স্কুলে যখন পড়তাম তখন কোন নতুন হিন্দি সিরিয়াল শুরু হলে,আমি অনেক খুশি খুশি মনে ওই সিরিয়াল দেখতাম।কারণ সিরিয়ালের প্রথম দিকের পর্বগুলোতে নায়ক নায়িকার ভালোবাসা কিভাবে হয় তা দেখায়। নায়ক আর নায়িকার মধ্যে খুনসুটি মার্কা ঝগড়া,নায়িকার লাল ওড়না গিয়ে সর্বদাই নায়কের মুখে পরা,নায়ক হাই সোসাইটির অসভ্য পিতা মাতার এক নম্বরের হ্যাংকি প্যাংকি করা পোলা,আর নায়িকা নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন ঘরের অতুলনীয় লক্ষ্মী মেয়ে!!কিভাবে এই হ্যাংকি প্যাংকি করা পোলার সাথে অতুলনীয় লক্ষ্মী মেয়ের প্রেম হয় অতটুকুই দেখতে মজা।কেন আমার কাছে এতটুকু পার্ট ভাল লাগে,তা আর বললাম না।এরপরের পার্টগুলোতে চলে কিভাবে নায়ক আর নায়িকার ভালোবাসা বিয়ের মণ্ডপ পর্যন্ত গড়ায়।বিয়ের পরে নায়িকা জানতে পারে এটা নায়কের চতুর্থ বিয়া আর নায়ক জানতে পারে এটা নায়িকার পঞ্চম বিয়া!!শুধু তাই না,বিয়ার পরে নায়ক আরও জানতে পারে নায়িকার ২টা আগের ঘরের সন্তান আছে+১টা অবৈধ সন্তান ও আছে।আর নায়ক নিজেই কনফিউসড থাকে যে তার আগের বিয়ার ঘরের কয়টা সন্তান আছে আর হ্যাংকি প্যাংকি যাদের সাথে করছিল তাদের ঘরে তার কয়টা সন্তান আছে!!এই হল নাটকের মূল কাহিনী।
যাই হোক,আমার মূল উদ্দেশ্য নাটকের কাহিনী বোঝানো নয়।আমার উদ্দেশ্য আমরা কি গলাধগরণ করছি তা বোঝানো।এইধরণের নাটকগুলো আমাদের সময় এবং মানসিকতার উভয়রেই ক্ষতি করছে।কোন বাস্তবতা বা সুস্থ চিন্তাধারা বা কোন ভালো আইডিয়া আপনি এইধরণের নাটক থেকে পাবেন না।এই সিরিয়াল গুলোর দৈর্ঘ্য ২০-৩০মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে।আর সারাদিনে প্রায় ৮-১০ টা সিরিয়াল দেখিয়ে থাকে চ্যানেল মূলত এবং অবশ্যই রিপিট টেলিকাষ্ট ও করছে।সুতরাং এখানে প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে।কিন্তু আপনি চাইলে এই সময়টুকু কোন ভালকিছু দেখে বা শিখে ব্যবহার করতে পারেন।এই সময়টুকুতে আপনি নেটে বিভিন্ন কাজ শিখতে পারেন এবং কাজ করতে পারেন যা একই সাথে আপনাকে আর্থিক ভাবে সচল করে দিতে পারে।এই সময়টুকুতে আপনি নতুন রান্না শিখতে পারেন,যা আপনাকে আপনার স্বামী এবং বাচ্চাদের আরও কাছাকাছি করে তুলবে।আমাদের সমাজে বর্তমানে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন,স্বামীর স্ত্রীর প্রতি অনাস্থা,স্ত্রীর স্বামীর প্রতি অনাস্থা,ডিভোর্স মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে।এইসব অতিরিক্ত হিন্দি সিরিয়াল দেখারই ফসল।
বর্তমানে হিন্দি সিরিয়াল প্রীতি আমাদের দেশে একটা মারাত্মক রোগ হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।যে রোগের স্বীকার আমার নিজের পরিবারও।এখন পর্যন্ত সফল না হতে পারলে ও আমি আমার দিক থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি এই রোগটি থেকে আমার পরিবারকে মুক্ত করতে।আজ আমার শুধু একটু ছোট প্রচেষ্টা ছিল আপনাদেরকে বোঝানোর জন্য।কিন্তু এই প্রচেষ্টা শুধু সেদিনই সফল হবে যেদিন আমি আপনি সবাই আমাদের পরিবারকে “হিন্দি সিরিয়ালপ্রীতি” নামক এই রোগ থেকে খানিকটা হলে ও মুক্ত করাতে পারব।