somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের ভয়াবহতম ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস-১২ই নভেম্বর, ১৯৭০

১২ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১৯৭০ এর ১২ নভেম্বরে আড়াই লক্ষ মৃত শিশুদের একজনঃ





১২ই নভেম্বরের রাত্রি

সে দিনটির কথা আমার মনে আছে স্পষ্ট।
আমি ছিলাম চিটাগাংএ। সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। আবাসিক স্কুলে পড়তাম। ১ কিমি সামনে সমুদ্র, ২০০ গজ পেছনে পাহাড়। সেদিন সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাইক্লোন। আমরা দোতলায় থাকতাম। ৮ জন এক ঘরে। এমন বাতাস আর ঝড়ের তান্ডব যে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অবিরাম বজ্রপাত, বারান্দায় সামুদ্রিক পাখির স্তুপ। সারারাত সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে (আর এক সতীর্থ সারারাত আজান দিয়ে) রাত পার করি। ভোরে পেছনের জানলা দিয়ে দেখি অভূতপূর্ব দৃশ্য। পেছনের পাহাড় আগে ছিল ঘন জংগলে ঢাকা- সে পাহাড়ে তো কোন গাছই নেই, এমনকি কোন ঘাসও নেই, সবুজ গাছ গাছালীতে ঢাকা পাহাড় এখন মুড়ানো খয়েরী রংএর টিলা। হোস্টেলের বেয়ারা কিছুক্ষন পর ডাকলো পাখী দেখতে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। শামুক খচা (ভাংগা), কাঞ্চি চোরা, ওয়াক, স্নাইপ, গাংচিল, বক আরো অচেনা অনেক প্রজাতির পাখি। বড় সাইজের চার বালতিতেও কুলায় নাই, বারান্দার একপাশে জড়ো করা আছে বাকিগুলো। পাখিগুলো সমুদ্রের দিক থেকে এসে আছড়ে পড়ে মরছিল হোস্টেলের সাথে বাড়ি খেয়ে খেয়ে সারারাত ধরে।


জলচ্ছ্বাস নিহত ছোট্ট একটি মেয়ের মৃতদেহ সৎকারের চেষ্টা

এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আমাদের শীতের ছুটি হয়। ছুটিতে বাবার শিকারের সংগী হয়ে একদিন শিকার কুড়োতে কুড়োতে উত্তর পতেংগা থেকে হালি শহর সৈকতে আসি। তখন সন্ধ্যা প্রায়। বীচ থেকে (তখন মাটির বাঁধ আর ম্যাংগ্রোভ ছিলনা) একসারি নারিকেল গাছ আমাদেরকে গ্রামের ভেতর দিয়ে সোজা সমুদ্র পাড় থেকে রাস্তায় নিয়ে আসতো (আমরা নাম দিয়েছিলাম তাহিতি)। বাবা উত্তর পতেংগায় নেমে গাড়িটিকে হালিশহরে পাঠিয়ে দিতেন। যেখানে বীচ শেষ এবং গ্রাম শুরু হ'তে যাচ্ছে ঠিক সেখানেই একটা ঝোপের মধ্যে কমলা রংয়ের কিছু একটা দেখে এগিয়ে যাই আমি। তিন চার বছরের একটা মেয়ে শিশুর মৃতদেহ -সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসা ঘুর্ণিঝড়ের সংহার। বেশ কিছুদিন গত হয়েছে। কিন্তু তাতে না পচঁন ধরেছে না মুখটা একটুও বিকৃত হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল শিশুটি পুতুল খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবা অনেক চেষ্টা করলেন সৎকারের। গ্রামের লোকদের অসহযোগিতায় তা আর সম্ভব হয়নি। তারা এক পর্যায়ে বলা শুরু করলো "শহরোত্তুন মাঁরি আনি খবর দিত ছায়" (শহর থেকে বাচ্চাটাকে মেরে এনে এই নির্জন জায়গায় কবর দিতে চাচ্ছে)।

সৈকতে অনেকদিন পর্যন্ত মানুষের লাশ ভেসে আসতো।
______________________________________________
১২ই নভেম্বর'৭০এর প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড়ের চোখ



১২ নভেম্বর ঘুর্নিঝড়ের গতিপথ



আজ থেকে ঠিক ৪১ বছর আগের এইদিনে পৃথিবীর লিপিবদ্ধ ইতিহাসের ভয়াবহতম জলোচ্ছ্বাস আমাদের উপকুলে আছড়ে পরে।

এটা আরো ছিল বিশ্বের সবচে' প্রাণ সংহারী তিনটি প্রাকৃতিক দূর্যোগের একটি।


এক রাতের মধ্যে পাঁচ লক্ষ মানুষ (অনেক উপাত্তে দশ লক্ষ) নিহত হয় । সবচে' ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভোলা। তজুমুদ্দিন থানার ৪৬.৩ শতাংশ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

এলাকার ৮৫ শতাংশ ঘর বাড়ি, উপকূলের ৬৫ শতাংশ মাছ ধরার ক্ষমতা (fishing capabilities) ধ্বংস হয়, ৭৭ হাজার জেলে যারা ডাংগায় ছিল তখন তাদের মধ্যে ৪৬ হাজার নিহত হয়, ৩৬ লক্ষ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই দূর্যোগে।


পাঁচ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুই ছিল আড়াই লক্ষের বেশী।


২ লক্ষ ৮০ হাজার গবাদিপশু মারা পড়ে এই দূর্যোগে।


অনেক রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার একটি নিয়ামক ছিল এই জলোচ্ছ্বাস । দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও দূর্যোগ উত্তর ত্রাণে সীমাহীন ব্যার্থতা সাধারন বাংগালীদের মনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাষন যন্ত্রের প্রতি পুরোপুরি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে।


ত্রিশে নভেম্বর, ১৯৭০, ভোলায় ক্ষুধার্ত শিশুরা খাবারের আশায় বসে আছে।



১৯৭১ এর জর্জ হ্যারিসন-বব ডেলেন আয়োজিত বাংলাদেশ কন্সার্টের একটা কারনও ছিল এই জলচ্ছাস।



ঘুর্নিঝড়ের পর গুটি বসন্তের টিকা
দেয়া হচ্ছে। এ প্রজন্মের কারো সাথে এই
বিভিষিকাময় মহামারীর পরিচয় নেই।



তোর কপালের সিঁদুরে টিপ মুছিয়ে দিল ঝড়


________________________________________________

ওপরের স্মৃতি চারনের দুটি অংশ আমি ২০০৯ এবং ২০১০ এ এই ব্লগে করেছিলামঃ

ঊনসত্তুর থেকে পচাঁত্তুর, পর্ব-১

১৯৭০এর ১২ই নভেম্বর

উপাত্তগূলো এবার যোগ করলাম।
সূত্রঃ
The 10 deadliest storms in history

PAKISTAN: Top 10 natural disasters since 1935

NaturalDisaster.us

10 Biggest, Deadliest, Most Destructive Hurricane's EVER!!

10 The biggest disaster with most victims.

Category:Bangladesh Cyclones

1970 Bhola cyclone
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৮
৩৫টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×