somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেফটেল্যান্ট জেনারেল জ্যাকব-ফারজ-রাফায়েল ও ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অতি স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে তরাণ্বিত করতে যে ভারতীয় জেনারেলের সবচে' বেশী কৃতিত্ব ছিল তিনি হচ্ছেন লেফটন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব। বলা যায় এই কৃতিত্ব তাঁর একক।

জেনারেল জ্যাকবই ভারতীয়দের প্রাথমিক পরিকল্পনা বদলে দিতে বাধ্য করান।

১৯৭১ সালে মেজর জেনারেল থেকে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেলে পদোন্নোতি লাভ করেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফের দায়িত্বে নিয়োজিত হ'ন।

প্রাথমিক ভাবে ভারতীয় পরিকল্পনা ছিল প্রথমে বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকা দখল করে সেখানে বাংলাদেশের একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। জ্যাকবের যুক্তি ছিল যে সেটা করলে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দখলকৃত বাংলাদেশী ভুখন্ড থেকে তাদের দখলদারিত্ব ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে। যেমনটি হয়েছিল ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকবই জোর দিয়েছিলেন যে যৌথ বাহিনীকে ঢাকাকে আগে মুক্ত করে একটি নতুন দেশের সৃষ্টি করতে হবে।

যখন ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মানেক শ জ্যাকবকে মনে করিয়ে দেন যে ঢাকায় তখনো ৩০ হাজার পাকি সৈন্য আছে এবং মার্কিন ৭ম নৈবহর যে কোন সময় বাংলাদেশে সৈন্য নামাতে পারে , লেফটেন্যান্ট জ্যাকব তখন মানেক শকে বলেন যে তিনি পাকিদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আত্মসমর্পন করাবেন।

ঢাকার উপকন্ঠে পৌঁছে তিনি জেনারেল নিয়াজীকে বলেন যে তিনি যদি আত্মসমর্পন করেন তাহ'লে তাদের সবাইকে পাকিস্তানে পাঠানো হবে আর যদি তা না করেন তাহলে বাংগালীরা তাদের প্রত্যেককে হত্যা করবে।

নিয়াজী জ্যাকবের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যান।

এবং

মাত্র ১৩ দিনের যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঢাকার পতন হয়।

সে সময়ে ঢাকায় ৩০ হাজার পাকি সৈনের বিপরিতে ভারতীয় সৈন্য ছিল ৩ হাজার আর ছিল অগনিত মুক্তিযোদ্ধা।

____________________________________________

জ্যাকব ১৯২৩ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। লে. জেনারেল জ্যাকবের পূর্ব-পুরুষেরা ১৮শতকে বাগদাদ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। জ্যাকবের পিতা ইলিয়াস ইমানুয়েল ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। শৈশবে যখন জ্যাকবের পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন, ৯ বছর বয়সে তাঁকে দার্জিলিংয়ের সন্নিকটে কাশিয়াংয়ে ভিক্টোরিয়া বোডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তখন থেকে তাঁর পরিবারের সাথে একটি দুরত্বের সৃষ্টি হয়। তিনি কেবল বন্ধের দিনগুলোতেই পরিবারের সাথে দেখা করতে যেতেন। জ্যাকব ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হলোকস্ট( দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের উপর চালানো গণহত্যা)র নির্মমতা থেকে অনুপ্রাণীত হন এবং ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী তে যোগদান করেন। তাঁর পিতা তাঁকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে আপত্তি জানান কিন্তু তাও তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।


১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী যখন অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণভয়ে ভারতে আশ্রয়ের খোঁজে আসতে থাকে। চীফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যাকব তখন উক্ত সমস্যা নিরসনের উপায় খুঁজতে থাকেন। কিন্তু অন্যদিকে পাকিস্তানীদের অত্যাচার আরো বাড়তে থাকে। এসব দেখে জ্যাকব তৎক্ষণাৎ তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, এই সমস্যা নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে পাকিস্তানীদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর প্রধান শ্যাম মানেকশ’ পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে প্রথমেই চট্টগ্রাম এবং খুলনা শহর দখল করতে নির্দেশ দেন। জাতিসংঘ এবং চীনের প্রবল চাপের মুখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু জ্যাকব সব ধরনের চাপের উর্দ্ধে গিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সচেষ্ট ছিলেন।

প্রথমেই তিনি ঢাকাকে দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এর জন্য তিনি সুচারুভাবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে অগ্রসর হন।

তাঁর পরিকল্পনা অবশেষে সফল হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানীদের ঢাকা থেকে হটাতে সফল হয়। দখলের পর তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সকল যোগাযোগ মাধ্যম ধ্বংস করেন। তিনি তিন সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা দখলের পরিকল্পনা করেন, কিন্তু তা হয়ে যায় এক রাতের ভিতরেই। তারপর ধীরে ধীরে আরো অনেক স্থান দখল করতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী।

জ্যাকব বুঝতে পারেন যে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো ফলাফল লাভ সম্ভব হবে না। তাই তিনি জেনারেল নিয়াজিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীসহ ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বলেন। তিনি নিয়াজির কাছে আত্মসমর্পণের খসরা পাঠিয়ে দেন। উক্ত দিন সকালে জ্যাকব শ্যাম মানকেশর ফোন পান এববং তিনি তাঁকে বলেন ঢাকায় গিয়ে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিতে। তারপর তিনি আত্মসমর্পণ দলিল হাতে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান এবং আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান সংগঠিত করতে তিনি জেনারেল নাগরাকে দুটি চেয়ার, একটি টেবিল জোগাড় করতে এবং ঢাকা শহর বিমানবন্দর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল ও একটি যৌথ গার্ড অব অনারের আয়োজন করতে বললেন। তারপর পাকিস্তান বাহিনী ৩০মিনিট সময়ে আত্মসমর্পণ সম্পন্ন করে।

দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন দিল্লির সেনা গবেষণা ও রেফারেল হাসপাতালে দেহাবসান ঘটে তাঁর,১৩ই জানুয়ারী, ২০১৬ এ,৯৩ বছর বয়সেবার্ধক্য জনিত জটিলতায় মৃত্যুবরন করেন।

বাংলাদেশ লেফটেল্যান্ট জেনারেল জ্যাকব-ফারজ-রাফায়েলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করবে।

জেনারেল জ্যাকব, যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন।

সুত্র সমুহঃ

১। Bharat Rakshak Images

২। Gen. Jacob

৩। "Taking Dhaka did not figure in Manekshaw’s plans: General Jacob", The Hindu online

৪। "1971 Indo-Pak War Hero, Lieutenant General JFR Jacob Dies". NDTV. Retrieved 13 January 2016.

৬। "RIP: Lt Gen JFR Jacob, hero of the 1971 war, passes away at 93". Firstpost. Firstpost. 13 January 2016. Retrieved 13 January 2016.

৭। Surrender at Dacca: Birth of a Nation - Lt.Gen. Jacob.

৮। উইকিপিডিয়া।

৯। bdnews24.com



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৪
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×