ছেলের স্কুল থেকে জানাল কোভিড টিকা নিতে জন্ম নিবন্ধন কার্ড সহ ছেলেকে একটি নির্দিষ্ট স্কুলে নিয়ে যেতে হবে। ছেলের বার্থ সার্টিফিকেট নিলে হবে না ডিজিটাল নিবন্ধন লাগবে। অনলাইনে বসে গেলাম।
ডিজিটাল ফর্ম পুরনের এক পর্যায়ে বাবা মার জন্ম সনদ চাইল। শুধু এন আই ডি তে হবে না। জন্ম সনদ নাম্বার লাগবে। না হলে হবে না। আমাদের সকল প্রয়োজন এন আই ডিতে মেটে সঙ্গত কারনেই কখনো জন্ম সনদের কথা ভাবি নি। কিন্তু ছেলের জন্ম সনদ পেতে বাবা-মা'র জন্ম সনদ লাগবে! এখন এই জন্ম সনদ কই পাই?
শুনলাম জন্ম সনদের জন্য যেতে হবে আমার জন্মভিটায়/ইউনিয়নে। অর্থাৎ আজ থেকে পয়তাল্লিশ বছর আগে আমি সত্যিই জন্মেছিলাম কিনা সেটা নির্নয় করবেন এখনকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ তো সেই চারিত্রিক সনদপত্র নেয়ার মত! চেনেন না জানেন না অথচ অনুরোধের ঢেকি গিলে লিখে দেন " আমার জানামতে তাহার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র"।
যাই হোক এই স্বল্প সময়ে তো সেই সনদ গ্রহন তো আর সম্ভব নয়, কাজেই বাধ্য হয়ে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েই টিকাকেন্দ্রে ছুটলাম। উল্লেখ্য আমার ছেলেটা জন্মেছিল বারডেম হাসপাতালে; ভাবলাম যেহেতু সেখানকার বার্থ সার্টিফিকেট আছে সেহেতূ টিকাটা মিললে মিলতেও পারে।
ছুটলাম টিকা কেন্দ্রে। তাঁরা আর কি করবে। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম! সেখান থেকে একই কথা জানাল জন্ম সনদ ছাড়া টিকা দেয়া যাবে না। ব্যার্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসলাম। টিকা দেয়া হলনা ছেলেটাকে। কে জানে এর পরে হয়ত শুনব টিকা না নিলে অনলাইন ক্লাসও বন্ধ করে দেবে! সরকার একদিকে টিকা গ্রহনে উৎসাহিত করছে অন্যদিকে এমন সব আজগুবি প্রবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এর মানেটা কি?
সংযুক্তি- টিকাতো পেলামই না দেখে এলাম টিকা কেন্দ্রের বাইরে কি ভীষণ অব্যবস্থাপনা। মা বাবাকে টিকা কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না শুধু মাত্র শিক্ষার্থীরা (ষষ্ঠ শ্রেনি থেকে দশম শ্রেনীর)ঢুকতে পারছে। এ যেন পরীক্ষা কেন্দ্র!
ভয়ার্ত শিশুদের কেউ একা যেতে চাচ্ছে না। কারও বাবা-মা একা যেতে দিতে চাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থিরা একা একা যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাদের উদ্বিগ্ন মা বাবারা কোভিড বিধি নিষেধ না মেনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে শিশুদের ফেরার অপেক্ষা করছেন। সংযুক্ত ছবিতেই বোঝা যাচ্ছে কোভিড টিকা নিতে যাওয়াদের কোভিড বিধি নিষেধ মানার প্রবণতা কতটা ছিল। তবে ছোট রাস্তার পাশে এত লোক দাড়ানোর কোন ব্যবস্থাও রাখা হয় নি। অথচ উত্তরায় প্রতিটি সেক্টরে মাঠ ছিল চাইলে তাঁর যে কোন একটি মাঠ সংলগ্ন প্রতিষ্ঠানে টিকাদান কেন্দ্র করা যেত। কিন্ত সে ক্ষেত্রে তো সংশ্লিষ্টদের সেইরকম দ্বায়িত্ব সচেতন হতে হবে। সব দেখে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাবটাই কেবল পরিলক্ষিত হয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়।
শেষ পর্যন্ত ছেলেটাকে টিকা দিতে তো পারলামই না মাঝখানে একটা ঘন্টা ভিড়ের মধ্যে ঝুকিতে দাঁড়িয়ে থাকলাম। বুঝলাম না ব্যর্থতা টা আসলে কার। সমাধানই বা কি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৪