somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাইমেনশনঃ মাত্রা, দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক আসলে কি ?

২২ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই কমবেশী ডাইমেনশান, টু ডি ডাইমেনশান, ৩ডি ডাইমেনশন এর সাথে পরিচিত। আমাদের পুরো পৃথিবী জুড়েই যা কিছু দেখি তার সবই বলতে গেলে তিনটি ডাইমেনশন দ্বারা গঠিত, অর্থাৎ সব কিছুরই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা আছে। কিন্তু আমাদের পৃথিবী যদি টু ডাইমেনশন এর হতো তাহলে আমাদের আসে পাশের সব কিছু কিরকম হতো এটা হয়তো আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। কারণ আমরা ইতোমধ্যেই টম এন্ড জেরি টাইপের টু ডি কার্টুন দেখেছি, আমরা দেখেছি স্কয়ার, ত্রিভজ এর মতো জ্যামেতিক সাইন যেগুলো কিনা সবই দুইটা ডাইমেনশন দ্বারা গঠিত। তাই আমি যদি বলি ‘দুইটা ডাইমেনশন এর বস্তু ঠিক কিরকম হবে’ তা চিন্তা করার জন্য- আপনারা হয়তো হেঁসে দিবেন আমার কথাতে। কিন্তু আমি যদি বলি আমরাই হতাম দুটি ডাইমেনশন দ্বারা বস্তু এবং আমাদের চারপাশের পৃথিবীর সবকিছু হতো দুই ডাইমেনশান দ্বারা তৌরি তাহলে আমরা আমাদের চারপাশের বস্তুকে কিভাবে দেখতাম ? কিনবা যদি চিন্তা করি টম এন্ড জেরি কার্টুন এ টম জেরিকে কি অবয়বে দেখে, বা ত্রিভুজের যদি প্রান থাকতো তাহলে সেই ত্রিভুজ স্কায়ারকে কোন অবায়বে দেখতো, আর স্কায়ারই বা কোন অবায়বে ত্রিভুজকে দেখতো ?

এই দুই ডাইমেনশন এর পৃথিবী কেমন হতো তা নিয়ে ‘এডওয়ার্ড এবোট’ ১৮৮৪ সালে ‘ফ্ল্যাটল্যান্ড’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। বইতে তিনি ত্রিভজ, স্কায়ার এর চোখ দিয়ে দুইটি ডাইমেনশনের পৃথিবী দেখিয়েছেন।

যাইহোক ডাইমেনশান আসলে কি ?
ডাইমেনশন হচ্ছে ‘ডিরেকশন’। আমরা বলতে পারি লাইন। একটা ডাইমেনশন দ্বারা ঘটিত ডাইমেনশান হচ্ছে শুধুমাত্র একটা লাইন। দুই ডাইমেনশনের স্পেস হচ্ছে দুইটা পারপেন্ডিকুলাম লাইন অনেকটা একটা পৃষ্ঠার মতো (মতো বলছি কারণ পৃষ্ঠারও দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা আছে, শুধু দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ না)। আর তিনটি ডাইমেনশন দ্বারা ঘটিত বস্তু হচ্ছে ঐ দুই ডাইমেনশনের বস্তুর উপর আরেকধাপ পারপেন্ডিকুলাম লাইন, যেটার কিনা উচ্চতা রয়েছে এবং আমরা কিনা আমাদের চারপাশের যেকোন জিনিসের অবয়বে দেখতে পাই। কথা হচ্ছে তাহলে ৪র্থ ডাইমেনশন কিরকম হবে ? কিনবা পাঁচ, সাত, পনের ডাইমেনশন বস্তু ?

হূমায়ন আহমেদ এর ‘আমি এবং আমরা’ বইয়ে পড়েছিলাম আমরা নাকি আমাদের স্বপ্ন, কল্পনায় যা ই দেখি না কেন তাঁর সবই আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত বস্তুর সংমিশ্রণে তৌরি ঘটনা বা অবয়ব। আমদের কে যদি বলা হয় একটা কাগজে একটা অদ্ভুত প্রাণী আঁকার জন্য তাহলে নাকি আমরা যেই প্রাণীই আঁকি না কেনো, প্রাণীর মাথা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেরকমই হোক না কেনো সেইসব এর সাথে পৃথিবীর বা আমাদের দেখা কোনো না কোনো বস্তুর মিল থাকবে। দেখা যাবে মাথা হচ্ছে কুমিরের মতো কিন্তু মাথার শিং হচ্ছে গন্ডারের মতো, থুতনির দাঁড়ি আছে ছাগলের মতো, দাত মানুষের মতো, পাখার একপাশ বাঁদুরের মতো আরেকপাশ উঠপাখির মতো... এভাবে কোনো না কোনো কিছুর সাথে প্রত্যেকটি আলদা আলদা জিনিসের মিল থাকবে। আমরা এমন কোনো কিছুই কল্পনা বা স্বপ্ন দেখতে পারবো না যা কিনা আমাদের বা পুরো মানবজাতির অভিজ্ঞতার ইতিহাসে নেই।

মানুষ ৪র্থ ডাইমেনশন কখনোই দেখে নি। সেই হিসাবে কি তাহলে মানুষের পক্ষে আইডিয়া করা অসম্ভব যে ৪র্থ ডাইমেনশন কিরকম হবে ?
একেবারেই কিন্তু অসম্ভব না। আমরা যদি একটা ডাইমেনশন থেকে দুই ডাইমেনশানের বস্তু কিভাবে আসে আবার দুই ডাইমেনশান থেকে তৃতীয় ডাইমেনশন কিভাবে আসে তা যদি বুঝতে পারনি তাহলেই ৪র্থ ডাইমেনশন কিভাবে আসবে ৩য় ডাইমেনশন এর সাথে যুক্ত করে – তা নিয়ে অনুমান করা সম্ভব।
কিন্তু আমরা কিভাবে বা কোন অবয়বে ৪র্থ ডাইমেনশন দেখবো এটা ধরতে হলে আগে জানতা হবে দুই ডাইমেনশনের পৃথিবীতে (ধরে নেই) এক বস্তু আরেক বস্তুকে কোন অবয়বে দেখে। একটি ত্রিভুজ স্কয়ারকে কোন অবয়বে দেখে, বা জেরি টমকে কোন অবয়বে দেখে। ধরে নিন আপনি একটা ত্রিভুজ আপনার সামনে দিয়ে স্কায়ার যাচ্ছে। স্কয়ারটি কাছাকাছি আসতে আপনি কিন্তু বুঝতে পারবেন না যে এটা স্কায়ার না ত্রিভুজ। কারণ আপনি তখন শুধুমাত্র স্কয়ারটির একপাশের লাইন দেখতে পারবেন, বাকি তিনটি লাইন আপনার দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাবে। এখন স্কয়ারটি যদি আপনার সামনে এসে ঘুরতে থাকে নিজ কেন্দ্রে তাহলেও কিন্তু আপনার ধরতে পারার কথা না যদি কিনা স্কায়ার এর চারটি বাহুই একই কালারের হয়। ধরুন বাহু চারটিই কালো। তখন স্কয়ার কিন্তু নিজ কেন্দ্রে ঘুড়লেও আপনি ধরতেই পারবেন না যে স্কয়ারটি ঘুড়ছে। কিন্তু স্কয়ারটির চারটি বাহু যদি চার কালারের হয় তখন আপনি অন্তত আইডিয়া করতে পারবেন যে প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য কতটুকু এবং অনেকবার ঘুরতে থাকার পর যদি কিনা আপনি ত্রিভুজ ২য় ডাইমেনশন পৃথিবীর আইনেস্টাইন টাইপের হন তখন ধরতে পারবেন যে আপনার সামনে যে নিজ কেন্দ্রে চক্রাকারে ঘুড়ছে সে হচ্ছে একটা স্কয়ার। তাই টম এন্ড জেরির ওয়ার্ল্ডে টম জেরির চোখ মুখ কিছুই দেখে না, জেরিও টমের লেজ, গোফ কিছু দেখে না, দেখে কিছু লাইন।

এখন ধরুন এই ২য় ডাইমেনশানের পৃথিবীতে হঠাত করে তিন ডাইমেনশনের একটা বস্তু চলে আসলো। তখন দ্বিতীয় ডাইমেনশনের বাসিন্দারা কি অবয়বে দেখবে সেই তিন ডাইমেনশানের বস্তুটিকে ?

দুই ডাইমেনশনের বাসিন্দারা কিন্তু সেই তিন ডাইমেনশানের বস্তুটিকেও লাইন আকারে দেখবে, অন্যকোন অবয়বে নয়। কিন্তু যদি ধরেন সেই দুই ডাইমেনশনের বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ একজন আছে যার মেধা আইনেস্টাইন লেভেলের সেই একজন কিন্তু কিছু এক্সপেরিমেন্ট করে বের করতে পারবে তিন ডাইমেনশানের বস্তুটির অবয়ব কিরকম।

ধরুন স্কয়ার হচ্ছে দুই ডাইমেনশনের ওয়ার্ল্ডের আইনেস্টাইন লেভেল এর একজন বিজ্ঞানী। একদিন তাদের ওয়ার্ল্ডে তিন ডাইমেনশানের একটি বস্তু একটা বল এসে হাজির হল। বস্তুটির আঁকার আকৃতি কেউই ধরতে পারলো না, কারণ তাদের তিন ডাইমেনশন এর আকৃতি ধরার মতো কোনো উপায়ই নেই। তখন স্কায়ার করলো কি বলটিকে পর্যবেক্ষণ শুরু করলো। সে দেখলো বলটি একই জায়গায় রয়েছে। এখন ধরুন বলটি আস্তে আস্তে সারফেইস এর ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে আবার বের হয়ে যাচ্ছে। এই ঢুকে যাচ্ছে, বের হয়ে যাচ্ছে দৃশ্যটি কিন্তু স্কয়ার দেখবে একটা লাইন ছোট হয়ে যাচ্ছে (যখন ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে বলটি), আবার একটা লাইন বড় হয়ে যাচ্ছে (যখন বলটি সারফেইস থেকে উপরে উঠছে)। স্কয়ার করলো কি প্রতিটি ফ্রেম আলাদা আলাদা করে একটার সাথে আরেকটা ফ্রেম এর জোড়া লাগিয়ে দিলো। তখন সে চোখে না দেখলেও বুঝতে পারবে যে এটার আকৃতি একটা বল সাইজের কিন্তু সে কখনোই পুরোপুরি গেস করতে পারবে না এটার অরিজিনাল অবয়ব নিয়ে।

ঠিক তেমনি আমরা যদি একটা লাইন থেকে দুই ডাইমেনশান, দুই ডাইমেনশান থেকে তিন ডাইমেনশান এবং তিন ডাইমেনশান থেকে ৪র্থ ডাইমেনশান বানানোর চেষ্টা করি তাহলে হয়তো কিছুটা আইডিয়া অবশ্যই পাবো কিন্তু কখনোই অনুভব করতে পারবো না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×