বরিশালের মিষ্টির সুনাম আছে তাই বরিশাল শহরের পুরনো স্থাপনা খুঁজবার এক ফাঁকে উপস্থিত হয়েছিলাম বাজার রোডে অবস্থিত বিখ্যাত হক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। যেমন সুনাম শুনেছি তেমনই সুস্বাদু তাদের নাস্তা ও মিষ্টি।
কিন্তু সুস্বাদু নাস্তা হজম করার সাথে সাথে আমাকে হজম করতে হয়েছে আশ্চর্যজনক একটি নালিশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নালিশ।
দোকানটা ছোট, একপাশে মিষ্টি বিক্রি হয় আর অন্য পাশে নাস্তার ব্যবস্থা। চারটি মাত্র টেবিল। আমার সামনে বসে এক ষাটোর্ধ্ব ভদ্রলোক নাস্তা খাচ্ছিলেন। অভিজাত চেহারা, পরিপাটি কাপড়চোপড়।
আমাকে বললেন - আপনি কী ঢাকা থেকে এসেছেন?
আমি বললাম, জী, ঘুরতে এসেছি।
তিনি বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ষড়যন্ত্র করে তার ভাগ্নি প্রমীলাকে বিদ্রোহী কবি নজরুলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন এবং তারপর নজরুলকে স্লো পয়জনিং করে পাগল বানিয়ে নিজেই নোবেল পুরস্কার বাগিয়ে নেন এই ব্যাপারে আপনার কি মতামত?
আমি এটা শুনে হতভম্ব। হয়তো মুখটা হা হয়ে গিয়েছিল; উনি বললেন, মুখের হা বন্ধ করেন। বরিশালে আসছেন ভালো কথা, হকের মিষ্টি খেতে আসছেন ভালো কথা কিন্তু নজরুলের বিরুদ্ধে রবিবাবুর যে ষড়যন্ত্র সেই ব্যাপারে আপনি কিছু লিখবেন এটা আমার অনুরোধ।
আমি প্রশ্ন করলাম, আমি লেখালিখি করি আপনি কিভাবে বুঝলেন?
গলা গম্ভীর করে বললেন, আমি মেরাজ ভুঁইয়া! আমি বুঝতে পারি।
আমার বিহব্বল অবস্থা কাটেনা। মুখের হা বন্ধ হয় কিন্তু চোখগুলো বড় বড় হয়ে থাকে। আমি শুনেছি রবীন্দ্রনাথ নাকি লালন ফকিরের ডায়েরি চুরি করে তা গীতবিতানে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু নজরুলকে স্লো পয়জনিং করার ব্যাপারটা কোনদিন শুনিনি। কোনদিন শুনতে হবে তার পূর্বপ্রস্তুতি ও আমার ছিল না।
এরমধ্যে ভদ্রলোকের নাস্তা শেষ। ওয়েটার এসে তাড়া দিলো, তিনি উঠে গেলেন।
যাবার সময় বললেন আপনি এ ব্যাপারে ভাববেন, অনুসন্ধান করবেন, কিছু লিখবেন এটা আমার প্রত্যাশা। আজ আসি, ধন্যবাদ।