ইদানীং একজন বৈজ্ঞানিক তার সমস্ত জ্ঞান ঢেলে দিচ্ছে অন্তরে। যতই বলছি অন্তরে নয় ওসব আমার মগজে ঢালো হে পাগল---সে ততই অদৃশ্য এক বৈদ্যুতিক তারের সংযোজ নিয়ে ব্যাস্ত। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি তার কলা কৌশল। রিভলভিং চেয়ার থেকে উপচে পড়ছে মহাসাগরের জলরাশি। কুচকাওয়াজ করে কখনো বেহালায় সুরও উঠছে। যত রকমের নৌযান ভিড় করছে জেটিতে, আমার নাকে কেবল কাঁচা মাছের আঁশটে গন্ধ উড়ে আসে। এখান থেকে আর পড়ন্ত বিকেল দেখা যায়না।
স্পটলাইটের কেন্দ্রবিন্দুতে আমার বাঁ চোখ আটক---বৈজ্ঞানিক দেখছে শুধুই চোখ, চোখের ভেতরকার বিন্দুটাতে কালো পাথরের স্থির জল। আমি দেখছি আলো, এক চোখ ধাঁধানো আলো। অন্যচোখে গ্রীষ্ম, বর্ষা, হেমন্তের একাকার হানিমুন। জাহাজ ভাসে জলে কাঁপতে, কাঁপতে। আমি টের পাই লাইফবোট আর প্যাসেঞ্জারের তাড়াহুড়ো, ক্রুদের ছুটোছুটি। আমার কেবল চাঁদনী রাতের মৃদু কম্পনে দুইদিকে হেলে পড়া বা একটু দুলতে থাকা একটা ডেকে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
লাউডস্পিকারে বাজছে ডজন ডজন বাদ্যযন্ত্রের মিশ্রিত সুর। কেউ নাচে, কেউ মদের ঝোঁকে ফুঁপিয়ে কাঁদে---আমি ভাবছি, দেখো কারিশমা এই বৈজ্ঞানিকের! দিব্যি এক চোখ বন্দী করে গবেষনায় মগ্ন। সটকে পড়বার ধান্দা ছিল অনেক আগেই। যেতে পারছিনা কোথাও। স্পটলাইট ধরে রেখেছে এক চোখ। সে নাকি রক্তচোষা বাদুড়ের হাত থেকে রক্ষা করবে আমায়! আমি তো বন্দী হয়ে আছি এক অবিন্যস্ত পাগলামীর কাছে।
জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে বন্দর। আমি চীৎকার করছি, আমাকে নিয়ে যাও---মসৃন গতিতে পানি কেটে কেটে এগিয়ে যাওয়া জাহাজ থেকে কেউ বলে ওঠে, তুমি পরে এসো, আগে তো মুক্তি কিনে নাও! আর কত পরে? কোথায় কিনতে পাওয়া যায় মুক্তি? পাগল বৈজ্ঞানিক এগিয়ে এসে মুচকি হাসে আর বলে, তোমার সরলতার পুরষ্কার নেবেনা? আমার একচোখ ধাঁধানো আলো। বৈজ্ঞানিক নিঃশব্দে আমার কমলা ঠোঁটে ঠোঁট রাখে আর আমি বর্ষার হানিমুনে দিব্যি ডুবে যেতে থাকি।