দেশের স্বাধীনতার প্রতীক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ আবুল বাসার তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বললেন, যে দেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়না সে দেশ কখনই সুখ-শান্তির দেশ হতে পারেনা। তার অভিমত, কতিপয় অসাধু রাজনীতিবিদের নেপথ্যে ইন্ধোনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে করছে অসি'তিশীল। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা দেশের এক শ্রেণীর বাড়িওয়ালা, ব্যবসায়ী ও মজুতদাররা বেশী মুনাফার লোভে বাজারে দ্রব্যমূল্য এবং ভাড়া বৃদ্ধির হুলি খেলায় বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। জীবিকা নির্বাহের দাহনে পুড়ে কঠিন মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের হতদরিদ্র মানুষকে। পাগলা ঘোড়ার মত নিত্য প্রয়োজণীয় পণ্য বৃদ্ধির প্রতিযোগীতার যাতাকলে পড়ে জনগণ মানবেতর জীবন-যাপন করলেও এই অনিয়মের প্রতিরোধ বিন্যাসে কার্য্যকর ভূমিকা পালনকারীরা নির্বিকার। তিনি প্রণীত ভোক্তা অধিকার আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী জানান।
অপর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বললেন, মনে হয় বাজারের সবকিছুই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বাড়ছে। কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বাজারে পণের দাম প্রতিদিন রীতিমত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। একটা বাড়লে তার সঙ্গে অন্যটাও বাড়ছে, বাড়ছে ঘন্টা-মিনিটে। আর এই দাম বাড়াটা যেন প্রতিযোগীতার লড়াই। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে নগরীতে বাড়ি ভাড়া, রিক্সা ভাড়া আর বাড়িভাড়া। তারাও ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে নেই। আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে ভাড়া বৃদ্ধির এই খেলায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করার কেউ নেই। ভোক্তা কিংবা আরোহীরাও স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে দ্রব্যমুল্য ও ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে। ছূঁটাফুঁটাভাবে দু‘চারজন ক্রেতার সামান্য প্রতিবাদকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিত্যপয়োজণীয় পণ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা একে অপরকে ইস্কাপনের টেক্কা দিয়ে ট্রাম করছে। অথচ দেশের সরকার, রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও সমাজের সচেতন ব্যাক্তিরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই লুকোচুরি খেলার শিকার হচ্ছে সমাজের সাধারণ ও হত দরিদ্র মানুষ। দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জীবনের চাকা আটকে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির যাতাকলে পড়ে। এসব মুল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার ব্যাপারে নগরীর জনৈক তৌফিক নামের এক মুক্তিযোদ্ধা ক্রেতাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অত্যান্ত ভারাক্রান্ত এবং আবেক জড়িত কন্ঠে বললেন, যে লক্ষ এবং স্বপ্ন নিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তা আমরা জীবিতাবস্থায় দেখে যেতে পারবোনা। ্এজন্য তিনি দেশের অসৎ ও দুর্ণীতিপরায়ন রাজনৈতিক নেতা এবং অধিক মুনাখোর কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ীকেই দায়ী করে বলেন, দেশের এক প্রান্তে প্রচুর খাবার নষ্ট হচ্ছে আর অপর প্রান্তে অসংখ মানূষ ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছে। এই বৈষম্যের অবসান না হওয়া পর্যন্ত দেশের সাধারণ মানূষ সুখ-শান্তির স্বপ্ন দেখতে পাবেনা। নগরীতে বসবাসকারী কলেজ শিক্ষক বাবলু মন্তব্য করেছেন অন্যরকম। তিনি বলেন, যে দেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়না সে দেশের মানুষ সুখ-শান্তির প্রত্যাশা করাটা বাতুলতার শামীল। তিনি দ্রব্যমূল্যের চরক গাছের তলে পরে মানুষের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি উল্লেখ করে বলেন, আমার বেতন মাসের ১০/১৫ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া পদব্রজেই চলাচল করি। রিক্সা ভাড়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা না থাকায় রিক্সা প্যাটলারা তাদের ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করছে। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে তারা যাত্রীদের অপদস্ত করে বসে, বিশেষ করে মহিলাদের। মান-সম্মান বজায় রেখেই চলাচল করতে হয়। আর পণ্যসামগ্রীর ব্যাপারটি হয়ে পড়েছে রীতিমত যুদ্ধক্ষেত্রের পরাজিত সৈনিকের মতই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজ পরিণত হয়েছে চোর-বাটপারের আস্তানায়। দেশ পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা তো বাজারে যায়না, তারা দরিদ্র জনগোষ্ঠির সমস্যাটি দেখেও না দেখার ভান করে কিন' এর প্রতিকারে ভুমিকা রাখেনা। আর জনপ্রতিনিধিরা জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রতি পরবর্তীতে বেমালুম ভুলেই যান। তারা যা বলেন তা হচ্ছে মিথ্যাচার বনাম তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম। অর্থাৎ তারা যা বলেন তা নিজেরাই বিশ্বাস করেনা। আবার যেটা বিশ্বাষ করেন তা কখনো বলেননা। তাই কষ্টকেই জীবন-সঙ্গী করে বেঁচে রয়েছি। ঘোড়ামারার পাল্টু নামের মুক্তিযোদ্ধা কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন, আমার সংসারে ৫ জন সদস্য। জিনিষ পত্রের মল্য বৃদ্ধির কারণে বাজারে যেতে পারিনা। দিনে তিনবারের পরিবর্তে একবেলা শাক-শব্জি, আলু ভর্তা দিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছি। ছেলে-মেয়েরা মাছ-গোশতের জন্য প্রতিদিন কান্নাকাটি করে। কিন' ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় তাদেরকে সান্তনার বানী শুনিয়ে থামিয়ে রাখি। তাছাড়া রিক্সার পরিবর্তে পায়ে হেটে চলাচল করি। দেশের গুটি কয়েক লোক স্বাধীনতার ফল ভোগ করলেও সিংহভাগ মানুষ নিদারুণ কষ্টের মধ্যেই খরকুটো ধরে কোনরকমে নাক ভাসিয়ে বেঁচে আছে। আমিও ওই অবস্থাতেই জীবিকা নির্বাহ করছি। রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়ায় বসবাসকারি বাংলাদেশ সংযুক্ত মহিলা পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদিকা ইসমতারা বলেন, দেশে দ্রব্যমুল্যে সরকারি-বেসরকারি কারো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমাদের মত হতদরিদ্র মানুষের পিঠ অনেক আগেই দেয়ালে ঠেকে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থার যাতাকলে পড়ে আমাদের মত দেশের দরিদ্র মানূষগূলো নিঃস্ব হয়ে যাবে। কাজেই দেশের মানুষকে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার ঘোষিত ভোক্তা অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
ক্রেতা-ভোক্তাদের অভিযোগ, রাজশাহীর কাঁচা ও পাকা বাজারের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা অল্প মুনাফায় সন'ষ্ট হতে পারছেনা। তারা কমদামে মালামাল কিনে বেশী দামে বিক্রি করার অনিয়মটি নিয়মে পরিণত করছে। দেশের সাধারণ মানুষ বাঁচবে কি মরবে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাদের হাতে নেই। মুনাফার মাধ্যমে অল্প দিনেই বড়লোক বনে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনায় বিভোর তারা। রিক্সাভাড়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। তাদের ভাড়া চাওয়ার ভঙ্গি দেখলে মনে হয় রাজধানী ঢাকার বাতাস বইছে রাজশাহীতে। তারা তো নিজেরাই আইন প্রণেতা, নিজেদের ভাড়া নিজেরাই নির্ধারণ করে নেয়। আগেরদিনের ৫ টাকা ভাড়ার স্থলে পরদিন হাক ছাড়া হয় ১০ টাকা। যোগ হয় যাত্রীদের সাথে তাদের বৈরী আচরণ। নগরীর সাহেব বাজার থেকে বোয়ালিয়া থানার মোড় ৫টাকার স্থলে ১০টাকা দাবী করা হয়। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা ওই ভাড়া দিতে অস্বীকার করলে তাদের শুনতে হয় নানারকম বেফাস ও অশালীন কথাবার্তা। রিক্সা প্যাটলারদের সোজা কথা বাজারে জিনিষপত্রের দাম বেশী। দ্রব্যমূল্যের বাজারের এই নাজুক পরিসি'তিতে দেশের হতদরিদ্র ও নির্ধারিত আয়ের সাধারণ মানুষ রয়েছে মহাবিপাকে। তারা এ অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




