somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূঃসহ স্মৃতির দিনলিপি থেকে কিছু অংশ

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাম তার শাহাদাত হোসেন রবি। চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে। অন্য দিনের মত এদিন ও সে স্কুলে যায়। দিনটি ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ঐদিনই ঘটে যায় তার এই ক্ষনিক জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। তখন বিদ্যালয়ের টিফিন টাইম চলছিল। অন্য সবার মত সে ও মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করে। মাঠের এক পাশে রাখা ছিল একটি ট্রাক। বাচ্চারা সাধারনত গাড়ি দেখলে দৌড়ে যায়, পিছন দিয়ে লাফিয়ে ঝুলতে পছন্দ করে। দূর্ঘটনার কথা তারা হয়ত ভাবে না। খেলার মাঠে সব বাচ্চারা খেলতেছিল। এমন সময় ট্রাকটিতে ড্রাইভার(যথা সম্ভব হেলপারই হবে) চড়ে বসে ট্রাকটি স্টার্ট করল। ট্রাকটি সামনে এগুতে লাগল। আর বাচ্চারা কেউ সাইডে সরে যাচ্ছে, কেউ পিছনে সরে যাচ্ছে। এভাবে ট্রাকটি এগুতে থাকে। ড্রাইভার বেশধারী হেলপারটি ট্রাকটিকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। শাহাদাত হোসেন রবি পিছনে সরতে সরতে দেওয়ালে গিয়ে ঠেকে যায়। আর অমনি ট্রাকটি তার কোমর বরাবর সজোরে চাপ দেয়। ওখানেই বসে পড়ে সে। কোন কাটা ছেড়া কিছুই হয়নি। কিন্তু কি যে হয়ে গেছে তা যতই সময় যেতে লাগল ততই আমারা এখন টের পাচ্ছি। পুরো কোমরের হাড় ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে গেছে। তবে ভাঙ্গার চেয়ে মারাত্মক যে ক্ষতিটি হয়েছে তা হল তার প্রসাবের রাস্তটি ছিঁড়ে গেছে।

প্রাথমিক অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডাক্তার একটি এক্সরে করে রিপোর্ট দেখে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পঙ্গু এবং ঢাকা মেডিকেল তাকে ৩ দিনে ৫টি বড় ধরনের অপারেশন করেন। সেই থেকে বিভিন্ন হাসপাতলে ঘুরতে ঘুরতে আজও তার প্রসাবের রাস্তাটি ঠিক হয়নি। দূঃসহ স্মৃতির দিনগুলো ফেব্রুয়ারি আসলে মনে পড়ে। মনে পড়ে যায় যখন ঐসব পথ দিয়ে যাই। কিংবা তাকে যেখানে যেখানে নিয়ে গেছি সেখানে যাই যখন।

এই দূর্ঘটনার মাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্তশালী কিছু মানুষকে খুব কাছে থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। তা হল শাহাদাত হোসেন রবিকে যে ঘাতক ট্রাকটি স্কুলে খেলার মাঠে টিফিন টাইমে এক্সসিড্ন্টে করে তার মালিক এলাকার স্বনামধন্য, অনেক টাকার মালিক। দূর্ঘটনার খবরটি আমরা জানার পর থেকে শাহাদাত হোসেন রবির সুচিকৎিসা ও তাকে সুস্থ করার জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমত সব চেষ্টা করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছি। আমার অনেক শিক্ষার্থী অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে তার জন্য। এজন্য আমি তাদের নিকট চির কৃতজ্ঞ। ঘাতক ট্রাকটির মালিকের বিরুদ্ধে অনেক্ই আমাদেরকে মামলা করার জন্য বলেছে। কিন্তু আমরা রবিকে নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য সম্ভব সবকিছু করেছি। ট্রাকটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা, এসব বিষয়ে আমাদের কোন আগ্রহ ছিল না। ট্রাকটির মালিক ৩দনি পর প্রথম দেখা করতে আসেন। একমাসের মাথায় ৫০ হাজার টাকা দেন। আমরা নিতে চাইনি। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অনুরোধে কেবল তা গ্রহন করি। এক মাসে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার মত ব্যয় হয়ে গেছে । ভবিষ্যতে আরও হবে। এর মধ্য খেকে ৫০ হাজার টাকা! যাই হোক মালিক শুধু টাকাটিই দিয়েছেন তেমন কোন খোঁজ খবর নিতেন না। দুই মাসের মাথায় আবার একদিন ২৫ হাজার টাকা দিলেন। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাও গ্রহন করি। এখানেই শেষ। সেই থেকে আজ অবধি ট্রাকের মালিক একটি বারের মত মোবাইল ফোনে পর্যন্ত খবর নেননি। পাশাপাশি গ্রামে বাড়ি, ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে বাড়িতে যান। একটি বারের জন্য রবিকে দেখতে যাননি। হায়রে মানুষ! আজও আমরা রবির চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের দ্বারে দ্বারে। জানি না আল্লাহ কবে তাকে পরিপূর্ন সুস্থ করবেন। সবাই দোয়া করবেন রবি যেন পরিপূর্ন সুস্থ হয়। এখনও আমার কারো দোষ দিব না। হয়ত এটাই ছিল রবির নিয়তি।
(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×