করোনার ক্ষত বহুমুখী। অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্য সকল ক্ষেত্রেই করোনা বিশ্ব ব্যাপী যে ক্ষত সৃষ্টি করে চলেছে তার পুনরুদ্ধার করতে এ বিশ্বের অনেক সময় লেগে যাবে। তবু হয়ত এক সময় বিশ্ববাসী এ ক্ষতি সামলে উঠতে সক্ষম হবে। কিন্তু করোনা সবথেকে বড় যে ক্ষতিটা করে যাচ্ছে তাঁর পুনরুদ্ধার কখনোই সম্ভব হবে না।
সারা বিশ্ব এই সময়ে হারিয়েছে অগুনতি গুণীজন। যারা প্রত্যেকেই ছিলেন স্ব স্ব ভু খন্ডের এক একজন আলোক বর্তিকা সরূপ। যাদের কোন প্রতিস্থাপন কোনদিনই সম্ভব হবে না। আমরা যদি একটু লক্ষ করি তাহলে দেখব। যাদেরকে আদর্শ ধরে আমরা বাঁচতে চাই। যাদেরকে অনুপ্রেরণার প্রতিমূর্তি হিসেবে দার করিয়ে আমরা সামনে এগোই। প্রকৃত পক্ষে তাঁরা সকলেই গত। কেউ হাজার হাজার বছর আগে কেউ বা শত শত বছর আগে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। ক্ষনজন্মা সেই মানুষগুলি চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু রেখে গেছেন আদর্শ, অনুপ্রেরণা। রেখে গেছেন দিক নির্দেশনা। সমসাময়িক বিশ্বে তাদের সমকক্ষ একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয় তাদের কর্মের ব্যাখ্যা প্রদানকারীর সংখ্যাও এখনকার সময়ে নেহায়েতই নগণ্য।
সমসাময়িক বিশ্বে পূর্বেকার সেই সব আদর্শবানদের যারা ধারণ করার চেষ্টা করেন। যারা তাদের মহৎ কর্ম যজ্ঞকে আমাদের সামনে তুলে ধরে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। আমরা তাদেরকে তুলনা করি বাতিঘরের সাথে।
সত্যিই তো, তাঁরা একেকজন গভীর অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বিভ্রান্ত জাতীকে দিকনির্দেশনা দানের জন্য। বাংলাদেশে এই মহান দায়িত্বটি স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই যে কয়েকজন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীরা দিনের পর দিন ধরে করে আসছিলেন এই করোনা কালীন সময়ে আমরা তাদের অনেক কজনকে হারিয়ে ফেলেছি। নিভে যাচ্ছে একের পর এক আমাদের সেই বাতিঘরগুলো! এটাই অমোঘ নিয়ম। সকলকেই এক সময় চলে যেতে হয়। কিন্তু সমস্যাটা হল যখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকজন চলে যান তখন এক বিশাল শুন্যতার সৃষ্টি হয় যা এক একটা জাতিকে গভির অন্ধকারে নিমিজ্জিত করে। যেমনটা স্বাধিনতা্র ক্ষনপূর্বে বুদ্ধিজীবি নিধনের মাধ্যমে একবার ঘটানো হয়েছিল। যার কুফল এ জাতি আজো ভোগ করে চলেছে। এই করোনা যেন আরেকবার সেই অভিশাপ হয়ে আমাদের কাছে এল!
কিন্তু এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই আমরা পারি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে। আর মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করতে তিনি যেন আমাদের আর অন্ধকারে ডুবিয়ে না দেন। ভাল থাকুক আমাদের আলোকিত গুণীজনেরা। সচল থাকুক জাতীর বিবেক বলে পরিচিত আমাদের বাতিঘরগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৫