somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহাবুদ্দিন আহমেদ - একজন বিদ্রোহী শিল্পী

২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

...১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের সময়কার কথা। এক আর্টকলেজ পড়ুয়া ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে গেছে তার ভাইয়ের সাথে। ছেলের নাম-ডাক আছে কিছু, স্কুলে পড়ার সময় প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ছবি এঁকে। দোতলায় সিঁড়িতে বসা নেতাগোছের এক ভদ্রলোক। মুখভর্তি তার দাড়ি। ভদ্রলোক তাকে বলেন - আমরা আন্দোলনের নতুন ধারায় যাচ্ছি, এরা বুঝতে পারছে না স্লোগানের মর্ম, তুমি তো শিল্পী, তুমি বুঝবে - ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’! আর্টকলেজ পড়ুয়া ছেলের চেতনার ভিতকে প্রবল ভাবে নাড়িয়ে দেয় এ স্লোগান, সে অনুরোধ করে - আরেকটা বলেন। এবার ভদ্রলোক অন্তরের সকল আবেগ দিয়ে বলেন - 'জয় বাংলা'। এই স্লোগান শুনে আর্টকলেজ পড়ুয়া ছেলের ভেতর একটা অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠে। সে মুহূর্তেই সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনের সাথে। বলে - আমাকে কী করতে হবে বলুন। সেই শুরু হলো তার স্লোগানের সঙ্গে মিলিয়ে ছবি রাজনৈতিক আঁকা। এই ছেলে পরে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টায়, তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের সামনে পাকিস্তানের পতাকা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়।

মুখভর্তি দাড়িওয়ালা লোকটি সিরাজুল আলম খান আর আর্টকলেজ পড়ুয়া ছেলেটি শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ আপাদমস্তক ছিলেন একজন রণযোদ্ধা। তার কাছে সামরিক যুদ্ধকৌশলই আসল। তবে শিল্পের কদর করতেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সেই নয় মাসে তার কম্যান্ডে যুদ্ধ করেছেন গায়ক আজম খান ও চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। একবার খালেদ মোশাররফের নির্দেশে জঙ্গল কেটে সাফ করে করা হয়েছিল শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে গান গেয়েছিলেন আজম খান।

যে অল্প কজন চিত্রশিল্পীর সুযোগ হয়েছে নিজ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেবার, শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাদের একজন। এজন্য তিনি একজন যোদ্ধা, একজন বিদ্রোহী, একজন বিদ্রোহী শিল্পী! দেশ স্বাধীন হলে শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রায় প্রতি ভোরে জলরঙ, কাগজ আর বোর্ড নিয়ে পৌঁছে যেতেন চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। একটা ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর বের করে নিয়েছিলেন নিজস্ব ভুবন। সূর্যের প্রকোপ বাড়ার আগেই তিনি বাঙ্গালীজাতির উত্থানের দৃশ্যরূপ এঁকে ফেলতেন। সেই থেকে তার ক্যানভাসে দেশপ্রেমের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া শুরু। রং ও তুলির সুনিপুন টানে মানুষকে প্রধান করে সেই আলো এখনো সমানতালে বেরুচ্ছে।

শাহাবুদ্দিন আহমেদ হাসলে তার গালে যে টোল পরে তা হয়েছে ছোটবেলায় ছবি আঁকতেন দেখে বাবার মার খেয়ে।

তেজগাঁও পলিটেকনিকাল হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। পড়াশুনায় মন ছিল না একদম। অপেক্ষা করতেন শুক্রবার আর রোববারের কারন এই দুইদিন আর্ট কলেজে যেতেন, বড়দের পেইন্টিং করা দেখতেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর ভর্তি হন আর্ট কলেজে।

১৯৭৪ সালে ফ্রান্স সরকারের দেয়া বৃত্তি পান। ইচ্ছে ছিল না যাবার। বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে নিয়ে বললেন - যাবি না কেন? যা, ঐখানে যেয়ে পিকাসোরে মাইর দিবি, পারবি না? এই শুনে শিহরণ খেলে গেল শাহাবুদ্দিন আহমেদের রক্তে। গেলেন। প্যারিসে অধ্যয়নরত শিল্পীদের আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী হয় ১৯৭৫ সালে। তিনি প্রথম হন। ১৯৭৯ সালে ৩১টি দেশের শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী আয়োজিত হয় প্যারিসে। তিনি প্রথম হন। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে ১৯৮০ সালে। তিনি আবার প্রথম হন। ১৯৯২ সালে অলিম্পিয়াড অব আর্টস পদকে ভূষিত হন যার মানে পেইন্টার্স অব কনটেম্পোরারী আর্টসের পঞ্চাশজনের একজন তিনি। ফরাসি সরকার তাকে সেদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব Knight in the order of Arts and literature সম্মানে ভূষিত করে ২০১৪ সালে

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×