব্যাপক। বর্তমানে ইসলামের দাবীদারদের মধ্যেও এ রোগ সংক্রমণ করেছে। তারা গায়রুল্লাহ, পীর, ফকীর এবং মাজারের গদিনশীনদেরকে কেবল নিজেদের (বিপদে) আশ্রয়স্থল, (মুক্তির) আধার, প্রয়োজনপূরণের ক্বিবলা বানিয়ে রেখেছে যে তা নয়, বরং তারা তাদেরকে আল্লাহর থেকেও বেশী ভালবাসা দান করেছে! তাওহীদের দর্স ও নসীহত তাদেরকেও ঐরূপ অপছন্দ লাগে, যেরূপ মক্কার মুশরিকদেরকে লাগত। কুরআনের এক আয়াতে মহান আল্লাহ তাদের সে চিত্র তুলে ধরে বলেন,
{وَإِذَا ذُكِرَ اللهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ} ‘‘যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, ‘আল্লাহ এক’ --একথা বলা হলে তাদের অন্তর বিতৃষ্ণায় সংকুচিত হয় এবং তিনি ছাড়া অন্য (উপাস্য)-দের উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়। (সূরা যুমার ৪৫ আয়াত) اشمَأزَّت মানে হৃদয় সংকীর্ণ হওয়া।
কোরআন বলে : তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের*(‘আলিম আর দরবেশদেরকে) রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা‘বূদের ইবাদাত করবে । তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র। ৯:৩১
ধর্মীয় বিধান হিসেবে কারো কথা বিনা যাচাইয়ে মেনে নেয়া বা কাউকে নিজে থেকে ধর্মীয় বিধান দিতে পারার অধিকারী মনে করার অর্থ হলো তাকে বিধাতা বানিয়ে নেয়া।
ইয়াহুদী-নাসারাগণ তাদের আলেম ও যাজক শ্রেণীকে আল্লাহর পরিবর্তে রব ও মাবুদ সাব্যস্ত করে রেখেছে। অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালামকেও মা’বুদ মনে করে। তাকে আল্লাহর পুত্ৰ মনে করায় তাকে মা’বুদ সাব্যস্ত করার দোষে যে দোষী করা হয়, তার কারণ হল, তারা পরিষ্কার ভাষায় ওদের মা’বুদ না বললেও পূর্ণ আনুগত্যের যে হক বান্দার প্রতি আল্লাহর রয়েছে, তাকে তারা যাজক শ্রেণীর জন্যে উৎসর্গ রাখে। অর্থাৎ তারা যাজক শ্রেণীর আনুগত্য করে চলে; যতই তা আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী হোক না কেন? বলাবাহুল্য পাদ্রী ও পুরোহিতগণের আল্লাহ বিরোধী উক্তি ও আমলের আনুগত্য করা তাদেরকে মা’বুদ সাব্যস্ত করার নামান্তর, আর এটি হল প্রকাশ্য কুফরী ও শির্ক।
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ইয়াহুদী-নাসারারা তো নিজেদের আলেমদের কখনো ইবাদত করেনি, তাহলে এটা কেন বলা হয়েছে যে, তারা তাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে?
এ কথা ঠিক যে, তারা তাদের ইবাদত করেনি। কিন্তু এটা তো সঠিক যে, তাদের আলেমরা যা হালাল করেছে তাকে তারা হালাল এবং যা হারাম করেছে তাকে তারা হারাম বলে মেনে নিয়েছে। তাদের কথাই ধর্মীয় বিধান হিসাবে মেনে নিয়েছে । আর এটাই হল তাদের ইবাদত করা।
কোনো নবী-রসূল তাঁদের উপর আল্লাহ কিতাবের মাধ্যমে যে বিধি-বিধান নাযিল করেছেন তার বাহিরে কোনো বিধি-বিধান দেননি।
অর্থাৎ আল্লাহর কিতাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ ঈসা কোনো কথা বলতে পারেন বলে মেনে নেয়ার অর্থ হলো তাঁকে বিধাতা হিসেবে মেনে নেয়া, যদিও এজন্য তিনি নিজে দায়ী নন, কারণ বাস্তবে তিনি এরূপ কোনো কথা বলে যাননি, যা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবের সাথে সঙ্গতিহীন।
এ আয়াতে আহলে কিতাবের প্রসঙ্গে যা উল্লেখ করা হয়েছে একই শিক্ষা সর্বকালে প্রযোজ্য, অর্থাৎ বর্তমানেও যদি কেউ আলিমদের কথা বা রসূলের নামে প্রচারিত কথা আল্লাহর কিতাবের সাথে সঙ্গতিহীন হলেও মেনে নেয়, তাহলে তার অর্থ হলো আলেমদেরকে রব বা বিধাতা বানানো এবং তাদের ইবাদাত-দাসত্ব করা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



