somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিঙ্গাপুরের এগিয়ে যাবার কারণ

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুর যখন মালয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন ও পৃথক দেশ হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিল তখন কেউ এর তেমন সম্ভাবনা দেখেনি। দেশটা ছিল ক্ষুদ্র এবং অনুন্নত। ছিল না কোন প্রাকৃতিক সম্পদ, ছিল না যোগাযোগ ব্যবস্থা। ছিল জাতিগত দাঙ্গা এবং কমিউনিস্ট বিদ্রোহের হুমকি।

দেশটি এ মাসে ৫০ বছর পূর্ণ করলো। বিশ্বের অন্যতম সাকসেস স্টোরি, সাকসেস মডেল এই সিঙ্গাপুর। এখন সিঙ্গাপুরে রয়েছে উৎকৃষ্ট আইনের শাসন, রয়েছে স্থিতিশীল কর পদ্ধতি, রয়েছে দুর্নীতিহীন সমাজ, রয়েছে দ্রুত উন্নতির এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে যাবার শক্তি। সিঙ্গাপুর সাকসেস মডেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মুক্ত বাজার নীতি দিয়ে পরিচালিত ব্যবস্থা অতি দক্ষতার সাথে প্রত্যেক নাগরিকের পাবলিক হাউজিং প্রকল্পের মালিকানা নিশ্চিত করে এবং জাতীয় প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ন্ত্রণ করে।

শুরু থেকে সিঙ্গাপুরের সরকার ছিল ক্ষুদ্র, দক্ষ এবং সৎ; যে গুনগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোর মাঝে তখন ছিলনা। ব্যবসা বানিজ্যকে আরো সহজ করতে সরকার নিয়মিত সমীক্ষা চালাত এবং সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থাকে ইমপ্লিমেন্ট করতো।দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ অনেক অর্থেই একটি স্বৈরাচারী সরকার চালাতেন তবে সেই ‘স্বৈরাচারী সরকার’ সবসময় ‘ব্যাবসা বান্ধব’ ও ‘জনগন বান্ধব’ ছিল। দেশটির কৌশলগত অবস্থান একে অর্থনৈতিকভাবে সফল হতে সাহায্য করেছে। দেশটি মালাক্কা স্ট্রেইটের অগ্রমুখে অবস্থিত যেখান দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৪০% সামুদ্রিক বাণিজ্য হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ বিদেশী বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিঙ্গাপুরকে এই অঞ্চলের মুল কেন্দ্র হিসেবে গন্য করতে শুরু করে এবং ব্যবসা প্রসারিত ও উন্নয়ন করতে আগ্রহী হয়।

ব্রিটিশ কলনিয়াল যুগে মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর ছিল হংকং এর অনুরূপ কিন্তু কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে বেশ ভিন্ন।আবার শিল্পনীতিতে দেশটি ছিল দক্ষিন কোরিয়া ও তাইওয়ানের মত কিন্তু হংকং থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সিঙ্গাপুর ১৯৬০ এবং ১৯৭০ সালে মুক্ত বাজার বাণিজ্যের রস নেবার জন্য শ্রম রপ্তানি ও বর্ধিত উৎপাদনে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলেছিল। সেই সময় একটি "উন্নয়নমূলক রাষ্ট্র" এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেশটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের উপর সম্পূর্নভাবে নির্ভর করতো। একই সাথে বিশেষ বিশেষ খাতে সরাসরি পুঁজি বিনিয়োগ ও ভর্তুকির মাধ্যমে সুরক্ষা প্রদান এবং অবকাঠামো ও শিক্ষায় সর্বসাধারনের বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার উপর সরকার নজর দিয়েছিলো। সরকার ছিল সৎ ও দক্ষ তাই খুব অল্প সময়ে দেশটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছে। সেই সময় সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য ‘এশীয় টাইগার’ রা বেশ বলীষ্ঠভাবে ক্রমবর্ধমান যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য পশ্চিমা ও জাপানের মুক্ত বাজারে রপ্তানি করতে শুরু করে। একই সাথে দেশগুলো দ্রুত তাদের উৎপাদন নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিকীকরন করতে থাকে ও বিশ্ব বাণ্যিজিক স্বাধীনতার ফল তুলে নেয়া শুরু করে।

১৯৮০ এবং ১৯৯০ সালে সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতামুলক উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হত রাষ্ট্রীয় শিল্পনীতির মাধ্যমে যা শ্রম ও প্রযুক্তি উন্নতির ক্ষেত্রে বিকল্প পুঁজি ও বিদেশী শ্রম শক্তি আমদানি উৎসাহিত করতো।

সিঙ্গাপুর ১৯৯০ সালের শেষ দিকে এশিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কটকে জয় করে,পরে ২০০৩ সালে SARS এর প্রাদুর্ভাব এবং ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাকেও পরাজিত করে। দেশটি ইদানিং শ্রমনীতি ও শিল্পনীতি পরিবর্তন করেছে আরও দৃঢ় ভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

মুল লেখাঃ সিঙ্গাপুরের এগিয়ে যাবার কারণ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×