somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

`আবার আচিবো ফিরে, এই বংলাই`

১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি জীবননান্দ দাশের ‘আবার আসিবো ফিরে...’ এর সুরে সুরে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন বাংলাদেশ সফরকালে বললেন, ‘আবার আচিবো ফিরে, এই বংলাই!`

একটু অন্য রকম, অন্য সুরে বিদেশির মুখে বাংলা শুনতে ভালোই লাগে! ‘আবার আচিবো ফিরে, এই বংলাই’, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি... ছাড়াও আরো কিছু বাংলা শব্দ শিখে নিয়ে (কেমন আচে, ধন্যোবাদ, আসসালামু আলাইকু ইত্যাদি) বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সূচনায় সম্বোধনে এবং বক্তব্যের বিদায় বেলায় বাংলার মানুষকে শুনিয়ে চমক দিয়ে চমৎকারভাবে কড়তালির বাহবা নিয়েছেন। পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক `ডক্টর অব লজ` ডিগ্রি।

বান কি-মুন’কে আমার চিরদিনের জন্য ‘বাহবা’ দিতে চাই, মনে রাখতে চাই। পৃথিবীর প্রায় ২৫ কোটি বাংলাভাষী তাঁকে দিতে চাই অনন্ত দিনের হাততালি। তিনি বাংলাদেশ, দেশের ইতিহাস, বাঙালি জাতি, জাতির ঐতিহ্য-গৌরব সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। তাই মুনের কন্ঠে শুনতে পাই, "আমি বাংলাদেশকে নিজের ঘরের মতো মনে করি। আমাদের দুই দেশেরই রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। আমরাও গরিব ছিলাম, আমরা দু-দেশই যুদ্ধের ক্ষত বহন করছি।"

বান কি-মুন আমাদের বাড়ির কাছের আরশী নগরের প্রিয় প্রতিবেশী। তাছাড়াও ১৯৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাইস কন্সালের দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক বার ঢাকায় এসেছেন। কারণ, তখন ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস ছিল না। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তরুণ মুন নবপরিণীতা স্ত্রী ইউ সুন তায়েককে নিয়ে ঢাকায় এসে থাকতেন পুরান ঢাকার ইসলামপুরের একটি হোটেলে। ঢাকায় রয়েছে তাঁর অনেক স্মৃতি! সেই হোটেলের স্মৃতিকথা দীর্ঘ চার দশকেও ভুলতে পারেননি মুন। তিনি স্মৃতি হাতড়ে আরো বলে গেলেন, ‘তখন এত যানজট ছিলো না। তেজগাঁ এয়ারপোর্টে নেমে একটি রিকশায় উঠে পড়েছিলাম’ ইসলামপুর হোটেলের উদ্দেশ্যে।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিধ্বস্ত চেহারার কথাও মনে রেখেছেন তিনি। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল সে কথাও ভোলেননি।

এ সময় তিনি তাঁর বিয়েতে পাওয়া (১৯৭০ সালে) উপহার হিসেবে একটি পারকার কলমের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। সেই কলমটি দিয়েছিলেন তার ৮ ভাইয়ের একজন-যিনি এখন বেঁচে নেই।

সেই স্মৃতি জড়ানো কলম দিয়েই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যেকার দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের শুরুতে একটি চুক্তিতে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। কলমটি এখনও স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এভাবেই তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে ৪০ বছর ধরে নিবিড়ভাবে দেখেছেন বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতি।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে চাই, আমাদের মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকতি অর্জন করেছে। নানা কারণেই বাংলা ভাষার মর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষার সিয়েরা লিয়ন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং ঝাড়খন্ডের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা অর্জন; বাংলাভাষা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে এবং ইমিগ্রেশন ওয়েব সাইটে ব্যবহৃত হওয়া, যুক্তরাজ্যের হিথরো বিমানবন্দরে বাংলায় ঘোষণা, বিশ্বের বিভিন্ন শহরে শহীদ মিনার স্থাপন, যুক্তরাষ্ট্রে একুশের স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ- --এভাবেই বিশ্বে বাংলাভাষার কদর ক্রমাগত বাড়ছে। এ গৌরব বাংলাদেশের, এ অহংকার বাঙালি জাতির। বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চম, মতান্তরে চতুর্থ।

তাই বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের প্রশংসা করে বান কি মুন বলেন, `আবারও বাংলাদেশে ফিরে এসে কী যে আনন্দ লাগছে! দেশটি এতই সুন্দর যে না বলেই পারছি না, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। দেশটির এই জাতীয় সঙ্গীত আমার হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।` তিনি বলেন, `আপনাদের দীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্য, অবদান ও অর্জন বিশ্ব ভালো করে জানে। ...আমি আজ বলতে চাচ্ছি, জাতিসংঘের নেতৃত্বে বর্তমান বিশ্ব কোন দিকে যাচ্ছে এবং কীভাবে বাংলাদেশের জনগণ এ চলমান গতিধারার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন।` (ঢাকার জাতীয় দৈনিকসমূহ, নভেম্বর ১৫/১৬, ২০১১, ঢাকা )

এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধী (মানবতাবিরোধী অপরাধীদের) বিচার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে, ২০১৪ সালের সুষ্ঠু সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তা, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রভৃতি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। তবে ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের এক নম্বর সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ১০টি দেশে ৪৫টি মিশনে ১০ হাজার ৬৬৯ জন শান্তিরক্ষীর কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য বান কি মুন’কে ধন্যবাদ।

তবে আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য তা নয়। শুরুতে বলেছিলাম, বান কি-মুন’কে আমার চিরদিনের জন্য ‘বাহবা’ দিতে চাই। কেন?

এই জন্য যে, জাতিসংঘে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দিয়েছে। সেই সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলায় ভাষণ দিতে গিয়ে দাবি জানিয়েছেন, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি দানের। তিনি যদি বাংলাভাষার জন্য এই সন্মান ও মর্যাদার সুব্যবস্থা করেন, তাহলে বাঙালি জাতি অনন্তকাল বান কি মুনকে মনে রাখবে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×