একই দিনে দুটি খবর একটি চট্টগ্রামে "শিক্ষা দিতে পিটিয়ে হত্যা বাসচালককে" অপরটি "রামপুরায় বাসচাপায় স্কুল ছাত্র নিহতঃ ৯বাসে আগুন" দুটোই গা শিউরে ওঠা একটি খবর। ভয়ংকর অপরাধও বটে। কিন্তু একটিবার ভাবুন তো এমনটি কেন ঘটল? যারা বাস চালককে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তারা " প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, চবি ১ নম্বর গেট এলাকায় একটি বাস অভিযুক্তদের বহনকারী মাইক্রোকে চাপা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাসচালককে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। বাসটির পিছু নিয়ে আমিন জুট মিল এলাকায় এসে বাসচালককে মারধর করে।"
দ্বিতীয় খবরটিতে বলা হচ্ছে, রামপুরায় বাসচাপায় স্কুল ছাত্র নিহত হলে উত্তেজিত জনতা ৯টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কেন অভিযুক্তরা বাসচালককে শিক্ষা দিতে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিলো? একজন চালকের সাথে কোনরূপ কোন পূর্ব শত্রুতা না থাকা স্বত্বেও কেন কিছু মানুষ তার পিছু নিয়ে ধাওয়া করে ধরে পিটিয়ে হত্যা করবে? কেন তাঁরা তাকে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিল? আর কেনই বা উত্তেজিত জনতা একে একে নয়টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেবে। মানুষ কতটা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে এমন ঘটনাগুলি ঘটতে শুরু করে?
সাধারন মানুষের এই বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠার কারণ একটাই, রাষ্ট্র বরাবরই ঘাতক চালকদের যথাযথ বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সাধারন মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে অন্যদিকে আমাদের দেশের চালক গন দিন দিন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিন রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল! এ দেশে এ যেন এক চলমান মহামারী। কোন প্রতিকার নেই। মানুষ মরছে; আন্দোলন হচ্ছে ঠিকই সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। করোনার মত অস্থায়ী মহামারী থেকে বাঁচতে রাষ্ট্র যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছে। সর্বোপরি যে চেষ্টাটা করেছে তাঁর সিকি ভাগ উদ্যোগ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নেয়নি। কেন নেয়নি সেটা রাষ্ট্রের কর্ণধাররাই ভাল জানেন।
সন্দেহ নেই রাষ্ট্রের এই নির্লিপ্ততাই সাধারণ মানুষকে ক্রমশ খেপিয়ে তুলছে। সাধারণ মানুষ আজ ফুসে উঠতে শুরু করেছে। এটা কোন ভাল লক্ষন নয়। এমন ঘটনা এরপরে যে আরও ঘটবে না কে জানে? সেটা কারো জন্যই মঙ্গল জনক হবে না। এই ঘটনা যেন কোনভাবেই অনুকরণীয় হয়ে না ওঠে। সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আর তা কেবল অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে নয়। একই সাথে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষিত এবং মানবিক করে রাস্তায় নামতে বাধ্য করতে হবে।
এরপরেও যদি সংশ্লিষ্টরা সতর্ক না হন তাহলে হয়ত এরপর থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে চালকদের হত্যার আরও অনেক খবরই আমাদের শুনতে হবে? মুখোমুখি হবে আরো অনেক অপ্রীতিকর অবস্থার যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১৪