আমার চাকুরী জীবনের দশ বছরের অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বিচিত্রতা। আমার চেনা, জানা বা জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে অনেক সময় অজানা কিছু জিনিসের সম্মুখীন হয়েছি। সেগুলো আজ শেয়ার করছি।
আমার প্রথম কর্মস্থল ছিল যশোর জেলায়। সামাজিক রীতিনীতি, কথা বার্ত সব কিছুতে কিছু ভিন্নতা পেয়েছি। যার মধ্যে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বই পত্রে কাঠবিড়ালী নামক যন্ত্রুর কথা পড়েছি, কিন্তু কখনও দেখি নাই। যশোর জেলায় গিয়ে গাছে গাছে প্রচুর কাঠবেড়ালী খেলা করতে দেখেছি। কুমড়োর বড়ির কথা পড়েছি, কখনও দেখি নাই এমনকি খাই ও নাই। এ্ই কুমড়োর বড়ি খেতে নিয়ে একদিন পড়েছি চিন্তায়। আমি তখন থাকতাম একজন শিক্ষকের বাড়িতে। দুপুরে খাবার সময় পাতে যে তরকারি দেওয়া হয় তাতে ঐ কুমড়োর বড়ি নামক বস্তুটি ছিল। আমি তা পাতের মধ্যে এ্ই নতুন বস্তুটি নিয়ে কেবল নাড়াচাড় করছি আর দেখছি কে কি করে এ্ই বস্তুটিকে। আমি চিন্তায় পড়ে গেছি এটা কি খওয়ার জিনিস? এটা কি খায়? পরে একজনকে দেখলাম খাচ্ছে, আর তখন আমিও খাওয়া শুরু করলাম। ঐ দিন আর কারো নিকট প্রশ্ন করি না্ই। তবে পরে ঐ জিনিসটির নাম জেনে নিয়েছি এবং অনেকবার খেয়েছিও।
যশোরে থাকা অবস্থায় গ্রামীণ বিভিন্ন খেলা, মেলা সবই দেখেছি। ষাঁড়ের লড়াই, ঘোড়ার দৌড়, লাঠি খেলা, বিভিন্ন উৎসবে মেলা সবই দেখেছি। ভাল কিছু বন্ধু পেয়েছি যারা আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে। সা্ইকেল চেপে দূরে বাওড় দেখতে গিয়েছি। গ্রামীণ মানুষের জীবন যাপন দেখেছি।
যশোর এ চাকুরী জীবনের একটা অংশ ছিল লজিং মাস্টার হিসেবে থাকা। আমার গোষ্ঠীর মধ্যে কেউ কোনদিন লজিং মাস্টার ছিলেন না। অথচ বাস্তবতা আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেখানে। আমার চাকুরীর বেতন হচ্ছে না বিধায় আমাকে বাধ্য হয়ে পরের বাড়ি লজিং থাকতে হয়। আমার বেতন বন্ধ ছিল ১৬ মাস। এই সময়ে আমি ২টি বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকি। ১ম যে বাড়িতে ছিলাম, সে বাড়ির কর্তা ছিলেন কৃষক। কৃষক হয়েও ছেলের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে খুব্ই সজাগ। তা্ইতো বাড়িতে লজিং মাস্টার রেখে দিয়েছেন। তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন মাস্টারের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে। আমার ছাত্রর মাকে আমি মামী ডাকতাম, মামী আমাকে সকালের গরম খাবার দেওয়ার পাশাপাশি দুপুরের খাবারটা সাথে করে দিয়ে দিতেন যত্ন করে। আমি চেষ্টা করেছি তাদের ছেলের ভাল লেখা পড়ার জন্য। তবে আমি সে বাড়িতে বেশি দিন ছিলাম না। কারণ আমার কর্মস্থল থেকে বাড়িটি ছিল অনেক দূরে। তাই কিছু দিনের মধ্যে অন্যত্র চলে আসি লজিং মাস্টার হিসেবে। সেই বাড়িটি ছিল আমার কর্মস্থলের খুব কাছে। এই বাড়িটিতে আমার নিকট কিছু অসঙ্গতি চোখে ধরা পড়ে। যা আমার কাছে ছিল বিরক্তিকর। আমি যখন পড়াতে বসতাম আমার ছাত্র তখন খাওয়ার জন্য চলে যেত। কখনও টিভিতে খেলা থাকলে বাপ-বেটা একত্রে বসে খেলা দেখত পড়ার সময়। আর আমি ঘরে এ্কা একা বসে থাকতাম। বাবা মায়ের কাছে তাদের এই সন্তানটি ছিল খুব আদরের। তাদের বাড়িতে সবচেয়ে খাবাপ যে দিকটি আমার চোখে পড়েছে তা হল, তার টয়লেটে আলাদা জুতা ব্যবহার করে ঠিকই, কিন্তু টয়লেটে ব্যবহার করা বদনা দিয়ে গায়ে পানি দিয়ে গোসল করে। একদিন বাড়ির কর্তাকে বিষয়টি সম্পর্কে বললে তিনি আমাকে বলেন যে, বদনার ভিতরে কি পায়খানা যায়? বিষয়টি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারলাম না। চিন্তা করলাম এই বদনার পানি দিয়ে যদি তরকারি রান্না করে কিংবা অন্য কিছু ধোওয়া মোছা করে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম গুড বাই লজিং মাস্টার এর দায়িত্ব। কষ্ট হলেও নিজে বাসা ভাড়া করে থাকব। তবু আর লজিং মাস্টার হিসেবে থাকব না। কারন লজিং মাস্টার হিসেবে থাকতে হলে সন্ধ্যে হলে ঘরে ফিরে আসতে হয়। ছুটিতে বাড়িতে পর্যন্ত ঠিকমত যাওয়া যায় না। তাই বছর শেষ হতেই লজিং মাস্টার এর দায়িত্ব ছেড়ে চলে আসি। শুরু করি ব্যাচেলর এর নতুন জীবন।
ব্যাচেলর এর বাসা ভাড়া নেওয়া ও জীবন যাপন নিয়ে পরবর্তীতে আবার শেয়ার করব।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




