somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব ডায়েরি-৪৩ (অভিশপ্ত সামূদ জাতির দেশে-৩)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম পর্ব
২য় পর্ব

আল উলা

রাত তিনটায় নীচে নামলাম। আমদের ড্রাইভার সাহেব ঠিক সময়েই উপস্থিত হয়েছেন। আমরা মোট ৮ জন। আমি, মিলন ও সাঈদ ওয়াইফ সহ। আর সাথে আছে শাহরিয়ার ভাই ও মামুন। তারা দুজনেই মজার মানুষ, হাসি তামাশায় মাতিয়ে রাখে সবসময়। মামুন এবার নতুন জয়েন করেছে, সে হাবিব স্যারের সাথে আগের ট্যুরেও এসেছিল। তাকে আমাদের সাথে নেয়া হয়েছে যাতে সে স্বাক্ষী হতে পারে- হাবিব স্যারের আগের ট্যুর আসলে তেমনটা ভালো ছিল না। সাঈদ বিভিন্ন কারনে আগের ট্যুরটাকে ব্যার্থই বলতে চায়।

আমরা মদীনার সীমার বাহিরে ছুটে চলছি। রাতে গাড়ী নেই বললেই চলে। শীত শীত করছে। আমরা চলছি "আল উলা'র" পথে। "আল উলা" মদীনা হতে ৩৭০ কিমি. উত্তরে অবস্থিত। নানা করনে "আল উলা" বিখ্যাত হয়ে আছে। "আল উলা" হতে ২৫ কিমি. দূরেই বিখ্যাত "মাদায়েন সালেহ", যেখানে সামূদ জাতি বসবাস করত। হযরত সালেহ (আঃ) এ জাতিকে আল্লাহ'র পথে ডেকেছিলেন। সামূদ জাতি দাম্ভিকতার সাথে তা প্রত্যাক্ষান করে। এক সময় আল্লাহর গযব নামে তাদের উপর। সেই ধ্বংস নগরী এখনও আছে, কিছুটা নিভৃতেই পড়ে আছে "আল উলা" শহরের পাশে।

বর্তমানের আল উলা শহর

আল উলা প্রাচীনকালে "দিদান" (Dedan) নামে পরিচিত ছিল। এটা ছিল প্রাচীন "লিহাইন" জাতির রাজধানী। আল উলা অতীতকাল থেকেই উর্বর জমি ও পানি প্রবাহের জন্য প্রসিদ্ধ। আর এ কারনেই এখানে অনেক কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। এটা ছিল ব্যবসায়, বাণিজ্য ও সুগন্ধি দ্রব্যাদির অন্যতম রুট।এ শহরের উপর দিয়ে যাওয়া সকল বাণিজ্যিক কনভয়ের কাছ থেকে লিহাইনরা রাজস্ব আদায় করত। কনভয়গুলো মূলত মিশর ও ইরাকের দিকে যেত। পাশাপাশি তারা খাবার ও পানি বিক্রি করত। অবস্থানগত করনে শহরটির একচোটিয়া আধিপত্য ছিল। শহরটি পাহাড় বেস্টিত এবং পাহাড়গুলো ভঙ্গুর প্রকৃতির। খ্রীষ্টপূর্ব ১০০ সাল পর্যন্ত লিহাইনরা রাজত্ব করে।

পরবর্তীতে নাবাতিয়ানরা (The Nabataeans) এ রাজ্য শাসন করতে থাকে। বর্তমান জর্ডানের পেট্রা ছিল নাবাতিয়ানদের রাজধানী। তারা সে সময় মাদায়েন সালেহ'কে ২য় রাজধানীর মর্যাদা দেয়। মাদায়েন সালেহ সে সময় "হিজর" নামে পরিচিত ছিল। রোমানরা সব সময়ই বাণিজ্যিক পথটি দখল করতে চাচ্ছিল। ১০৬ খ্রীষ্টাব্দে নাবাতিয়ান সাম্রাজ্য রোমানদের অধীনে আসে। রোমানরা বণিজ্যের জন্য রেড সি নৌপথ ব্যবহার করতে থাকে। নৌপথ ছিল নিরাপদ ও দ্রুত। ধীরে ধীরে প্রাচীন আল উলা-মাদায়েন সালেহ বাণিজ্যিক পথটি তার গুরুত্ব হারাতে থাকে। একসময় তা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়।

১৯ জানুয়ারি।

... সকাল ৮ টার মধ্যে আমরা মাদায়েন সালেহ পৌছতে চাই। পথে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম, খাবার কিনলাম। ড্রাইভার যে গতিতে গাড়ী চালাচ্ছে, মনে হচ্ছে ৭ টার মাঝেই পৌছে যাব। সকালের সূর্য উঠলো। মরুর মাঝের রাস্তা দিয়ে একাকী ছুটে চলছি অবিরাম। পাশের পাহাড়গুলো তার রং বদলাচ্ছে।

আল উলা শহরে পৌছার সাথে সাথেই চারপাশের দৃশ্যপট যেন পাল্টে গেল। পাহাড়গুলো লালচে। পাহাড়গুলোকে খুব সহজেই বিভিন্ন আকৃতি সাথে কল্পনা করা যায়। কখনো বা মানুষের, কখনো স্ফিংস, কখনো বাচ্চা হাতে মা – অদ্ভুত। আমরা প্রায়শঃ আকাশের মেঘে এ ধরনের আকৃতি দেখে থাকি। কিন্তু সবই বাস্তব, পাহাড়গুলো ভঙ্গুর প্রকৃতির। সময়ক্রমে ক্ষয়ে ক্ষয়ে এসব আকৃতি পেয়েছে।

বিভিন্ন আকৃতির পাহাড়

মামুন স্মরণ করিয়ে দিল সামূদ জাতির উপর নেমে আসা অভিশাপের কথা। পুরো জাতি ব্জ্রপাত আর অগ্নিবৃষ্টিতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর তার কারনেই এ শহরের পাহাড় ও মাটি এখনও আগুন রঙা লালচে। ...



ব্জ্রপাত আর অগ্নিবৃষ্টিতে স্নাত লালচে পাহাড়... সৌদির অন্যন্য পাহাড় থেকে একেবারে আলাদা।

আমরা স্মরণ করলাম-

"আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি তাদেরকে পথ নির্দেশ করেছিলাম; কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধত্ব (ভ্রান্ত পথ) অবলম্ববন করেছিল। অতঃপর তাদের কৃতকর্মের পরিণাম স্বরূপ লাঞ্ছনাদায়ক বজ্র আঘাত হানলো।" (সুরা হা-মীম-আসসাজদাহ -১৭)

(চলবে)






সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×